জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু মিয়ার বেড়ে ওঠেন তীব্র অভাব-অনটনের সংসারে। বাবা ছিলেন মসজিদের ঈমাম বাবার বসতভিটার জায়গা ছাড়া আর কোনো সহায় সম্পদ ছিলোনা। সংসারের হাল ধরতে তিনি জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্ট এলাকায় চাল বিক্রি করে সংসার চালাতেন।
চাল ব্যবসার পাশাপাশি সিদ্দিক মিয়ার হাত ধরে যুক্ত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। সেই সুবাদে ২০০০ সালে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ। এর পর ধীরে ধীরে ২০১৩ সালে পেয়ে যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারির দায়িত্ব এই পদটি পাওয়ার পর যেন পেয়ে যান আলাদীনের চেরাগ।
এরপর ক্ষমতার দাপটে দুর্নীতি, টেন্ডারবাজির মাধ্যমে অল্প সময়ে রিজু মিয়া হয়ে যান কয়েক কোটি টাকার মালিক। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে দেশ ও দেশের বাইরে কিনেছেন ফ্ল্যাট, বাড়িসহ অঢেল সম্পদ।শূন্য থেকে হয়ে যান কোটিপতি।
রেজাউল করিম রিজু মিয়া টানা দুই বারের জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারির হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের সেক্রেটারি হওয়ার সুবাদে উপজেলার সরকারি সব দপ্তর থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। দলের পদ পদবি পাওয়ার পর থেকে হু হু করে বাড়তে থাকে তার সম্পদের পরিমাণ।
বিভিন্ন মানুষের নামে পিআইসি কমিটি এনে সেখানে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।
অভিযোগ রয়েছে, নলজুর নদী খননের নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে প্রভাব ও কৌশল খাটিয়ে নাম মাত্র খনন করে ঠিকাদারদের কাছ থেকে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেন রিজু মিয়া। পরে এই টিকাদার কাজ রেখে পালিয়ে যান ।
মৎস্য সাপ্তাহে হাওরে ২০ লাখ টাকার ফোনা মাছ হাওরে ছাড়ার কথা থাকলেও রিজুর সিন্ডিকেটে আওয়ামী লীগের প্রভাব কাটিয়ে জোর পূর্বক টেন্ডারে এনে ১ লাখ টাকার মাছ ফেলে বাকি ১৯ লাখ টাকা চক্রটি হাতিয়ে নেন। রিজু মিয়া আত্মীয় স্বজনের নামে হাওরে বেরিবাঁধের প্রজেক্ট এনে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেন।
আওয়ামী লীগের প্রভাব কাটিয়ে জগন্নাথপুর বাজারে কোটি টাকার সরকারি জায়গা লিজ নিয়েছেন তিনি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি এম এ মান্নান এমপির অনুসারী রিজু মিয়া । তাই তার প্রভাব অনেক ছিল।
এই প্রভাবে জগন্নাথপুর এলজিইডি, পিআইও, মৎস্য অফিসে টেন্ডারবাজি করে হাতিয়ে নিয়েছেন অর্ধশত কোটি টাকা।
এছাড়া আওয়ামী লীগের বড় নেতাদের ম্যানেজ করার কথা বলে ইউনিয়নের সকল সভাপতি সেক্রেটারি পদ পদবী দিতেন ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা করে।
গত সংসদ নির্বাচনের আগে উপজেলার অনেক জনপ্রতিনিধি ও বড় ব্যবসায়ী এবং উপজেলা পর্যায়ে দলীয় দায়িত্বশীল নেতাদের কাছ থেকে কোটি টাকার চাঁদা তুলে নিজের পকেটে ভরেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, লন্ডনে ফ্ল্যাট ও বাড়ি কিনেছেন তিনি।
রিজু মিয়ার দৃশ্যমান যত সম্পদ : সরেজমিন দেখা যায়, নিজ এলাকা ঘোষগাও দৃষ্টিনন্দন বিলাসবহুল কোটি টাকার বাড়ি।
সিলেট শহরে কিনেছেন ৫ কোটি টাকা মূল্যের দুটি বাসা । হবিবনগর এলাকায় রয়েছে নামে-বেনামে কোটি টাকার জমি। বলাই নগর এলাকায় রয়েছে কোটি টাকা রাইছ মেইল, মেইলের পাশে কোটি টাকার মূল্যের সরকারি জমি দখল করে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এবং স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রিজু মিয়ার এতো টাকা ও সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে আওয়ামী লীগের পদপদবি তাকে সাহায্য করেছে। রাতারাতি রিজু মিয়ার দুই ছেলেকে যুক্তরাজ্য পাঠিয়েছেন, সেখানে গড়েছেন বিলাসবহুল বাড়ি গাড়ি।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু মিয়ার সঙ্গে একাধিক বার যোগাযোগ করলে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
আজকালের খবর/বিএস