শনিবার ৫ অক্টোবর ২০২৪
নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ এবং কিছু প্রশ্ন
ড. বদিউল আলম মজুমদার
প্রকাশ: শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪:১১ PM
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মোহাম্মদ আলমগীর ও আনিছুর রহমান তথা সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশন গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেছেন। চারজন পদত্যাগের কোনো কারণ না দেখালেও কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবিধানিক কিছু জটিলতা দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে সংবিধানের ১২৩(৩)(খ) অনুচ্ছেদের বিধানমতে তৎপরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। এ নির্বাচন করতে পারবেন না বলেই তিনি পদত্যাগ করেছেন।

নির্বাচন করতে না পারলে সংবিধান লঙ্ঘন হবে। সে ক্ষেত্রে ৭(খ) অনুচ্ছেদের বিধানমতে সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য দায়ী হতে পারেন এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার জন্যও দায়ী হতে পারেন।

সংবিধানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এবং যারা সাংবিধানিক পদে আছেন; শুধু তারাই নন, সব নাগরিকেরই বিশেষ করে যারা গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবিতে আছেন, তাদের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সংবিধান হলো দেশের সর্বোচ্চ আইন। এর দ্বারাই সব কিছু পরিচালিত হওয়ার বিধান রয়েছে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল ২৪ আগস্ট শনিবার একটি জাতীয় দৈনিকে একটি নিবন্ধে লিখেছেন, ‘৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অসম্ভব। এটিকে বলা হয় উভয়সংকট। ঘাড়ের উপর ডেমোক্লিসের তরবারি। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং নির্বাচন কমিশনারদের অপসারণ যখনই হোক না কেন, রাষ্ট্র ও সরকারের আইনগত ও সাংবিধানিক ভিত্তি মজবুত করতে হলে সফল বিপ্লবোত্তর উদ্ভূত এমন পরিস্থিতিতে অবিলম্বে একটি অসামরিক ফরমান জারি করে প্রচলিত সংবিধান স্থগিত বা পাশাপাশি বহাল রেখে অসামরিক ফরমানকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে অবস্থান প্রদান করে সাংবিধানিক বা আইনগত সংকট পরিহার করা প্রয়োজন। অধিকন্তু বলা হচ্ছে এবং শোনা যাচ্ছে, নির্বাচন, বিচার এবং প্রশাসনে ব্যাপক সংস্কার করা হবে। সংবিধানে পরিবর্তন ব্যতিরেকে অনেক কাক্সিক্ষত সংস্কার হয়তো আইনসম্মত সম্ভব হবে না। যথাযথ ফরমান থাকলে তার অধীনে সংবিধানে সংস্কার আনা সম্ভব...।’

তার এই লেখা নিয়ে কিছু কিছু প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্নগুলো হলো, তিনি সাংবিধানিক পদে থেকে প্রকাশ্যে এভাবে গণমাধ্যমে লিখতে পারেন কিনা? এবং তার কিছু সাংবিধানিক প্রশ্ন আছে, যার সুরাহা করতে হবে তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে, যেখানে রাষ্ট্রপতিকে তার সঙ্গে আলাপ করেই এসব বিষয়ের সুরাহা করতে হবে। এটি না করে তিনি এভাবে গণমাধ্যমে লিখতে পারেন কিনা? আমরা জানতে পেরেছি, রাষ্ট্রপতি তাকে সময় দিয়েছিলেন, পরে আবার অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করে দিয়েছেন। তিনি না দেখা করতে পারলেও সরকারি চিঠির মাধ্যমে বিষয়টি উত্থাপন করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তার এভাবে জনসম্মুখে উত্থাপন করা, যা নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। আমাদের প্রশ্ন, তা তিনি করতে পারেন কিনা?

