প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৪৭ AM
বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহর ১৩৪তম তিরোধান দিবস পালনে একাডেমির অ্যাডহক কমিটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতা ও হত্যা মামলার আসামি রাখায়, তা ভেঙে দিতে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ায় লালন শাহের মাজারের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধনে এ সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় আন্দোলনের কুষ্টিয়ার প্রধান সমন্বয়ক তৌকির আহমেদ বলেন, শহীদদের রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি। অথচ ছাত্র-জনতাকে বাদ দিয়ে কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত ডিসি শারমিন আখতার আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর ও হত্যা মামলার আসামিদের নিয়ে লালন শাহের তিরোধান দিবস পালনের প্রস্তুতি সভা করেছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্তমান কমিটি ভেঙে দিতে হবে। ছাত্র-জনতা ও সব পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ নিয়ে নতুন কমিটি না করলে মানববন্ধনসহ কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
জানা যায়, ২০১৩ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদি কমিটি গঠন করা হয়। মেয়াদ শেষে অ্যাডহক কমিটি দিয়ে চলছে লালন একাডেমি। পদাধিকার বলে কমিটির সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক। সদস্য আছেন কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাহিদ হোসেন, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান, চাপড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম হক এবং চাপড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক মনজু।
লালন শাহের তিরোধান দিবস উপলক্ষে আগামী ১৭ থেকে ১৯ অক্টোবর ছেঁউড়িয়ায় তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হবে। অ্যাডহক কমিটি এরই প্রস্তুতি সভা করে গত রোববার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে।
মানববন্ধনে জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে সমন্বয়ক আলমাস মামুন বলেন, ‘রাষ্ট্র আমাদের, কীভাবে পরিচালিত হবে তা আমরাই ঠিক করব। কোনো গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্রের মালিকানা বুঝে নিইনি। আমাদের ভাইদের রক্তের বিনিময়ে বুঝে নিয়েছি। তাই সাবধান, আমাদের হালকাভাবে নেবেন না। শেখ হাসিনা হালকাভাবে নিয়ে জবাব পেয়েছেন। কুষ্টিয়ার এডিসি (ভারপ্রাপ্ত ডিসি) আমাদের হালকাভাবে নিলে ওই চেয়ার থেকে কীভাবে ছুড়ে ফেলতে হয়, তা জানা আছে। স্পষ্ট বলছি, ছুড়ে ফেলব।’
শারমিন আখতার বলেন, ‘তিরোধান দিবস আসন্ন। এখন ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করা
সম্ভব নয়। তা ছাড়া এত মানুষের ভেতরে কে আসামি তা বোঝা মুশকিল। নতুন জেলা প্রশাসক এসে বিষয়টি দেখবেন।’
ভাঙ্গায় আনন্দধামে ভাঙচুর-আগুন ফরিদপুরের ভাঙ্গার কাউলীবেড়া ইউনিয়নের মুট্রা গ্রামে রোববার রাতে লালন শাহের ছবি ভাঙচুরসহ আনন্দধামের আসবাব পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ।
আনন্দধাম সূত্র জানায়, রোববার রাত আড়াইটার দিকে আনন্দধামের দেয়াল টপকে দুর্বৃত্তরা ভেতরে ঢুকে লোকপল্লী ঘরের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম ও আসবাব ভাঙচুর করে। লালন সাঁইজি ও বঙ্গবন্ধুর ছবি নষ্ট করা হয়। একটি গিটার, হারমোনিয়াম, দোতারা, একতারা, খমকসহ সাঁইজি ও কবি জাহিদের অসংখ্য বই পুড়িয়ে ফেলে দুর্বৃত্তরা।
আনন্দধামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ২০১৩ সালে আনন্দধামটি প্রতিষ্ঠা করেন কবি ও কথাশিল্পী সৈয়দ জাহিদ হাসান। আনন্দধামটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে জড়িদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ভাঙ্গা থানার ওসি মোকসেদুর রহমান জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুমারখালীতে দরবার শরিফে ভাঙচুর কুষ্টিয়ার কুমারখালীর রশিদিয়া দরবার শরিফে বার্ষিক ওরস চলাকালে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার রাতে উপজেলার চরসাদিপুর ইউনিয়নের সাদিপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
দরবার কর্তৃপক্ষ কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়নি কিংবা নামও বলেনি। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছে, চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা জাহাঙ্গীর আলম, সাদিপুর আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ও ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আবু তালেবের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটেছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে জাহাঙ্গীরকে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে দরবার শরিফের পরিচালক জিল্লুর রহমান কথা বলতে রাজি হননি। তাঁর ছেলে রাসেল হোসেন জানান, ওরসে ৮০ জনের মতো উপস্থিত হন। হুজুর ওয়াজ শেষে মোনাজাত করার সময় জামায়াত-শিবিরের লোকজন হামলা করে। থানায় মামলা করবেন বলে জানান তিনি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দুই নেতা জানিয়েছেন, দরবারে নিয়মিত গানবাজনা ও মাদকের আড্ডা বসে। রোববার এশার নামাজ শেষে স্থানীয়রা তা ভেঙে দেন। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘স্থানীয়রা ভাঙতে গেলে আমি নিষেধ করেছি। দরবারে অগ্নিকাণ্ডের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ আবু তালেব বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি অন্য বাজারে ছিলাম। সুনাম নষ্ট করার জন্য জামায়াতের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে।’
কুমারখালী থানার ওসি আকিবুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেলে তারা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।
আজকালের খবর/ এমকে