
ভৈরবের মেঘনা নদীতে প্রতিদিন নৌ-ডাকাতদের উপদ্রব বাড়ছে। গত দেড়মাসে কয়েকটি ট্রলার ও লঞ্চে ডাকাতরা ডাকাতি করে লাখ লাখ টাকা ও মালামাল লুট করেছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নদীতে নৌ-পুলিশের টহল না থাকায় ডাকাতদের উপদ্রবে ট্রলারের মাঝিরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছে।
আজ রবিবার দুপুরে একদল ট্রলার মাঝি উপস্থিত হয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের নিকট এই অভিযোগ করেন।
এ সময় মাঝিরা বলেন, নদীতে নৌ-ডাকাতরা ডাকাতির সময় বাধা দিলে কয়েকজন যাত্রীসহ মাঝিদের ছুরিকাঘাত করে আহত করে। ভৈরব নৌ-থানায় এ বিষয়ে মাঝিরা একাধিকবার মৌখিক অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেনা বলে তাদের অভিযোগ।
এছাড়া মেঘনা নদীতে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চেও ডাকাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগে জানা গেছে, গতকাল শনিবার ভোরে ভৈরব-ওরুয়াইলগামী মহিউদ্দিন মাঝির ট্রলারে নৌ-ডাকাতরা ডাকাতি করে প্রায় দুই লাখ নগদ টাকাসহ লাখ টাকার মালামাল লুট করে পালিয়ে যায়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর ভৈরব-সরাইলগামী নুরিছলাম মাঝির ট্রলারে ডাকাতি হয়। এ সময় ডাকাতরা দেড়লাখ টাকার মালামালসহ নগদ টাকা নিয়ে যায়। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভৈরব-সাচনাগামী এম এল বৃষ্টি নামের একটি লঞ্চ ভৈরব ঘাট থেকে রাতে ছেড়ে বাজিতপুর এলাকার ঘোড়াউত্রা ও কালনী নদীর সংযোগস্থলের সোনা মিয়ার চর নামক স্থানে পৌঁছলে একদল নৌ-ডাকাত একটি ইঞ্জিনচালিত কুসা নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে লঞ্চে উঠে ডাকাতরা যাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ডাকাতরা যাত্রীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মারধোর করে একাধিক যাত্রীর কাছ থেকে ৪ লাখ ৯২ হাজার টাকাসহ যাত্রীদের মূল্যবান জিনিষপত্র লুট করে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে লঞ্চের সুকানী ধীরেন্দ্র দাস বাদী হয়ে ঘটনার পরদিন বাজিতপুর থানায় একটি মামলা করে।
জানা গেছে- ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলার সরাইল থানার ধোবাজাইল, পানিশ্বর, রাজাপুর, আশুগঞ্জ বিদ্যুত তাপকেন্দ্র সংলগ্ন, ভৈরবের মেন্দিপুর, খলাপাড়া, বাজিতপুরের ঘোড়াউত্রা কালী নদীতে ডাকাতির ঘটনাগুলি ঘটছে। এসব লঞ্চ ও ট্রলার প্রতিদিন ভোরে বা দুপুরে যাওয়া আসার পথে নৌ-ডাকাতরা উপদ্রব করে থাকে। ডাকাতদল নদীতে কুসা ট্রলার বা ছোট ট্রলারে ডাবল ইঞ্জিন লাগিয়ে চলাচল করে। ডাকাতরা নদীতে নিরব স্থানে উৎ পেতে ট্রলার নিয়ে বসে থাকে। লঞ্চ ট্রলার কাছে আসা মাত্র দ্রুত গতিতে কুসা ট্রলার চালিয়ে হামলা চালায়। অস্ত্রের ভয়ের মুখে মাঝিরা যাত্রীদের নিয়ে ডাকাতদের প্রতিহত করতে পারেনা।
হাওরে চলাচলকারী ট্রলার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুল্লাহ অভিযোগে জানান, বিগত সরকার পতনের পর থেকে গত দেড়মাস যাবত মেঘনা নদীতে নৌ-ডাকাতদের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। ভৈরব থেকে ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার সরাইল এলাকায় প্রতিদিন ১৮টি ট্রলার চলাচল করে থাকে। গত দেড়মাসে তিনটি ডাকাতি হয়েছে। এসব ঘটনায় ডাকাতরা লাখ লাখ টাকা ও স্বর্ন, মোবাইলসহ বিভিন্ন মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। ভৈরব নৌ-পুলিশকে ঘটনাগুলি অবহিত করলেও আমরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছিনা।
ট্রলার মাঝিরা একই অভিযোগ করে বলেন, ডাকাতদের উপদ্রবে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। প্রতিকার না পেলে তারা ট্রলার পেশা ছাড়তে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র ভৈরব লঞ্চঘাটের ইজারাদার মো. খবির উদ্দিন খোকা জানান, মেঘনা নদীতে নৌ-ডাকাতদের উপদ্রব বন্ধ না হলে নদীতে চলাচলকারী অধিকাংশ ট্রলার ব্যবসা বন্ধ করে দিবে। এতে হাওরবাসীর কষ্ট ও দুর্ভোগ বাড়বে।
এ বিষয়ে ভৈরব নৌ-থানার পুলিশ ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন জানান, আমি থানায় যোগদান করেছি মাত্র ২৫ দিন আগে। ডাকাতদের উপদ্রব করার বিষয়টি আমি অবগত হলাম। থানায় পুলিশের জনবল কম ও নদীতে পাহারার জন্য কোনো যানবাহন নেই। বিষয়টি নিয়ে আমি উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের নৌ-পুলিশ সুপার মো. আহাদুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টির অভিযোগ আমার জানা ছিলনা। এখন শুনলাম। ভৈরব নৌ-থানায় পুলিশের সংখ্যা কম ও নদীতে পাহারার জন্য স্পিটবোর্ড বা ট্রলার ছিলোনা। গতকাল শনিবার নতুন একটি স্পিডবোট দেয়া হয়েছে নদীর আইনশৃংখলা রক্ষা করতে। নদীতে ডাকাতি প্রতিরোধ করতে আমি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব বলে তিনি জানান।
আজকালের খবর/ওআর