বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪
চলচ্চিত্রে ভাষা আন্দোলন কিছুটা উপেক্ষিত
অলোক আচার্য
প্রকাশ: শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪:২৭ PM আপডেট: ২৯.০৯.২০২৪ ৫:৪৩ PM
বাংলাদেশের ইতিহাসে মহান ভাষা আন্দোলন বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং অন্তরে প্রবাহমান। এই দুটি ঘটনাই বাঙালিদের অণুপ্রাণিত করে। বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগে যে বিজয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা ছিল মহান ভাষা আন্দোলনে বিজয় লাভ করা। একটি বিজয় আরেকটি বিজয়ের পথে নিয়ে যায়, শক্তি যোগায়। বাঙালিকেও শক্তি যুগিয়েছিল ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। এই দুটি ঘটনাই এমনভাবে প্রবাহমান যে বাংলা সাহিত্য, গান, নাচ ও চলচ্চিত্রে ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারির রক্তস্নাত ঘটনা শব্দ ও গান হয়ে পাঠক ও দর্শকের সামনে এসেছে। ইতিহাস কথা বলে। সেদিনের রক্তমাখা ফাল্গুনের দুপুরও কথা বলেছিল ’৭১-এ। স্বাধীনতার যে কয়েকটি উপাদান রয়েছে তার মধ্যে প্রথমেই রয়েছে বলার স্বাধীনতা বা ভাষার স্বাধীনতা। পাকিস্তানীরা প্রথমেই বাঙালিকে আবদ্ধ করতে চেয়েছিল ভাষায়। ২১ ফেব্রুয়ারি রাজপথে লেখা হয় বাঙালির বীরত্ব গাঁথা। রক্তাত্ত পথে বাঙালির আন্দোলন আরো বেগবান হয়েছিল সেদিন। কিন্তু আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়নি খুব বেশি। কয়েকটি হাতে গোণা এবং একেবারেই হাতে গোনা চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সেই সিনেমাগুলো কী কী এটি জানার আগে বলা দরকার এত বড় একটি ঘটনা নিয়ে এত কাজ হয়েছে যে বিষয়টি আমাদের দায়বদ্ধতাকে খানিকটা লজ্জায় ফেলে দেয়। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর ওপর প্রচুর কাজ হচ্ছে। আগেও হয়েছে এবং এখনো নতুনভাবে হচ্ছে। অথচ আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন নিয়ে নতুন কাজও হচ্ছে না। অথচ এখানে রয়েছে প্রচুর উপাদান যা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মতোই প্রচুর সংখ্যক কাজ হওয়া সম্ভব। নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরা সম্ভব। আমদের ভাষা প্রাপ্তির ইতিহাস রক্তের, আন্দোলনের। তাই অনেকের চাইতে আমাদের দায়বদ্ধতাও মনে হয় বেশি থাকা উচিত। আমরা বুঝেছি কীভাবে ভাষা আগলে রাখতে হয়। তারপরেও কেন এ রকম হচ্ছে তার কোনো উত্তর নেই। 

ফেব্রুয়ারি এলেই শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের কথা। আমাদের সহিত্য চর্চায়ও ভাষা আন্দোলনের সেই কালজয়ী ইতিহাস ধ্বনিত হয়। বাংলা সাহিত্যের একটি বিশাল অংশ রচিত হয়েছে আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রাম এবং ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে যে ব্যাপক সাহিত্য নির্মাণ করা হয়েছে সে তুলনায় ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজ হয়নি। মানুষের মুখে বেঁচে থাকে তার মাতৃভাষা। আর মাতৃভাষায় বেঁচে থাকে মানুষ।  ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও তার রক্তাত্ত ইতিহাসের মতো একটি গর্বিত ইতিহাস কেবল বাঙালিদেরই আছে। এটি আমাদের গর্ব, আমাদের অহংকার।  ভাষা আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে জানামতে ঢালিউডে এ পর্যন্ত মাত্র তিনটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে। সিনেমা তিনটি হলো- জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), বাঙলা (২০০৬) এবং ফাগুন হাওয়ায় (২০১৯)।  মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা নেহাত কম না হলেও ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা নির্মাণের ব্যাপারটা উপেক্ষিতই। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগের বছর অর্থাৎ ১৯৭০ সালের ১০ এপ্রিল মুক্তি পায় জহির রায়হান নির্মিত জীবন থেকে নেয়া। এ সিনেমায় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে ধারণ করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব স্বাধীনতার চেতনাও তুলে ধরা হয়েছে। রাজ্জাক, সুচন্দা, রোজী সামাদ, খান আতা, রওশন জামিল, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ খ্যাতনামা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অনবদ্য অভিনয়ে নির্মিত এ ছবিটিই বহু বছর বাঙালির ভাষা আন্দোনের ইতিহাসকে দারুণভাবে উপস্থাপন করেছে। এর কাহিনী মানুষের মনে ভাষা আন্দোলনের ঘটনাকে স্পষ্টভাবে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে। সিনেমাটিতে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি ব্যবহৃত হয়। আছে প্রভাতফেরি, বিভিন্ন সংগঠনের পুষ্পস্তবক অর্পণের দৃশ্য।  এর বহু বছর পর ২০০৬ সালে মুক্তি পায় শহীদুল আলম খোকন পরিচালিত বাঙলা সিনেমাটি। এতে শাবনূর, হুমায়ুন ফরীদি, মাহফুজ আহমেদসহ আরও অনেকে অভিনয় করেছেন। 

তারও এক যুগ পর বছর পর ২০১৯ সালে অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ফাগুন হাওয়ায় মুক্তি পায়। এতে অভিনয় করেন সিয়াম আহমেদ, নুসরাত ইমরোজ তিশা, আবুল হায়াত, শহীদুল আলম সাচ্চু, ফজলুর রহমান বাবু প্রমুখ। এখন প্রশ্ন হলো এত বড় একটি ঐতিহাসিক ঘটনা যা ইতিহাসে আর একটিও নেই, বীরত্বগাঁথা সেই ইতিহাস নিয়ে কি আরো বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব ছিল না। বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে ভাষা কেড়ে নেওয়ার ইতিহাস এবং রক্তের বিনিময়ে তা ছিনিয়ে আনার যে প্রাপ্তি তা নিয়ে আরো কাজ হতে পারতো বলেই মনে হয়। কিন্তু কোথায় যেন একটি শূন্যস্থান রয়ে গেছে। কোথায় যেন একটি ঘাটতি রয়ে গেছে। তা আজও অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেছে। 

তবে সেই দায় থেকেই সম্প্রতি সরকারি অনুদানে ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক একটি সিনেমা ‘ভাষার জন্য মমতাজ’ নির্মাণের কথা জানা যায়। সিনেমাটি ভাষা আন্দোলনে ভাষা আন্দোলনের নির্যাতিত, ত্যাগী ও নিগৃহীত নারী ভাষাসৈনিক মমতাজ বেগমের জীবনীভিত্তিক। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রামে উৎসর্গ করেছেন নিজেকে। মমতাজ বেগম ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের কারণে স্বামী-সংসার হারিয়েছেন, চাকরি হারিয়েছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন, নানারকম কুৎসা ও গঞ্জনা সহ্য করেছেন। নিজের জীবন, সংসার বিপন্ন করেছেন কিন্তু ভাষা আন্দোলনের প্রশ্নে আপস করেননি। এর পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনের ওপর নির্মিত হয়েছে বেশকিছু প্রামাণ্য চলচ্চিত্র। শবনম ফেরদৌসী নির্মাণ করেছেন ‘ভাষা জয়িতা’। রোকেয়া প্রাচী নির্মাণ করেছেন প্রামাণ্য চলচ্চিত্র বায়ান্ন’র মিছিল। রফিক উদ্দিন আহমেদ ভাষা আন্দোলনের ওপর নির্মাণ করেছেন ‘হৃদয়ে একুশ’। কিন্তু সত্যিকার অর্থে ভাষা আন্দোলন নিয়ে বড় পর্দায় বেশি কাজ হয়নি। এটি আমাদের ব্যর্থতা। ভাষার অধিকার ছিনিয়ে আনা যেমন আমাদের বিরাট সফলতাকে স্মরণ করিয়ে দেয় তেমনি এই ব্যর্থতার দায়ও আমাদেরই। আশা করা যায়, হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এই ব্যর্থতার খরা কাটবে। 

আজকালের খবর/আরইউ








http://www.ajkalerkhobor.net/ad/1724840661.gif
সর্বশেষ সংবাদ
গাজায় নিহতের সংখ্যা ৪২ হাজার ছাড়াল
দুর্গাপূজায় বিএসএফকে মিষ্টি দিলো বিজিবি সদস্যরা
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা আজ
আজ মহাসপ্তমী
লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় ৫ চিকিৎসকসহ নিহত ১০
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
৪ দফা দাবিতে সচেতন নাগরিক সমাজ নেতৃবৃন্দের সমাবেশ
বেরোবিতে চাকরি পেলেন আবু সাঈদের বোন
টাটা গ্রুপের কর্ণধার রতন টাটা মারা গেছেন
অজ্ঞাত স্থান থেকে হারুন, ‘আমাকে ভুল বোঝার অবকাশ নেই’
এইচএসসির ফল জানতে পারবেন যেভাবে
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft