লুৎফুন্নাহার তার স্বামী কায়কোবাদ মারা যাওয়ার পর থেকে সংসারে একা হয়ে পড়েন। লুৎফুন্নাহারের শ্বশুর-শাশুড়ি এবং তিনজন জা। দেবর তিনজন। শ্বশুর অনেক আগেই মারা গেছেন। সবাই যৌথ ফ্যামেলিতে একই বাড়িতে থাকেন। কিন্তু তিন জা দেবরদের সাথে লুৎফুন্নাহারের সম্পর্ক ভালো ছিলো না। এমনকি শাশুড়ির সাথেও। লুৎফুন্নাহার কলেজের প্রভাষক, কায়কোবাদ ছিলো সরকারি পোস্ট মাস্টার। তাদের স্ট্যাটাস, সভ্যতা এবং উন্নতি দেখে আর ভাই ভাবিরা হিংসা করতো। এটা কায়কোবাদ বেঁচে থাকতে তিনিও বুঝতেন। কিন্তু মুখ খুলে কিছু বলতেন না। কারণ কায়কোবাদ সংসারের বড় ছেলে ছিলেন। ছোটদের অনেক ভালোবাসতেন। কায়কোবাদের ছেলে লুৎফর রহমান তির তির করে বড় হতে হতে মনের অবেলায় এসে ডবকা যুবকে পরিণত হয়ে গেছে। কায়কোবাদ মারা যাওয়ার মাসেই ছেলে লুৎফর রহমান গোল্ডেন নিয়ে এইচএসসি পাশ করে। স্বামী হারানোর পর থেকে লুৎফুন্নাহারকে নিয়ে ওমুক লোকের সাথে, তমুক কোটিপতির সাথে হেন কথা নাই যা সমাজের লোকেরা রটাননি। এটা গ্রামের লোকদের এক স¦ভাব। গ্রামের লোকেরা অনেক ক্রিটিক্যাল, অনেক সহজ সরল আবার মন্দও বটে। যাকে যেটা ভাবে সেটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। লুৎফুন্নাহার বয়সে ৩৬। এখনো উজ্জ্বল, কমলমতি যুবতীর মতো। কলেজ থেকে বাসা পর্যন্ত আসতে প্রতিদিন অনেক ভদ্রলোক, কোটিপতি ব্যবসায়ী বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু লুৎফুন্নাহার কলেজের প্রভাষক মানুষ। এ বয়সে বিয়ের চিন্তা করা কেমন দেখায়। তাও আবার ঘরে ছেলে থাকতে। না এসব সমাজে বসবাস করা মুশকিল। কোনো মহিলার স্বামী মারা গেলেই তাকে নিয়ে টানা হেঁচরা শুরু হয়। অন্য পুরুষের নজর পড়ে। নজর পড়ুক আর না পড়ুক বদনামের শেষ থাকে না। কী বিভৎস মানুষ সব! বর্তমান সমাজে এরকম অহরহ ঘটছে। তাই বলে নিজেকে সকল মানুষের কাতারে মেশাতে চান না ম্যাডাম লুৎফুন্নাহার। ওদিকে তার নিজের দেবর, জা’দের চোখ বাঁকা করে থাকা স্বভাব তো আছেই। সব মিলিয়ে লুৎফুন্নাহার বেশ আন-ইজি ফিল করছেন অনেক দিন থেকেই। এর মধ্যে গ্রামের লোকজন কিছু দুর্নামও ছড়িয়েছে লুৎফুন্নাহারের। এ নিয়ে গ্রামের মাতা মুরুব্বিরা একবার গোপনে এসে সতর্কও করে গেছেন। অদ্ভূত মিথ্যা অপবাদ! লুৎফুন্নাহার এতে ভীষণ গোস্যা হলেন। এ সব সমাজ ব্যববস্থায় মহিলাদের প্রতি মানুষের এতো অবহেলা লুৎফুন্নাহার মেনে নিতে পারলেননা। ভাবলেন, ছেলেকে নিয়ে শহরে যাবেন। শহরেই বসবাস করবেন বলে মনস্থির করলেন। শহরে তার অনেক কলিগ থাকেন। তাদের সাথে কথা বলে পরের দিনই ব্যাগ অ্যান্ড ব্যাগেজে শহরে ভাড়া করা বাসায় যাওয়ার জন্য বের হলেন। তার জা, শাশুড়ি কেউ রা শব্দটি করলো না। লুৎফুন্নাহার ছেলেকে নিয়ে দ্রুত সিএনজিতে উঠে চলে গেলো।
টয় নামে লুৎফরের একটি কুকুর ছিলো। সেটা মারা যাওয়ার পর থেকে লুৎফরকেই গ্রামের লোকজন টয় বলে ডাকে। ওর মাকে ডাকে লুৎফা।
