
ক্যামেরার পেছনে থেকে ফ্রেমে ফ্রেমে নান্দনিকতার বুননে সামনের মানুষদেরকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন একজন নির্মাতা। অজানা,অচেনা ও অপরিচিতদেরকে নিজের মুন্সীয়ানায় নিয়ে আসেন দর্শকদের সামনে। অন্যের প্রচার ও প্রসারে শৈল্পিক ভূমিকা ও ইতিবাচক পদক্ষেপ রাখলেও নেপথ্যের কারিগর সব সময় থেকে যান লোক চক্ষুর আড়ালেই। তেমনই একজন নির্মাতা রানা মাসুদ। বিজ্ঞাপনচিত্রের জগতে অপ্রতিরোধ্য ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সময়কে ধারণ করে দর্শকদের রুচি বুঝতে সক্ষম হয়েছেন বলে আড়ালের এই মানুষটিকে নিয়ে এখন সর্বত্র আলোচনা। সংস্কৃতির সাথে শিল্পের মিশেল ঘটাতে পেরেছেন বলে শোবিজ অঙ্গনের প্রশংসায় ভাসছেন বিজ্ঞাপন নির্মাতা রানা মাসুদ। প্রচার বিমুখ নেপথ্যের মানুষটিকে ঠিকই খুঁজে নেন দেশের প্রথম শ্রেণীর কোম্পানিগুলো। কাজের ক্ষেত্রে কোয়ালিটিকে প্রাধান্য দেন বলে নিজের পরিচালনার ঝুলিতে রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক বিজ্ঞাপনচিত্র। যার বেশিরভাগই শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞাপনচিত্রগুলো হলো- পারটেক্স, প্রাণ আর এফ এল ওয়াটার পাম্প, রুচি চানাচুর, রুচি ডাল, রুচি আচার, গোয়ালিনী কন্ডেন্সড মিল্ক, আরসি কোলা, আইসিওয়াই ড্রিংক্স, জেলটা মোবাইল, মান্ত্রা ফ্যাশন, বেবি জিংক, ইনফিনিটি মেগামল, জমজম টাওয়ার, ইসলামি ব্যাংক, ড্যনিশ কন্ডেন্সড মিল্ক, ড্যানিশ গুঁড়া মসলা, জিরা পানি, আড়ং মিল্ক, হাই স্পিড হেয়ার কালার, এস কে বিএস এস পাইপ অ্যান্ড কুকওয়্যার, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ফ্রেশ টি, বেক্সি ফেব্রিকস, ওরিয়ন ফুটওয়্যার ইত্যাদি। জননন্দিত তারকা মডেল নোবেল থেকে শুরু করে প্রিয়দর্শিনী চিত্রনায়িকা মৌসুমী, পূর্ণিমা, বিদ্যা সিনহা মীম, অনন্ত জলিল, বর্ষা, কচি খন্দকার, ফারিয়া শেহরিন, অহনা, নওশিন, ইমন, মেহজাবিন, তৌকির আহমেদসহ দেশসেরা প্রায় সকল তারকাশিল্পীরাই কাজ করেছেন তার নির্দেশনায়। টিভিসি ছাড়াও নির্মাণ করেছেন ইউনিসেফ, ইউএনডিপি, বিসিসিপি, ব্র্যাক, প্ল্যান বাংলাদেশ, এস এম সি ব্লু স্টার বিভিন্ন ধরনের সচেতনামূলক তথ্যচিত্র বা পিএসএ (পাবলিক সার্ভিস এনাউন্সমেন্ট)। এছাড়া তার পরিচালনায় নির্মিত হয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে ২৬ পর্বের টক-শো ‘জয়ীতা জয়যাত্রা’। বিজ্ঞাপনচিত্র, সচেতনতামূলক তথ্যচিত্র নির্মাণ করে সময়ের চেয়ে একধাপ এগিয়ে থাকলেও রানা মাসুদ জানান তার প্রধান লক্ষ্য চলচ্চিত্র। আর সে লক্ষ্যে নির্মাণ করেছেন শর্টফিল্ম ‘নিবাস- দ্য রেসিডেন্স’, ‘আতর’।
আর মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মাণ করেছেন ডকুমেন্টারি ফিল্ম ‘বিলোনিয়ার যুদ্ধ - দ্য বেটেলস অব বিলোনিয়া’। এই ডকুমেন্টারি ফিল্মটি সারাদেশে প্রদর্শিত হওয়ার পাশাপাশি আমেরিকাতেও প্রদর্শিত হয়েছে বলে জানালেন তিনি। নান্দনিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ইতোমধ্যেই চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের নজরে এসেছেন গুনী এই পরিচালক। ‘আতর’ শর্টফিল্মটির জন্য পিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৩ এর বেস্ট ফিল্ম ডিরেক্টর হিসেবে সম্মাননা লাভ করেন এবং ২০২২ সালে মরক্কোর ‘এট দ্য ওয়ালিড ত্রিমা ফেস্টিভ্যাল’ থেকেও ‘আতর’ নির্মাণে বেস্ট স্ক্রিন প্লে ও বেস্ট ডিরেক্টরের পুরস্কার অর্জন করেন রানা মাসুদ । একই বছর ২০২২ সালে কানাডার টরেন্টোতে অনুষ্ঠিত আই এফ এফ এস ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২২ এ নির্বাচিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবেও ‘আতর’ প্রদর্শিত হয়। এছাড়া পিস ফিল্ম ফাউন্ডেশন আয়োজিত তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নিয়ে আয়োজিত ফিল্ম ফেস্টিভেলের জুরি বোর্ডের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এই পরিচালক।
কথা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শর্টফিল্ম ফোরাম, বাংলাদেশ থিয়েটার আর্টিস্ট এসোসিয়েশনের সদস্য ও বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের শিক্ষক রানা মাসুদ জানান, চলচ্চিত্র নির্মাণই এখন তার প্রধান লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যে নিজেকে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের যাবতীয় খুঁটিনাটি হাতে কলমে শিখেছেন তার নির্মাণ গুরু তানভীর মোকাম্মেলের কাছ থেকেই। এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক রানা মাসুদ বলেন, শৈশব থেকেই সিনেমার পোকা আমার মাথায় কিলবিল করছে। আজন্ম লালিত সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য ধীরে ধীরে একটু একটু করে নিজেকে তৈরি করেছি। সিনেমার ক্যানভাসে নিজের স্বপ্ন বোনার প্রত্যয়ে বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক তানভীর মোকাম্মেলের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন ‘লাল সালু’, ‘লালন’, ‘জীবনঢুলি’, ‘রূপসা নদীর বাঁকে’সহ অসংখ্য ছবিতে। মোট কথা নিজের প্রস্তুতির কোনো কমতি রাখেননি রানা মাসুদ। আঁটঘাঁট বেঁধে নামতে চান বলে নিজেকে ঝালাই করেছেন দুই দশক ধরে। কোয়ালিটির অভাবে হারিয়ে না গিয়ে কোয়ালিটি দিয়ে নিজেকে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত করতে চান বলেও জানান হালের ক্রেজ এই তরুণ নির্মাতা।
আজকালের খবর/আতে