মনে হয় যেন তিনি সংবিধানকে সুবিধামতো ব্যবহার করেছেন। তিনি ওই ধারার সাংবিধানিক বিধি লঙ্ঘনের আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন, কিন্তু তিনি তার অতীতের কর্মকাণ্ডে সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এড়িয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন যে সংবিধানে কতগুলো মৌলিক কাঠামো রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের মূলকথা হলো, জনগণের সম্মতির মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া। অর্থাৎ জনগণ যাদের ভোট দেবে, তারাই জনগণের পক্ষে এবং কল্যাণে কাজ করবে। এটিই গণতন্ত্রের প্রথম পদক্ষেপ। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভোটের মাধ্যমে শুরু হয়। ভোট হতে হবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। এর মাধ্যমে জনগণের সম্মতি অর্জিত হতে হবে। কিন্তু তিনি যে ২০২৪ সালে একতরফা নির্বাচন করলেন, তাতে কি জনগণের সম্মতি অর্জিত হয়েছে? এটি তো আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেখানে অভিনবভাবে সরকার যে আচরণ করেছে একতরফা নির্বাচনের মুখোমুখি হয়ে, তারা তাদের গঠনতন্ত্রকে উপেক্ষা করে নিজের দলের মানুষকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাদের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ করে দিয়েছে। এ ব্যাপারে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ হিসেবে হাবিবুল আউয়াল এবং তার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিশ্চুপ ছিলেন। এবং তারা এ ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেননি। একদলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সেটি কোনো নির্বাচন ছিল না। কারণ নির্বাচন মানেই সংজ্ঞাগতভাবে বিকল্পের মধ্য থেকে বেছে নেওয়া।

গণতন্ত্র মানে বিকল্প থেকে বেছে নেওয়া। একদলের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো বিকল্প সৃষ্টি করে না। বিকল্প হতে হবে বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প। বিকল্প হতে হবে ভিন্ন দল-যারা ভিন্ন মত, ভিন্ন কর্মসূচি ইত্যাদি ধারণ করে। তিনি সম্পূর্ণভাবে এটি উপেক্ষা করেছেন। যার ফলে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা ধ্বংস হয়ে গেছে। যার পরিণতিতে এক মাস আগে কয়েক সপ্তাহে সহস্রাধিক ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটেছে। অন্তত ১৮ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাবিবুল আউয়াল এটি করে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে উপেক্ষা করেছেন। সেই মৌলিক কাঠামো হচ্ছে গণতন্ত্র। তিনি আংশিক দেখলেন, পুরো জিনিসটি দেখলেন না।

নির্বাচন কমিশন প্রশ্ন করেছে-তারা নির্বাচন বন্ধ করতে পারত কিনা? তারা বন্ধ করতে না পারলেও পদত্যাগ তো করতে পারত। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে সংলাপ করেছিল। ওই সংলাপে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রায় সবাই তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে সুষ্ঠু নির্বাচন না করতে পারলে পদত্যাগ করা উচিত। কিন্তু তারা তা করল না। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের অগাধ ক্ষমতা আছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেন, ‘তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ’ করার বিধানের অর্থ হলো যে, শুধুমাত্র সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের আইনগত বিধি-বিধানের সঙ্গে সংযোজন করার এখতিয়ার রয়েছে।’ অর্থাৎ সুষ্ঠু নির্বাচনের খাতিরে তারা ‘দিনকে রাত বা রাতকে দিন’ করা ছাড়া সব কিছুই করতে পারে। এ রকম ক্ষমতা তাদের দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তখন তারা এসব ভুলে গেলেন কেন? তারা আমাদের সংবিধান কিংবা আদালতের রায় সম্পূর্ণ ভুলে গেছেন। এ কথা সুস্পষ্ট যে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে না পারলেও তারা বিতর্কিত নির্বাচন বন্ধ করতে পারে।

একা নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে না। কারণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনেকগুলো স্টেকহোল্ডার আছে। যেমন-সরকার তথা প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, রাজনৈতিক দল, প্রার্থী, গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ। তারা সবাই যদি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা প্রায়ই অসম্ভব। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করতে পারে না।