উত্তরবঙ্গের রাজধানীখ্যাত বগুড়া শহর। এখানে সবাই ব্যাস্ত। কেউ কাউকে যেনো দেখছে না। সময়ের মূল্য যেনো সকল মানুষের কাছে গুরুত্বের বিষয়। সবার প্রতিযোগিতা করে বেঁচে থাকা। সব মিলিয়ে লুৎফাকে ভালোই লাগছে। ছেলেকে যে তার মানুষের মতো করে মানুষ করতে হবে-এটিই তার স্বপ্ন। বগুড়া শহর এমনিতেই পরিপাটি। সাজানো গোছানো শহর। এখানকার এক ডাকের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজিজুল হক কলেজ। লুৎফর রহমান টয় অনার্স এডমিশনে কৃতিত্বের সহিত টিকে গেলো। সাবজেক্টটাও ইংলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে চেষ্টা করে ভালো ফল হয়নি। তাই এটাতেই খুশি। সারাদিন কলেজ থেকে ফিরে মা ছেলে এক সঙ্গে থাকা যাবে। এতেই সুখ ও তৃপ্তি। টয় কলেজ থেকে ফিরে প্রতিদিন মায়ের সাথে ছেলেমী করে। ছোট্ট করে গালে চুমু না খেলে বাইরে বেরোবেইনা। মা’টা ছেলের জন্য যা খুশি তাই রান্না করে রাখে। টয় কলেজ থেকে আসলেই এটা খাও, ওটা খাও বলে মায়ের পিড়াপিড়ি বেড়ে যায়। ফিডার খাওয়া বাচ্চার মতোই আদর করে এখনও। তাতে টয় মাঝে মধ্যে বিরক্ত হয়। ‘এই তুমি না আম্মু’ বলে বিরক্তির মনোভাব প্রকাশ করে। এভাবেই ছেলেকে বাবার দিক থেকে ফিরিয়ে রাখে। ভুলে রাখার চেষ্টা করে। ভুলে রাখার চেষ্টা করে গ্রামের আত্নীয় স্বজনদের থেকেও। নিজেও ভুলে থাকে। টয় ইতোমধ্যে ভালোছাত্রের পরিচয় দিয়েছে কলেজে। টেস্ট পরীক্ষায় ভালো নম্বর তোলে। ক্লাসেও তুখোড়গিরি। টিচাররা তাকে এক নামে চিনতে লাগলো। এই কারণে বন্ধু বান্ধবও বাড়তে থাকে। ছেলে বন্ধু মেয়ে বন্ধু সব টাইপের। তবে মেয়ে বন্ধুদের খুব বেশি পাত্তা দেয় না। তাকে ভালো রেজাল্ট দেখাতে হবে এটাই তার চিন্তা। মেয়েরা কেমন টাইপের সেটা ও ভালো করেই জানে। কিছু দিন আগে তার এক ভালো বন্ধু এক মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে। তার সুন্দর ভবিষ্যৎ কীভাবে নষ্ট হয়ে গেলো। কিছু সুন্দরী মেয়েরা সামনে এসে ‘হাই’ দেয়। কিন্তু টয় এগুলো পছন্দ করে না। টয় জানে তার মা’টাও এসব পছন্দ করেন না। এই এই করে তার মা’কে গ্রাম ছাড়তে হয়েছে। মিথ্যা অপবাদে। তাই টয় অনেকটা সতর্কে থাকে। কিন্তু এখনকার আল্ট্রা মডার্ন মেয়েরা অনেক এগিয়ে। তারা ডোন্ট কেয়ারে চলে। মুখের ওপর সব বলে দেয়। লজ্জা শরমের বালাই নেই। টয়ের মতো ছেলেকে বাগে নেওয়া তাদের টু ধাত ব্যাপার।
শায়লা, শিউলী, সাথী। এরা তিন জন বান্ধবী। ইংলিশেই পড়ে। একই ব্যাচে। ক্লাস থেকে ফিরে নির্জন এক জায়গায় মিলিত হয়ে কী কী সব ফিসফিস করলো ওরা। লাঞ্চের পর ক্লাসে ঢুকতেই সিঁড়ির উপরে টয় পড়ে গেলো। সামান্য টের পেলো-পিছন থেকে কে যেনো পায়ের সাথে পা লাগিয়েছে। ওপরের দিকে চেয়ে দেখে তিনজন ছাত্রী ফিক ফিক করে হাসছে। টয় ভীষণ লজ্জা পেলো। খুব দ্রুত উঠে নিজেকে সামলালো। টয় রাগে লাল হয়ে বললো- ‘এই মেয়ে এই, তোমাদের লজ্জা নেই, তোমরা এ রকম করছো কেনো, এ্যাঁ?’
