একটি দোকানে গেছি জাঙিয়া কিনতে। হরেক রকমের জাঙিয়া দেখছি, এমন সময় আমার কলেজের বান্ধবী রিয়ার ফোন, এই কী করছিস? রিয়া বড়লোকের একমাত্র সুন্দরী মেয়ে। বহু ছেলের ক্রাশ। আমরা তাকে ডাকি 'তারছেঁড়া'। কেউ কেউ ডাকে দস্যুরানী। সবসময় ডেম কেয়ার ভাব নিয়ে চলে।
আমি মুখ ফসকে বলে ফেললাম, বাছাই করছি। তারপর মনে হলো, ওরে সর্বনাশ! এখন যদি জিগ্যেস করে কী বাছাই করছি! আমি ভালো করেই জানি, দ্রুত কথা ছড়ানোর মাধ্যম পৃথিবীতে মাত্র দুটি আছে। একটি হচ্ছে, ই-মেইল আরেকটি হচ্ছে ফিমেইল।
কী বাছাই করছিস?
যা ভেবেছি তাই। এখন কীভাবে বলি জাঙিয়া বাছাই করছি।
কী রে, কথা বলছিস না কেন? কী বাছাই করছিস বললি না?
আমি চুপ করে রইলাম।
এই শালা চুপ থাকবি না, তোকে পছন্দ করি বলে এটিকে আমার দুর্বলতা ভাবার কোনোই কারণ নাই। তুই কি চাস আমি মনে মনে তোকে গালি দেই?
জাঙিয়া দেখতে দেখতে বললাম, আমাকে পছন্দ করিস, তাহলে গালি দিবি কেন? আমাকে বিয়ে করে ফেললেই পারিস।
রিয়া হড়বড় করে বলল, আমি কখনোই বিয়ে করবো না, করলেও তোর মতো ত্যাদোড় বিয়ে করা ঠিক হবে না। যদি করতেই হয়, আমি এমন গাধা বিয়ে করবো যে আমার কথামতো ওঠবস করবে। তোকে উঠতে বললে বসবি, বসতে বললে উঠবি।
গাধা বিয়ে করবি কেন?
কারণ, গাধাদেও কান ধরে ঘুরাতে আমার মজা লাগে। যেই সেই গাধা হলে হবে না, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উন্নত মানের গাধা বিয়ে করবো। আমার কথা বাদ দে, কী বাছাই করছিস বললি না?
বাঘের খাঁচা বাছাই করছি।
রিয়া হা হা করে হাসতে লাগল, তোর তো বিলাই পালার সামর্থ্য নাই, বাঘ পালিস কীভাবে? বাঘ দেখতে কেমন রে? ছাগলের মতো? ভ্যাঁ করে ডাক দেয়?
আমি বিরক্তি চেপে বললাম, যেসব ছেলে বউয়ের আঁচলে ম্যাঁও ম্যাঁও করে সেও এই বাঘ পালার সামর্থ্য রাখে। পোলা মানেই আশি টাকা তোলা, কথাটা সবসময় মনে রাখবি।
আর লেডিস ফার্স্ট কথাটা বুঝি মনে রাখার দরকার নাই?
বকবক না করে বল, হঠাৎ শয়তান আমার ঘাড়ে নাজিল হলো কেন?
রিয়া আহ্লাদী গলায় বলল, আমাকে একটা কাজ করে দিতে পারবি? অবশ্য তুই যা ভীতু!
অপমান গায়ে মাখলাম না।
আমি জানি, সব জুতা যেমন পায়ে লাগাতে নাই, তেমনি সব কথা গায়ে মাখতে নাই। সুন্দরী হলে তো কথাই নাই। এদের জন্মই হয় ছেলেদের অপমান করার জন্য।
কী কাজ?
আমাকে একটু বিষ কিনে এনে দিতে পারবি?
