
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ফোকলোর স্টাডিজ ও চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্থায়ী শ্রেণিকক্ষ বরাদ্দের দাবিতে মানববন্ধন, আন্দোলন, বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এক পর্যায়ে অনশনে নেমে যান চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে চলছে দাবি আদায়ের দৌঁড় প্রতিযোগিতা। প্রশাসন শিক্ষকের ওপর, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপর, এক বিভাগ অন্য বিভাগের ওপর সমাধানের পথ দেখিয়ে দিলেও মিলছে না স্থায়ী সমাধান। এ যেন উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে।
সোমবার (৪ নভেম্বর) স্থায়ী সমাধানের দাবিতে এবং বরাদ্দকৃত রুমের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অনশন কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এদিকে গত রবিবার ৩ নভেম্বর তিন বিভাগে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এর আগে ২৩ অক্টোবর বরাদ্দকৃত রুম ফিরে পেতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছিলো চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের চতুর্থ তলায় চারুকলা বিভাগকে কিছু রুম বরাদ্দ করেন তৎকালীন প্রশাসন। গত ৮ অক্টোবর কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এমতাজ হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে রবীন্দ্র-নজরুল ভবনে চারুকলা বিভাগকে ২৫টি রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়। চতুর্থ তলায় বরাদ্দকৃত রুমগুলো ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ এবং ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগ দখলে নেয়। যদিও তাদের জন্য ৫ম তলায় কিছু রুম বরাদ্দ রয়েছে বলে জানা যায়।
ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, আগে ২টা ক্লাসরুমে অনুষদের নিচতলায় ছিলাম। ক্লাস পরীক্ষা নেওয়া কষ্টসাধ্য বলে আমরা রবীন্দ্র নজরুল ভবনের তিনতলায় গিয়েছিলাম, তারপর ৪তলায় গেলাম। রুম ধরলাম, সব অফিশিয়াল সরঞ্জাম সেটআপ করা আছে। আমাদের স্টুডেন্ট সংখ্যা বেশি তাই ৪তলায় থাকতে চেয়েছি।
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা পাঁচ বছর ধরে ছয়টা ব্যাচ একটি কক্ষে ক্লাস করে আসছি। গত ছয় মাস ধরে সাবেক উপাচার্যের মৌখিক আশ্বাসে আমরা চতুর্থ তলার কক্ষগুলোতে ক্লাস করে আসছি।অক্টোবরের শুরুর দিকে প্রশাসন থেকে চারুকলা বিভাগের চতুর্থ তলায় ২৩টি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্ত আমাদের জন্য যে কক্ষ বরাদ্দ দিয়েছে তা খুবই অপর্যাপ্ত। আমরা অন্যায়ভাবে এই কক্ষগুলো দখল করে আসছি বলে প্রচারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পুরানো বিভাগ হয়ে আমাদের ক্লাসরুম বেশি দেওয়ার কথা।
এদিকে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০১৯ সাল থেকে আমাদের বিভাগের যাত্রা শুরু, এখন ৪ টা ব্যাচ চলমান। আরও একটা নবীন ব্যাচ আসতেছে। অথচ আমাদের নিজস্ব কোনো ক্লাস রুম নাই। বিভাগের নামে রবীন্দ্র-নজরুল ভবনে রুম বরাদ্দ হয়েছে বলে নোটিশ দিয়েছে। সেই বরাদ্দকৃত রুম বাস্তবায়ন চাচ্ছি। আর আশ্বাস না। বর্তমান প্রশাসন লিখিত বিবৃতি দিয়ে প্রশাসন বুঝিয়ে দিলেই সমাধান। বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো আলোচনাই আমরা মেনে নিব না।
এ বিষয়ে চারুকলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। কারণ কর্তৃপক্ষ থেকে বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষেই তারা উঠতে চাচ্ছে। তবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির যেন সৃষ্টি না হয়, শিক্ষক ও প্রশাসনের সেদিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। কাল উপাচার্যের সাথে বসে প্রথম আলোচনা এই সংকট নিয়ে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি আতিফা কাফি বলেন, উপাচার্য স্যার কক্ষগুলো পুনরায় বণ্টনের জন্য আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা প্রশাসনের বাহিরের কেউ না। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খুব দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য স্যার।
ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি ড. আবু শিবলী মো. ফতেহ আলী চৌধুরী বলেন, আমি যেহেতু প্রশাসনের অধীনে কাজ করছি, প্রশাসন যেখানে বরাদ্দ দেবে, সেখানে যাব। কিন্তু বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ রুমগুলো ছাড়তে চাচ্ছে না। কাল উপাচার্য সবাইকে নিয়ে বসবে। আশা করি সমাধান হবে।
এবিষয়ে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, আমরা সবগুলো বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে বসে কক্ষ বরাদ্দের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। মীমাংসিত বিষয়টির সমাধান শিক্ষকদের হাতেই রয়েছে বলে আমি মনে করি। উপাচার্যের নির্দেশে আমি ডেভোলপমেন্ট স্টাডিজ ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতির সঙ্গেও কথা বলেছি। তারপরও নির্দেশ না মেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে কি-না দেখার বিষয়। অথচ নতুন বিভাগ হিসেবে ৫তলায় যেতে এত অপারগ কেন বুঝতেছি না। উপাচার্যকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য এমন করতেছে বলে মন্তব্য করেন ডিন।
উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক। আমরা আগামীকাল ভিসি স্যারের সাথে বসে আলাপ করে সমাধান দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি শিক্ষার্থীদের।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ জানান, রবীন্দ্র নজরুল কলা ভবনের রুম বণ্টনের দায়িত্বে ছিলেন কলা অনুষদের ডিন। তিনি বর্তমানে ক্যাম্পাসে নেই। তিনি ফিরলে তিন বিভাগের সভাপতি ও প্রক্টরিয়াল বডির সাথে বসে যৌক্তিক সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
আজকালের খবর/বিএস