প্রকাশ: সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১:৩৯ PM
হাওর অঞ্চলের বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে নির্মাণ কাজের আওতাধীন পূর্বধলা উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মেঘশিমুল শিমুলতলা বাজার থেকে হোগলা ইউনিয়নের ভিকুনিয়া পর্যন্ত নির্মিত পাকা সড়কে প্রায় ১০ মিটার রাস্তা দীর্ঘদিন যাবত অসম্পুর্ন অবস্থায় পড়ে ছিল। ফলে প্রায় ৪ কোটি ৪লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সড়কটিতে যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে পারছিলনা এলাকাবাসী। এতে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছিল এলাকাবাসীসহ এই সড়কে চলাচলকারী জনসাধারনের মাঝে। অবশেষে রাস্তাটি সংস্কার হওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। মানুষের কষ্ট দূর হয়েছে। মানুষ এখন সহজেই পূর্বধলা উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যেতে পারছে।
পূর্বধলা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা গেছে ঘাগড়া-পূর্বধলা রাস্তার ঘাগড়া ইউনিয়নের মেঘশিমুল শিমুলতলা বাজার থেকে হোগলা ইউনিয়নের ভিকুনীয়া পর্যন্ত ৩.১২৮ কি: মি: রাস্তা পাকা করণ করা হয়। হাওর অঞ্চলের বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে নির্মান কাজের জন্য অসীম সিংহ নামে এক ঠিকাদার কাজের দায়িত্ব পান। পরে তার কাছ থেকে নিয়ে নেত্রকোনার ঠিকাদার ইকবাল হোসেন রাস্তার কিছু অংশ বাকী রেখে কাজটি সম্পন্ন করেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। মেঘশিমুল শিমুলতলা বাজার থেকে একটু ভিতরের অংশে রাস্তার দুই পাশের মালিকগন জমি দিতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করায় ৬৫ মিটার রাস্তা বাকী রেখেই কাজ শেষ করতে বাধ্য হন ঠিকাদার।
এতে দুর্ভোগে পড়তে দেখা যায় এলাকাবাসী ও এই রাস্তায় চলাচলকারী লোকজনদের। একটু বৃষ্টি হলেই, অটোরিক্সা, মোটরসাইকেল বা ভ্যানগাড়ি বা অন্যান্য যানবাহন নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়তো। অসম্পুর্ন অংশে রাস্তার জমি দিতে অস্বীকারকারীদের মাঝে রাস্তার এক পাশে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা আইন উদ্দিন ও অপর পাশে রয়েছেন আলী আমজাদ, তার ভাই মাসুদ। পরবর্তীতে স্থানীয়দের দাবী দাওয়া ও সালিশী দরবারের মাধ্যমে রাস্তার জমি দিতে অস্বীকারকারীদের একটি পক্ষের মাঝে আলী আমজাদ, মাসুদ ঘর সরিয়ে রাস্তার জমি দিতে রাজী হন। পরবর্তীতে এলাকার দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এই অসম্পুর্ন ৬৫ মিটার রাস্তা সম্পুর্ন করতে এডিপি থেকে পুনরায় বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ কাজের কার্যাদেশ পায় মনি মন্ডল নামে এক ঠিকাদার।
কাজ বাস্তবায়ন করেন হোগলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকন। পুন: নির্মাণে ৬৫ মিটারের মধ্যে ৫৫ মিটারের মত কাজ করতে পারলেও বাকী ১০ মিটারে কাজ করতে আবারও বাধা দেন স্থানীয় বাসিন্দা আইন উদ্দিন। আইন উদ্দিনের পূত্র মো: শামীম দাবী করেন ওই রাস্তার পুরোটাই তার জমির উপর দিয়ে দিতে হয়। তাই তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এতে এলকাবাসীর দুভোর্গ থেকেই যায়। সবশেষে স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম এর চেষ্টায় রাস্তার জায়গার বিষয়টি মিমাংসিত হয়। এছাড়া অসম্পূর্ণ রাস্তাটি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ খবিরুল আহসান জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ মোখলেছুর রহমান খান বলেন, আমাদের এলাকাবাসীর অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল এই রাস্তাটি পাকা করণ। এই রাস্তা দিয়ে হোগলা-ঘাগড়া দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ পূর্বধলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় আসা যাওয়া করে। বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করে সবশেষে এই রাস্তাটি পাকা করনের আওতায় আনা হলেও একটু জায়গা বাকী থাকায় এলাকার মানুষের উপকারে আসছিল না। একটু বৃষ্টি হলেই পানি কাঁদায় একাকার হয়ে যেত। ফলে যানবাহন নিয়ে অনেকদুর ঘুরে যেতে হতো। অবশেষে আমাদের পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ খবিরুল আহসান মহোদয় অসম্পুর্ন রাস্তাটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করায় জনগণের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। আমরা ইউএনও মহোদয়ের নিকট চিরকৃতজ্ঞ।
হোগলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকন বলেন, জমি সংক্রান্ত জটিলতায় মেঘশিমুল-ভিকুনীয়ার ৩.১২৮ কি: মি: রাস্তা পাকা করণের কাজের মধ্যে প্রায় ৬৫ মিটারের মত কাজ অসম্পূর্ণ রেখে শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বন্ধ হওয়া কাজ পুন: নির্মাণে ৬৫ মিটারের মধ্যে ৫৫ মিটারের মত কাজ করতে পারলেও বাকী ১০ মিটারে কাজ করতে আবারও বাধার মুখে যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে পারছিলনা এলাকাবাসী। অবশেষে স্থানীয়দের সহায়তায় ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাস্তার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ খবিরুল আহসান জানান, রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে জমি সংক্রান্ত জটিলতা ছিল। স্থানীয় জমির মালিকদের বাঁধার কারণে প্রায় ৬৫ মিটারের মতো কাজ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিল না। বিভিন্ন সংবাদ পত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনদুর্ভোগের কথা জানতে পেরে এডিপি থেকে বাস্তাবায়নের উদ্যোগ নিলেও স্থানীয়দের পুন: বাঁধার কারনে ৬৫মিটারের মধ্যে ১০ মিটারের কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। পরবর্তীতে এই অসম্পন্ন ১০ মিটারের কাজ সম্পন্ন করে রাস্তাটি জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।
আজকালের খবর/ এমকে