কে বিষ খাবে, তুই? বিষ খেতে হবে কেন? ফ্যানের সাথে লটকে পড়...সর্টকার্টে মামলা ডিসমিস। কাল মরিস না, পরশু হলে ভালো হয়। কালকে আমার জরুরি একটা কাজ আছে। তোর লাশ দেখতে যেতে পারবো না।
আরে বুদ্দু, তোকে বলেছি আমি বিষ খাবো?
খাবি না? খেলে ভালো হতো। বিষ কার জন্য?
আমার এক নতুন চিড়িয়ার জন্য। সে বলছে আমাকে পাওয়ার জন্য সে প্রয়োজনে বিষ খাবে।
পরীক্ষা নিতে চাইছিস? এইটা যেন কয় নাম্বার?
গুনছে কে? আমার জন্য মরতে চায়। প্রমাণ ছাড়া এই শালার কথা বিশ্বাস করি কীভাবে?
তাও তো ঠিক। যদি মরে টরে যায়?
মরবে না। তুই ডেট ফেইল বিষ আনবি যাতে এর কার্যকারিতা না থাকে...আমি ওর সাহস দেখতে চাই।
বিষের ডেইট ফেল হলে কার্যকারিতা কমে না বাড়ে জানি না তো? যদি উল্টো বেড়ে যায়?
আরে গাধা, তুই নিজে পরীক্ষা করে আনবি।
আমি কীভাবে পরীক্ষা করবো? ল্যাবরেটরিতে টেস্ট করতে তো ম্যালা হাঙ্গামা।
রিয়া রাগ দেখালো, কী বোকা ছেলে রে তুই! আমার ধারণা, তোর মাথায় কোনো জায়গা নাই, তাই তোর ব্রেইন মাথায় না থেকে পাছায় এসে জমা হয়েছে। এজন্যই তো মেয়েরা তোকে পাত্তা দেয় না।
তুইও কি দিস না?
আমার কথা বাদ দে, আমি সবাইকে পাত্তা দেই। আমার কাছে সালমান যা হিরো আলমও তা। আরে শালা, বিষ একটু মুখে নিয়ে টেস্ট করে দেখতে পরবি না?
যদি মরে যাই? এখনো তো বিয়ে করলাম না, আয়ু থাকতেই মেরে ফেলবি?
মরবি না, আমি গ্যারান্টি। গাধারা সহজে মরে না।
তোর কাছে তো সব ছেলেই গাধা। যার পরীক্ষা নিচ্ছিস সেও কী গাধা?
অবশ্যই গাধা। গাধা না হলে কেউ বিষ খেতে চায়?
তাহলে পরীক্ষা করে বিষ কেনার দরকার নাই। তুই-ই তো বললি, গাধারা সহজে মরে না!
রিয়া খলবল করে বলল, কিছু কিছু গাধা কারণ ছাড়াই মরে যায়। আমি খুঁজছি সাহসী গাধা।
গাধারা কি সাহসী হয়?
হয় তো। তুই তার প্রমাণ।
তাহলে আমাকে বিয়ে করছিস না কেন?
বিয়ে জিনিসটাই খারাপ। করলেও খারাপ, না করলেও খারাপ। বারবার করলে আরো খারাপ। আমি হলাম আগুন সুন্দরী, তুই হচ্ছিস বুড়ো মোমবাতি। তোকে বিয়ে করলে লোকজন বলবে, মেয়েটা শেষমেশ ভালোবেসে মোমবাতি বিয়ে করেছে। এই অপমান মেনে নেওয়া কি ঠিক হবে?
আমি একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, না, মোটেও ঠিক হবে না। আমাকে একটি সত্যি কথা বল তো, তোর সাথে আমার কী সম্পর্ক? ফ্রেন্ডশিপ না রিলেশনশিপ?
একটি হলেই হলো, ও নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। আমি ভালো করেই জানি, ফ্রেন্ডশিপ হোক আর রিলেশনশিপ হোক একদিন টাইটানিকের মতো ঠিকই হারিয়ে যাবে।
আমি একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, মন্দ বলিস নাই।
আজকালের খবর/আরইউ