মঙ্গলবার ৫ নভেম্বর ২০২৪
গাজায় আগ্রাসন এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ
ইমতিয়াজ আহমেদ
প্রকাশ: সোমবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৪, ৮:১৬ PM
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল ওই দিন থেকেই যে ধ্বংসলীলা চালিয়ে আসছে, তা আজও অব্যাহত। শুধু অব্যাহত নয়, বরং যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ আরো বড় যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। লেবাননে ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত। তাদের হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হওয়ার পর ইরানও ইসরায়েলে মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। প্রশ্ন উঠছে, যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণে মধ্যপ্রাচ্যে কি বড় ধরনের যুদ্ধ শুরু হচ্ছে?

বস্তুত যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধে শুরু থেকেই যুক্ত। কারণ ইসরায়েলের অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র থেকেই আসছে এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত সুবিধা, গোয়েন্দা সহযোগিতা ও সমর্থন তারা দিয়ে আসছে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় বলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সুযোগটা আরো ভালোভাবে কাজে লাগাতে সচেষ্ট। এই সময়ে ইসরায়েলের ওপর যুক্তরাষ্ট্র বড় আকারের চাপ প্রয়োগ করবে বলে মনে হয় না। এখন বিভিন্ন ফ্রন্টে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে লাভ নেতানিয়াহু কিংবা ইসরায়েলেরই। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন শেষ হলে কী হয়, সেটিই দেখার বিষয়। খুব বড় আকারের যুদ্ধ হবে বলে মনে হয় না। তবে এ ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করবে। গাজার যুদ্ধ নিয়ে বহুমুখী আলোচনা দেখা গেছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনাও কম হয়নি। আরব দেশগুলোও এ ক্ষেত্রে দৃশ্যত চেষ্টা করেছে; কিন্তু সেগুলো কাজে লাগেনি। কারণ একে তো আন্তর্জাতিক চাপ নেই, তার ওপর আরব বিশ্ব পশ্চিমাদের কথায় চলে। ফলে তাতে খুব বেশি লাভ হয়নি। যেহেতু আমেরিকা একতরফা সমর্থন দিয়েছে, সে জন্য যুদ্ধের মোড়ে কোনো পরিবর্তন আসে কিনা, তা নির্ভর করবে আমেরিকার জনগণের ওপর। তারা আসন্ন নির্বাচনে কী রায় দেয়, তা দেখে বলা যাবে, সামনে কী হতে চলেছে মধ্যপ্রাচ্যে।

হামাসের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল আক্রমণের পেছনে ইরানের যুক্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে শুরু থেকেই। ইরান বিশেষ করে হুতি, হিজবুল্লাহসহ নানা প্রক্সি শক্তিকে সমর্থন দিয়ে আসছে। ইরান সম্প্রতি ইসরায়েলে মিসাইল হামলা চালালেও বড় একটা যুদ্ধ লাগুকÑ এটি বোধ হয় ইরানও চাইবে না। কারণ প্রতিপক্ষ কেÑ সেটি ইরান ভালো করেই জানে। ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বের প্রায় সব দেশ রয়েছে। সেভাবে যুদ্ধ লাগলে অর্থনীতির বিষয় যেমন আছে, তার চেয়েও বড় বিষয়, বহির্বিশ্বের সঙ্গে তার সম্পর্ক বিস্তৃতির চেষ্টা থমকে যাবে। 

ইসরায়েলের টার্গেটেড কিছু হামলায় তার অস্ত্র ও প্রাযুক্তিক সক্ষমতা এবং গোয়েন্দা নজরদারির দক্ষতা স্পষ্ট। ইরানে থাকা অবস্থায়ই হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াহ ইসরায়েলের আক্রমণে নিহত হন। হামাসের অন্যান্য নেতা কিংবা হাসান নাসরুল্লাহসহ হিজবুল্লাহর নেতারা যেভাবে ইসরায়েলের হামলায় প্রাণ হারালেন, তাতেও এটি স্পষ্ট। তবে ইসরায়েলের এই প্রযুক্তি হয়তো অন্যরাও নিতে পারে। অর্থাৎ আজ হোক বা কাল; অন্যদের হাতে একই টেকনোলজি চলে যেতে পারে। তখন একই ধরনের ঘটনা দেখা যেতে পারে। গত এক বছরে যেভাবে ইসরায়েলের ওপর মিসাইল ও ড্রোন হামলা হয়েছে, এক সময় হয়তো ইসরায়েল ভাবতেও পারেনি, এমন হামলা হবে। যে আয়রন ডোম নিয়ে ইসরায়েল এত গর্ব করত, তা কিন্তু এখন সর্বাংশে কাজ করছে না। ইরানের অনেক মিসাইলই সেই প্রতিরক্ষাব্যূহ ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছে। অনুরূপভাবে ইসরায়েলের অনুসরণে কেউ আগামী দিনে টার্গেটেড হামলা করে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ইসরায়েলের ভেতরে হামলা করে হত্যা করলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। তবে এটি যুদ্ধ থামাতে কোনো ভূমিকা পালন করবে না। 

