প্লেব্যাকে নিজেকে মেলে ধরতে চাই। কারণ একজন শিল্পীকে পরিপূর্ণভাবে প্লেব্যাকে যতটা পাওয়া যায় অন্য মাধ্যমে ঠিক ততটা নয়- এমনটাই বলছিলেন এ সময়ের টিভি মিডিয়ামের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী অনন্যা আচার্য। নিজের মেধা আর মনন দিয়ে হয়ে উঠছেন শ্রোতাপ্রিয়।
দেশবরণ্যদের হাতে সান্নিধ্য পাওয়া কণ্ঠশিল্পী অনন্যা বলেন, এর পাশাপাশি চট্টগ্রামের ভাষায় গান নিয়ে রয়েছে তার আলাদা ভাবনা। এ প্রসঙ্গে অনন্যা বলেন, আরটিভি মিউজিক থেকে প্রচারিত চট্টগ্রামের ভাষায় ‘অল্প বয়স কালে’ গানটি তার ক্যারিয়ারে এ যাবতকালে সবচেয়ে বেশি মিলিয়ন ভিউ পেয়েছে। এরপর রয়েছে সিডি চয়েস থেকে একটি নাটকের গান ‘কেউ একজন’ শিরোনামের গান। গানটি শাওন গানওয়ালার সঙ্গে ডুয়েট, ঊর্বশী ফোরাম থেকে ‘অঙ্গপুড়ে’ শিরোনামের গান, লুৎফর হাসানের লেখা ও সুরে ‘পরের কেমনে হও’ শিরোনামের গানটি ভিউ ট্রেন্ডিংয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া প্রসেনজিৎ ওঁঝার লেখা শোভন রায়ের সুরে তার কণ্ঠের গানটি পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। এগুলো সবই মৌলিক কথার গান।
চট্টগ্রামের ভাষায় গান প্রসঙ্গে অনন্যা বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। এ অঞ্চলের গীতকাব্য কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রচারণার অভাবে জাতীয়ভাবে মর্যাদা পাচ্ছে না। যে কারণে আমি সবসময় নিজের অনুষ্ঠানগুলোতে চেষ্টা করি কাভার সংয়ের পাশাপাশি এক-দুটো চট্টগ্রামের ভাষায় গান পরিবেশন করতে।
নিজের মৌলিক গানে আইকনিক কোনো পরিবেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে এই কণ্ঠশিল্পী বলেন, সত্যি বলতে এখন পর্যন্ত তেমন গান আমি পাইনি যা দিয়ে নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি হয়েছে, তবে ওস্তাদরা যেহেতু আমার কণ্ঠ নিয়ে আশাবাদী তাই তেমন গীতের গান পেলে অবশ্যই নিজের আলাদা পরিচয় দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, বিটিভিতে কিছু ভালো মৌলিক গান পেয়েছি কিন্তু সেভাবে বেতারে পাচ্ছি না, পেলে হয়তো নিজেকে মেলে ধরতে পারতাম। তবে এটাও সত্যি যে, বেতারে অনেক ভালো ভালো আধুনিক মৌলিক গান গেয়েছি যেগুলো প্রচারের অভাবে শ্রোতাদের আড়ালে থেকে গেছে। এক্ষেত্রে বেতার কর্তৃপক্ষকে প্রচারমুখী হওয়া প্রয়োজন বলে মত দেন অনন্যা। দেশের গানের কৃষ্টিকে সমৃদ্ধ করতে হলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষার গানকে সেসব অঞ্চলের যন্ত্রীদের বেশি করে বিটিভি এবং বেতারে সুযোগ দেওয়াও উচিত।
চট্টগ্রামের ভাষায় একটি ইউটিউব চ্যানেলে অনন্যার সুরে গান আসছে জানিয়ে এই কণ্ঠশিল্পী বলেন, খুব শিগগিরই এটি মিউজিক ভিডিও আকারে প্রকাশ পাবে।
তবে অনেক গান গাইলেও এখনো শ্রোতাপ্রিয় গান গাইতে পারেননি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনন্যা। বলেন, বাংলা ভাষার প্রসারে সুন্দর গীতমালায় গান গাইতে পারলে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষীদের মাঝে বাংলা গানের শ্রোতা তৈরি হতো। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে কোক স্টুডিওর শেষ দুটি গান কিন্তু সারাবিশ্বে বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে বেশ সমাদৃত হয়েছে। এর পেছনে বাজেট ছাড়াও অনেকগুলো কারণের মধ্যে আমি বলবো বিপনণ ব্যবস্থা বড় ফ্যাক্ট। তারা নিজস্বতা প্রকাশ করেছে। যে কোনো শিল্পীই চাইবে এমন একটা প্ল্যাটফরম নিয়ে এগিয়ে যেতে।
বর্তমান কাজের সঙ্গে ভারতের তুলনা করে এই গায়িকা বলেন, ওদেশের বাংলা ভাষায় গানের চেয়ে আমরা অনেক এগিয়ে। আমাদের মৌলিক গানের পরিমাণ তৈরি হয়েছে, যেটা ওদের হয়নি। কিন্তু সঠিক বিপণন ব্যবস্থা আর প্রপার অ্যারেজমেন্টের অভাবে আমরা পিছিয়ে আছি।
টিভি চ্যানেলগুলোতে কাভার সংয়ের পাশাপাশি প্রচুর মৌলিক গানে তরুণ সম্ভাবনাময়ী শিল্পীদের সুযোগ দেওয়া উচিৎ মনে করে অনন্যা বলেন, মৌলিক গানে পরিচিতি পেলে একজন শিল্পীর আত্মপরিচয়ের ভিত শক্ত হয়।
প্লেব্যাকে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ব্যাপক উল্লেখ করে অনন্যা বলেন, দেখবেন সবশেষ কনক চাঁপা বা ন্যানসি ম্যাডাম নিজস্ব গায়কীতে শ্রোতা-দর্শকদের মাত করেছেন কিন্তু শেষপর্যন্ত তারাও সিন্ডিকেটের শিকার হয়ে আটকে গেছেন। ফলে শ্রোতারা বঞ্চিত হয়েছেন। তিন-চারজন শিল্পী বলয়ে প্লেব্যাকে যে সিন্ডকেট তৈরি হয়েছে সে সিস্টেমটা ভাঙা উচিত। মিউজিক ডিরেক্টরদের এ ব্যাপারে ভাবা উচিত। গান দিয়ে শ্রোতাদের আরাম দিতেই এটা করতে হবে। কারণ আমাদের সিনেমা মেলোডি নির্ভর, ভালো গান একটা সিনেমাকে হিট করতে পারে- এমন অসংখ্য নজির আমাদের আছে।
আজকালের খবর/আতে