কিছুটা স্থবির হয়ে পড়লেও বন্ধ হচ্ছে না বিগত সরকারের নেওয়া সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি। নানামুখী ত্রুটি ও আলোচনার পর এই কর্মসূচি বন্ধ করে দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই বর্তমান সরকারের। সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা যথারীতি চালু থাকবে, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হয়েছে।
বর্তমান সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত, স্বশাসিত, বিধিবদ্ধ সংস্থা ও সরকারি চাকরিজীবীদের এর আওতায় আনার ক্ষেত্রে যৌক্তিক ভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে স্কিম চূড়ান্ত করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
চলতি বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে অনেকটাই তড়িঘড়ি করে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। চলতি বছরের জুলাই ও আগস্টে দেশে অস্থিরতা দেখা দিলেও বন্ধ হয়নি সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে অনেকের মনে সন্দেহ ছিল এটিকে বন্ধ করে দেওয়া হবে কি না? নানামুখী ত্রুটি নিয়ে এ কর্মসূচি চলবে কি না? এমন সন্দেহের প্রেক্ষিতে এই কর্মসূচিতে স্থবিরতা নেমে আসে। তবে সবার সন্দেহ দূর করে এই কর্মসূচিকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছে বর্তমান সরকার।
শুধু তা-ই নয়, ভবিষ্যতে এ কর্মসূচিতে গতি ও জনগণের আস্থা বাড়াতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নেওয়ার কথা ভাবছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ওপর প্রস্তুত করা কৌশলপত্র উপস্থাপন করেন। এরপর দ্রুত একটি আইন প্রণয়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন তিনি। নির্দেশের প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৩০ মার্চ সর্বজনীন পেনশন আইনের খসড়া প্রকাশিত হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২২ সালের ৯ জুন ঘোষণা করেন যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। ২০২৩ সালের ২৩ জুন সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে পেনশন চালু হওয়ার সঙ্গে মিল রেখে ওই বছরের ১৭ আগস্ট শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা উদ্বোধন করেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য ছিল, দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা অবসরে গিয়ে এই পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। শুধু তা-ই নয়, যারা বিদেশে কাজ করেন, সেসব প্রবাসীও এই কর্মসূচির আওতায় আসবেন। দেশের সাধারণ মানুষ, যাদের বয়স ১৮ বছর পূরণ হয়েছে তারা এবং তাঁতি, জেলে, কামার, কুমারসহ সব শ্রেণির মানুষ এই পেনশন-সুবিধা পাবেন।
বলা হয়েছে, দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই সুবিধা পাবেন না। যারা সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করছেন, তারাও এ সুবিধার আওতায় আসবেন না। তবে তাদের কেউ যদি সর্বজনীন বেসকারি পেনশন-সুবিধা পেতে চান, তাহলে তাকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা ফেরত দিতে হবে। তারপর তিনি সর্বজনীন পেনশন-সুবিধা পাবেন।
আজকালের খবর/ এমকে