ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়েছিল শেখ হাসিনা সরকারে থাকা মন্ত্রী, এমপিসহ বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তারা।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিদের অবৈধ সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসে বিভিন্ন মাধ্যমে। এবার হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সম্পদের তথ্য তদন্তে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই লন্ডনকে ঢাকার পক্ষ থেকে এই অনুরোধ জানানো হয়।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিত্রদের বৈদেশিক সম্পদের তদন্তে সহায়তার জন্য যুক্তরাজ্যের সাথে যোগাযোগ করেছে বাংলাদেশ।
মূলত ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী সরকারের সদস্যদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরকদমে নেমেছে বাংলাদেশের নতুন সরকার।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান মনসুর বলেছেন, হাসিনার শাসনামল ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে কমপক্ষে ২ লাখ কোটি টাকা বিদেশে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে কিনা তা তদন্ত করছে নতুন সরকার।
মনসুর ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি যুক্তরাজ্যের সাহায্য চেয়েছেন। কারণ যুক্তরাজ্য সেই বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি যেখানে স্বৈরাচারী সরকারের সদস্যরা তাদের সম্পদ সরিয়ে নিয়ে থাকতে পারে বলে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করে।
তিনি বলেন, এ ধরনের সম্পদ যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতেও পাচার হয়ে থাকতে পারে। গভর্নর আহসান মনসুর বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার এ বিষয়ে খুব সহায়ক। (ব্রিটিশ) হাইকমিশনার আমার অফিসে এসেছেন এবং তারা প্রচুর প্রযুক্তিগত সহায়তার প্রস্তাবও দিয়েছেন।
মনসুর বলেন, বিশেষ করে শেখ হাসিনার সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রীর যুক্তরাজ্যে মালিকানাধীন ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তির পেছনে ব্যবহৃত তহবিলের উৎস শনাক্ত করতে চায় বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, সম্পদের তদন্ত করার মাধ্যমে এই সম্পদগুলো কীভাবে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে তার জন্য আমরা যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে সাহায্য চাইব।
এছাড়া যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা একটি বৈঠক হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন, তবে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা গত মাসে ভারতে পালিয়ে যান। কিন্তু ওই দেশে তার অবস্থান ঠিক কোথায় তা অজানা এবং এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য তার সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
ব্রিটিশ এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, (বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আসা) এই অভিযোগগুলো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমারের নতুন লেবার সরকারের জন্য জটিল সমস্যাপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে।
কারণ ব্রিটেনের নতুন এই লেবার সরকারের সিটি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক হচ্ছেন শেখ হাসিনার ভাগ্নি। টিউলিপ সিদ্দিক এই অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত এমন কোনো ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। আবার এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধের জবাবও দেননি টিউলিপ সিদ্দিক।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে ব্রিটেনের সাহায্যের জন্য ঢাকায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের সাথে দেখা করেছেন।
ড. ইউনূসের প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ‘বাংলাদেশ থেকে চুরি করা এবং বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধার করতে যাচ্ছে। এটি এই সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি।’
১৭ কোটি মানুষের দেশ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশে শেখ হাসিনা দুই দশক ধরে ক্ষমতায় ছিলেন। ভোট কারচুপি, অধিকার লঙ্ঘন এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে তার সরকার অভিযুক্ত ছিল এবং সর্বশেষ গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে তার সরকারের পতন হয়।
হাসিনার দল আওয়ামী লীগের মিত্রদের বৈদেশিক সম্পদের বিষয়টি বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপকভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এই বছরের শুরুর দিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সাথে যুক্ত কোম্পানিগুলোর মালিকানাধীন ব্রিটিশ রিয়েল এস্টেট পোর্টফোলিওকে ‘অব্যক্ত সম্পদের’ উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করেছিল, যা কর্তৃপক্ষের তদন্ত করা উচিত।
আজকালের খবর/বিএস