এই নির্বাচন কমিশন অনেকগুলো বিতর্কিত কাজ করেছে। তখন তাদের বিবেক কাজ করেনি। বিবেক তাদের তাড়িত করেনি। এখন তারা সংবিধান লঙ্ঘন হবে বলে বিবেকের তাড়নায় পদত্যাগ করেছেন। ইভিএম নিয়ে যখন সাফাই গেয়েছেন, তখন তাদের বিবেক কোথায় ছিল? সে সময় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে, রাজনৈতিক দল কী বলেছিল, সেটি তারা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেনি। রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএম প্রত্যাখ্যান করা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীনদের স্বার্থে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই ইভিএম নিকৃষ্ট ধরনের ইভিএম ছিল। কারণ এতে কোনো পেপার ট্রেইল ছিল না। ইভিএমের কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির প্রধান হিসেবে জামিলুর রেজা চৌধুরী এটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি এটির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ইভিএম কেনা হয়েছে। এই দুর্বল ইভিএম-যেটি নিয়ে কারসাজি করা যায়, যেটির পেপার ট্রেইল নেই বলে একবার ভোট দিলে আর এটি পরবর্তী সময়ে যাচাই করা যায় না। এটি ব্যবহারের জন্য তারা উঠেপড়ে লেগেছিল। আমরা আনন্দিত যে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে তারা জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা থেকে সরে এসেছে।

বিদায়ি নির্বাচন কমিশন আরেকটা বিতর্কিত কাজ করেছে নিবন্ধন নিয়ে। দুটি নামসর্বস্ব দলকে নিবন্ধন দিয়েছে, যাদের নাম আগে কেউ কখনো শোনেনি। এর উদ্দেশ্য ছিল দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল বিএনপি থেকে তাদের নেতাকর্মী ভাগিয়ে এনে বিকল্প বিরোধী দল সৃষ্টি করে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন দেখানো। এটি একটা সরকারের কারসাজির অংশ। তারা এই কারসাজির অংশ হয়েছিল। এভাবে তারা অনেকগুলো বিতর্কিত কাজ করেছে।

বিদায়ি ব্রিফিংয়ে হাজি হাবিবুল আউয়াল স্বীকার করে নিয়েছেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়নি। কর্তব্য মনে করে তিনি ভবিষ্যতের জন্য কিছু প্রস্তাবনা রেখেছেন। তিনি মনে করেন, ‘বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সমরূপতার কারণে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (দলীয়ভিত্তিক) নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ আদর্শ ক্ষেত্র হতে পারে।’ তার মতে, ‘প্রতিটি সাধারণ নির্বাচন নির্দলীয় তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হলে উদ্দেশ্য অর্জন আরো সুনিশ্চিত হতে পারে।’

নির্বাচন কমিশন সংবিধানের কথা বলে, কিন্তু তারা সংবিধানের মৌলিক জিনিস উপেক্ষা করেছে। তারা অনেকগুলো বিতর্কিত কাজ করেছে। হাবিবুল আউয়াল পদত্যাগের জন্য নিজের পক্ষে যে অজুহাত দিয়েছেন, এই অজুহাত ধোপে টেকে না।

লেখক : সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। 

আজকালের খবর/আরইউ








http://www.ajkalerkhobor.net/ad/1724840661.gif
সর্বশেষ সংবাদ
ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করবে নির্বাচনের টাইমলাইন : প্রেস সচিব
বৃষ্টি নিয়ে নতুন বার্তা দিলো আবহাওয়া অধিদপ্তর
গণহত্যায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে: মাহফুজ
কেরানীগঞ্জে রেস্টুরেন্টে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃত ৩
আর্থিক খাতে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না: অর্থ উপদেষ্টা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
দুর্গাপূজায় সারাদেশে দুই লাখের বেশি আনসার মোতায়েন হচ্ছে
পূজামণ্ডপের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনী তৎপর থাকবে: সেনাপ্রধান
সব বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস, চট্টগ্রামে ভূমিধসের শঙ্কা
সাংবাদিক হিসেবে কারো বিরুদ্ধে মামলা হোক আমরা তা চাইনা: শ্যামল
অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার কারণেই কি দেশে ফিরবেন শেখ হাসিনা?
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft