প্রকাশ: শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪, ৯:৩১ AM
চট্টগ্রাম নগরীর জে এম সেন হলে দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীর অনুষ্ঠানে ইসলামি সংগীত পরিবেশন করেছে একটি সংগঠন; যা নিয়ে সমালোচনা ও ক্ষোভ তৈরি হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস এসেছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে নগরীর জে এম সেন হলে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত সপ্তমী পূজার আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে 'চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি' নামের একটি সংগঠন দুটি গান পরিবেশন করে।
এ ঘটনার পর সেখানে হিন্দুদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হলে সেনাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বাড়ানো হয়। ক্ষুদ্ধ সনাতন ধর্মালম্বীরা সেখানকার সামনের সড়কে বিক্ষোভও করেছেন।
পরে ডিসি ফরিদা খানম মণ্ডপে গিয়ে বক্তব্য দেন এবং জড়িতদের গ্রেপ্তার ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মামলা করার আশ্বাস দেন।
‘আমি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বলছি এ ঘটনায় যারাই জড়িত হোক না কেন, তারা যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, ‘জেলা প্রশাসক ম্যাডাম পরিদর্শনে এসে আশ্বাস দিয়েছেন জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। আমরা মামলা করব।’
‘স্টেজের দায়িত্বে আমাদের কমিটির যে যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন তাকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনার বিবরণ দিয়ে পূজা পরিষদের এক সংগঠক বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে বংশী শিল্পী গোষ্ঠী নামে একটি সংগঠন গান পরিবেশনের পর চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ছয়জন যুবক এসে গান গাওয়ার কথা বলে। পূজা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের সহযোগিতায় তারা স্টেজে উঠে দুটি ইসলামি গান পরিবেশন করে কোনো বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই।’
নাম প্রকাশ না করে ওই সংগঠক বলেন, অনুষ্ঠানের সূচিতে তাদের গান গাওয়ার কথা ছিল না। হঠাৎ করে এসে তারা দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশনের আবদার করে।
মহানগর পূজা পরিষদের সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য বলেন, “আমি ও কমিটির অন্য সদস্যরা মণ্ডপে ছিলাম না। তারা এসে যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের কাছে দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশনের কথা বলে এবং তার সহযোগিতায় গান পরিবেশন করে।
“পরে আমরা এসে তাদের অনুরোধ করে গান শেষ করাই। এটা কেন ঘটল সেটি আমরা খতিয়ে দেখছি।’’
এ বিষয়ে সজল দত্তের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ।
ওই সংগীত অনুষ্ঠানের পর বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বক্তব্য দেন।
পরে বিএনপি নেতারা চলে গেলে রাতে জে এম সেন হল প্রাঙ্গণ ও সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদে সনাতন ধর্মালম্বীরা স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানায়। তারা এ ঘটনার বিচার দাবি করে।
রাতে বিএনপির নগর কমিটির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনসহ অন্যান্য বিএনপি নেতা আসেন এবং বস্ত্র বিতরণ করেন।
নগরীর জে এম সেন হলে আয়োজিত দুর্গাপূজা চট্টগ্রাম মহানগরীর পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত বলে এটিকে কেন্দ্রীয় পূজা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
প্রতিবছর এখানে দুর্গাপূজা চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন পরিষদের পক্ষ থেকে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
পূজা পরিষদের এক সংগঠক বলেন, সপ্তমীর রাতের আলোচনায় অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, সম্প্রতি আদালতের রায়ে চট্টগ্রামের মেয়র ঘোষিত হওয়া বিএনপি শাহাদাত।
চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি প্রথমে ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান’ গান পরিবেশন করে। পরে তারা ‘শুধু মুসলমানের লাগি’ শিরোনামে আরেকটি গান গায়। এটির গীতিকার ও সুরকার চৌধুরী আবদুল হালিম।
পাঞ্জেরি শিল্পী গোষ্ঠীর ওয়েবসাইটে এই গানের শিরোনাম ‘শুধু মুসলমানের লাগি’ শিরোনাম হিসেবে দেওয়া রয়েছে। পাঞ্জেরি শিল্পী গোষ্ঠী ইসলামী ছাত্রশিবিরের সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
এ বিষয়ে ইসলামী ছাত্র শিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের সভাপতি ফখরুল ইসলম বলেন, “আমাদের সংগঠনের কেউ আজ জে এম সেন হলে যায়নি।
”চট্টগ্রামে আমাদের সাংস্কৃতিক সংগঠন পাঞ্জেরি শিল্পীগোষ্ঠী। যে সংগঠন জে এম সেন হলে গান পরিবেশন করেছে বলছেন তাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।"
তবে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির কারও বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস ডিসির
এ ঘটনা নিয়ে বির্তকের পর হিন্দু ধর্মালম্বীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরির খবর পেয়ে রাতে সেখানে উপস্থিত হন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এসময় তার সঙ্গে জেলা প্রশাসন ও নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।
"আজকে রাতেই তাদের নামে নিয়মিত মামলা হবে, প্রয়োজনে আমি সিএমপি কমিশনার স্যারের সাথে দেখা করে অনুরোধ করব যাতে আজকে রাতেই মামলা করা যায়।"
তিনি বলেন, "আরেকটা কথা বলতে চাই এখানে আপনাদের মঞ্চের দায়িত্বে যে ছিলেন তার দায়িত্বে অবহেলা ছিল। মঞ্চে কে উঠবে না উঠবে তার নির্ধারণ করার কথা ছিল। তার বিরুদ্ধে আপনারা ব্যবস্থা নিবেন।
“এ পূজা শুধু আপনাদের পূজা না। এ পূজা আপনাদের আমাদের সবার পূজা। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এই দুর্গাপূজা সবাই উৎসাহের সাথে উদযাপন করব। সারাদেশ যাতে চট্টগ্রামের দিকে বলতে পারে ঐতিহ্যের উৎসব উদযাপিত হয়েছে।"
আজকালের খবর/ এমকে