যদিও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দেশের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ আমরা দেখছি। তা ছাড়া তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। কিন্তু কোনোভাবেই নেতানিয়াহু যুদ্ধ বন্ধ করতে চাইছেন না। যে করেই হোক, তার সরকার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চায়। যাদের নিয়ে তিনি বর্তমানে ইরায়েলের ক্ষমতায় আছেন, তারা চরম রক্ষণশীল। তাদের খুশি রাখার জন্যও নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। তিনি কিন্তু অব্যাহত চেষ্টা চালাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত করতে। কোনোভাবে যদি তিনি এ কাজে সফল হয়ে যান, তবে তার আরো ১০ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকার বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। এই যুদ্ধ এমন অনেকের জন্যই লাভ; যারা অস্ত্র বিক্রি করে, তাদের জন্যও। কিন্তু এর ভুক্তভোগী ফিলিস্তিনের মানুষ। লেবাননকেও যেন দ্বিতীয় গাজা বানাতে চায় ইসরায়েল। মুশকিল হলো, সারা বিশ্ব চুপ। কেউ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সেভাবে কথা বলছে না। আরব বিশ্বেরও যেভাবে ভূমিকা পালন করা উচিত, তারা সেভাবে সোচ্চার নয়।  

হামাস কিংবা হিজবুল্লাহ যেসব প্রতিরোধ করছে, সেগুলোর তাৎপর্যও কম নয়। তারা মিসাইল, ড্রোন হামলা চালিয়ে ইসরায়েলকে একদিকে ব্যস্ত রাখতে চায়, অন্যদিকে এর ফলে ইসরায়েলের যে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়, তার প্রভাব পড়বে অভিবাসনে। কারণ এমন হুমকির মধ্যে কেউই আর ইসরায়েলে থাকতে চাইবে না। ইসরায়েলের বাসিন্দা অধিকাংশই এসেছে ইউরোপ থেকে। ফলে ইসরায়েলের ওপর হামলা অব্যাহত থাকলে তখন ইসরায়েলের জনগণও শান্তির জন্য সরকারকে চাপ সৃষ্টি করবে। সে জন্য ইরান, হামাস, হুতি কিংবা হিজবুল্লাহর হামলা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় ইসরায়েলের মিসাইল কিংবা ড্রোন আক্রমণ প্রতিরোধের অস্ত্র আছে, তার পরও এটি চাপ সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট।

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের ক্ষেত্র যেভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে, এর সমাধানের পথও ততটা জটিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র চাইলে সমাধান হতে পারে। কিন্তু নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেখানে নতুন প্রেসিডেন্ট কে হন, তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তাদের সরকারকে কতটা চাপ দিতে পারে, সেটিও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। 

এর মধ্যেও যদি মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যতের কথা আমরা বলি, তবে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি দুটিই আলোচনা করা দরকার। স্বল্প মেয়াদে এক বছরের মধ্যে আমার ধারণা এ ধরনের ছোটখাটো সংঘাত চলতেই থাকবে। যদি বড় কোনো যুগান্তকারী কিছু না ঘটে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে পরিবর্তন আসতে বাধ্য। যেভাবে প্রযুক্তি সবার হাতে চলে যাচ্ছে, তাতে ইসরায়েলের মনে হয় শান্তিতে ঘুমানোর দিন শেষ হয়ে আসছে। যত দিন যাবে, ইসরায়েলের জন্য পরিস্থিতি ততটাই কঠিন হবে।

লেখক : প্রাক্তন অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আজকালের খবর/আরইউ








http://www.ajkalerkhobor.net/ad/1724840661.gif
সর্বশেষ সংবাদ
ইসিকে জরুরি ৯ নির্দেশনা দিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়
নীতি ও আদর্শের পরিবর্তনের মাধ্যমে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব
এলপিজির দাম বাড়বে না কমবে, জানা যাবে আজ বিকেলে
কেন ভালোবাসার মানুষকেই বিয়ে করবেন?
ভোটারদের মিলিয়ন ডলার দিতে বাধা নেই মাস্কের
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
আন্দোলনের ধূম্রজালে ইবির ক্লাস রুম,অনশনে শিক্ষার্থীরা
‘মাইনাস-টু’ নিয়ে রাজনীতিতে হঠাৎ আবার আলোচনা কেন?
বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করতে রাজি আওয়ামী লীগ: হাছান মাহমুদ
হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর
১০ জেলা ও মহানগরে বিএনপির কমিটি ঘোষণা
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft