সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে ছাত্র আন্দোলনের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে গভীর রাতে বালু ও পাথর বহনকারীদের কাছে চাঁদা দাবি করার অভিযোগে ৯ জনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার দয়ারবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ১১ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন- কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও বুড়দেও গ্রামের রশিদ আলীর ছেলে সাবেক ছাত্রলীগের কর্মী আবু সাঈদ রবিন (২২), একই গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজাহান আহমদ (২৯), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির পাড়ুয়া নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে আরিফ হাসান জুবায়ের (২৭), টুকেরবাজারের আনোয়ার হোসেনের ছেলে মো. রাজন মিয়া (২৫), পাড়ুয়া শাকেরা এলাকার আব্দুল বাছেদের ছেলে দিদার হোসেন (২৫), কাঁঠালবাড়ী গ্রামের বাহার মিয়ার ছেলে সেলিম মিয়া (২৫), শাহ আরফিন এলাকার মো. হাইদুল ইসলামের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম (২৬), বটেরতল গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে নাসির মিয়া (২৫), বাহাদুরপুর গ্রামের মো. কালু ভুঁইয়ার ছেলে সোলায়মান (২৭)।
আটককৃতদের মধ্যে আবু সাঈদ রবিন, শাহজাহান আহমদ ও আরিফ হাসান জুবায়ের কোম্পানীগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচিতে ছিলেন। পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে সমন্বয়ক পরিচয়ে দুর্নীতিমুক্ত সরকারি সেবা নিশ্চিত সভা করতেও দেখা গেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার দিকে এলাকাবাসী জানতে পারে, সমন্বয়ক পরিচয়ে কয়েকজন লোক স্থানীয় বারকি নৌকার মাঝি ও বালু পাথর উত্তোলন শ্রমিকদের কাছে চাঁদা চাচ্ছেন। চাঁদার বিনিময়ে তারা সাদাপাথর ও ধলাই নদী হতে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের সুযোগ করে দেবেন।
এ খবরে স্থানীয় শতাধিক লোক রাত দেড়টার দিকে সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদের ঘেরাও করেন। এ সময় সমন্বয়ক পরিচয়দানকারীরা উত্তেজিত হয়ে তাদের হুমকি-ধমকি দিয়ে চলে যেতে বলেন। বিষয়টি স্থানীয় গণমান্যদের অবগত করে সমন্বয়ক পরিচয়দানকারীদের আটক করে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে এলাকাবাসী। তবে ৯ জনকে আটক করা গেলেও দুজন পালিয়ে যান।
পলাতকরা হলেন- নয়াগাঙ্গেরপাড় গ্রামের ইলিয়াছুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান মামুন (২৭) ও লামাগ্রামের শামসুল ইসলামের ছেলে সোহেল আহমদ রানা (২৯)।
পরদিন এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোম্পানীগঞ্জের ছাত্রনেতা নূর আহমদ (২৫) বাদী হয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদিউজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগে আজ (বৃহস্পতিবার) থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালত প্রেরণ করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে কোম্পানীগঞ্জে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঘটনা এটিই প্রথম নয়।
এর আগে ছাত্র সমন্বয়ক দাবি করে সিলেট জেলা ছাত্রদলের নেতা মইনুল ইসলাম নামের একজনের নেতৃত্বে গরু ছিনতাই ও চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনী তাদের আটক করে।
তারও আগে উপজেলার কাটাখাল এলাকায় এক ব্যবসায়ীর টাকা ডাকাতির সময় স্থানীয় দক্ষিণ বুরদেও গ্রামের কামরুল নামের একজনকে আটক করা হয়। ডাকাতির ঘটনায় ওয়াসিম ও জুনায়েদ নামের আরো দুজনের নামে মামলা করা হয়। তারা সবাই নিজেদের ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিতেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে। এদের মধ্যে কামরুল বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, গত কয়েক দিন আগে গভীর রাতে মহাসড়কে গাড়ি আটক করে চাঁদা দাবি করেন ছাত্র সমন্বয়ক নামে কয়েকজন। পরে তার কাছে টাকা না থাকায় বিকাশে টাকা এনে তাদেরকে দিয়ে তারপর ছাড় পান।
কোম্পানীগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুরুতর আহত মোহাম্মদ শিহাব আহমদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলাম। আন্দোলনে গিয়ে আহত হয়েছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় সরকার পতনের পর থেকেই কোম্পানীগঞ্জে সমন্বয়ক পরিচয়ে অনেকেই চাঁদাবাজি, মামলাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে যাচ্ছে, যা খুবই লজ্জাজনক।
আজকালের খবর/বিএস