বগুড়ায় পরিবারের আপত্তির মুখে এক বছর আগে মারা যাওয়া যুবদল নেতা ফোকান আলীর লাশ করব থেকে উত্তোলন না করেই ফিরে এসেছেন নির্বাহী হাকিম ও পুলিশ।
শাজাহানপুর উপজেলার ঘাসিড়া গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে ফোরকান আলী খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের নেতা ছিলেন।
আব্দুল কুদ্দুসের দাবি, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সকালে বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কে শাজাহানপুর উপজেলার
সাজাপুর এলাকায় বিএনপির মিছিলে গিয়ে তার ছেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। পরে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ওইদিন ময়নাতদন্ত ছাড়াই ফোরকানের লাশ দাফন করা হয়।
এদিকে, ফোরকানের মৃত্যুর ঘটনায় গত ৩০ অক্টোবর একই ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুছ আলী হলুদ বাদী হয়ে আদালতে হত্যা মামলা করেন।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান করে আওয়ামী লীগের ১৬০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত বছরের ৩ ডিসেম্বর সকাল ৭টার দিকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সাজাপুর এলাকায় মহাসড়কে উঠামাত্রই শেখ হাসিনার নির্দেশে অন্য আসামিরা হামলা চালান।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একের পর এক হাত বোমার বিস্ফোরণ ও গুলির মুখে বিএনপির নেতাকর্মীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় যুবদলের ফোরকান রক্তাক্ত জখম হন।
পরে তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মামলায় আরও বলা হয়, সেসময় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে নিহতের পরিবার মামলা করার সাহস পায়নি।
এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে এই মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছেন তারা।
মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে বৃহস্পতিবার একজন নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ উত্তোলন করতে যায় পুলিশ।
তখন ফোরকান আলীর পরিবার থেকে আপত্তি জানানো হয়।
ফোরকানের বাবা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, “আমার ছেলে বিএনপির মিছিলে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তাকে কেউ হত্যা করেনি। তার শরীরে কোনো জখম বা আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ছেলের স্বাভাবিক মৃত্যু হওয়ায় আমরা সেসময় মামলা করিনি।
“কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর আমাদের অনুমতি না নিয়ে ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে ইউনুছ আলী হলুদ আদালতে মামলা করেছেন।”
তিনি আরো বলেন, “আমি এফিডেভিটের মাধ্যমে আমার ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটি আদালতকে জানিয়েছি। তবে এখনও শুনানি হয়নি। এছাড়াও মামলার তদন্ত কার্যক্রম স্থগিত রাখা এবং আসামিদের হয়রানি না করার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি।”
মামলার বাদী যুবদল নেতা ইউনুছ আলী হলুদ ওই মামলা বিষয়ে বলেছিলেন, “এটা একটা রাজনৈতিক মামলা। বগুড়ার এক শীর্ষ বিএনপির নেতার নির্দেশে করি।”
শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “ইতোমধ্যে এই মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য একজন নির্বাহী হাকিমের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করতে যাওয়া হয়। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে আপত্তির কারণে লাশ উঠানো যায়নি।”
বগুড়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম সাদমান আকিক বলেন, “আদালতের নির্দেশ থাকলেও লাশ উত্তোলনের ক্ষেত্রে নিহতের পরিবারের সহযোগিতা লাগে।”
“ফোরকানের বাবা বলেছেন, তার ছেলে নিহতের ঘটনায় করা যুবদল নেতার মামলার বিষয় তিনি আদালতকে জানিয়েছেন। কিন্তু আদালতের কোনো নির্দেশনা তার কাছে নেই।
“ফোরকানের বাবা সময় নিয়েছেন, আদালতে যোগাযোগ করে লাশ না উঠানোর জন্য নির্দেশনা নিয়ে আসবেন। এ কারণে লাশ উত্তোলন না করে তাকে সময় দেওয়া হয়েছে।”
আজকালের খবর/ এমকে