শায়লা ফিক্ করে হেসে বললো।
-তোমার সাথে প্রেম করবো মশাই, প্রেম। এবার তো সিঁড়িতে পড়েছেন। এরপর কোথায় পড়বেন ভেবে দেখেন মশাই। বলে হাসতে হাসতে তিনজন পগারপার। টয় চুপচাপ ওপরে চলে গেলো। ক্লাসে। ওরা তিনজনও ক্লাসে গেলো। শায়লারা ওর পাশের সিটে বসতে চেষ্টা করলে টয় ওখান থেকে উঠে পিছনে গিয়ে বসলো। এর পর ক্লাসে আর কিছু হলো না। টয় সামনে গিয়ে লেকচারারের সাথে কী সব ফিস ফিস করে ইংরেজিতে বলে পিছনে ওর সিটে গিয়ে বসে পড়লো। ওরা একটু টেনশনে পড়লো। স্যারকে সব বলে টলে দিলো না তো। এর একটু যদি নড়বড় হয় তো দেখাবো মজা। আমাদের চেনেনি। টয় ক্লাসে বেশি দেড়ি না করে সোজা চলে আসলো বাসায়। এই অবেলায় দেখে ওর মা বলে ‘আজ এত ফাস্ট টয়?’
-এমনি মা । বলে টয় ঘুমে গেলে। এভাবে বিকেল, রাত চলে গেল। টয় পরের দিনে কলেজে গেলো দেড়িতে। প্রতিদিন যে সময়ে যায় তার ঘণ্টাখানেক পরে। টয়ের প্রথম ক্লাাস মিস হয়। শায়লারা ক্লাস না করে ওর অপেক্ষায় আছে। তবে গতকালের মত ওতোটা চঞ্চলতা নেই শায়লার চোখে মুখে। লজ্জা লজ্জা ভাব। টয় কলেজে পা দিতেই শায়লা আসে সামনে। ‘কিছু উত্তর চাই জনাব?’ বলে শায়লা পথ আটকায়। টয় বলে ‘পথ ছাড়ো প্লিজ’। বলে সোজা ক্লাসের দিকে যায়। সাথী শায়লাকে বলে ‘বেচারা ঠেঁটা আছে’। টয় চলে গেলে শায়লারাও চলে গেলো। তবে শায়লার মনে দুনিয়ার অন্ধকার জেঁকে বসেছে। অতি চঞ্চল বটে তবে এর আগে সিরিয়াসলি কাউকে নিয়ে ভাবেনি। এভাবে লজ্জা শরমের মাথা খায়নি। টয় ক্লাসে বেশি সময় না দিয়ে বাসায় ফেরে। মাকে বলা উচিত। টয়ের হেন বিষয় নাই যা ওর মা জানে না। সংসারে দুটোইতো মানুষ। তাই একে অপরে খোলামেলাভাবে সব কিছু শেয়ার করে চলে। টয় এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি এর আগে হয়নি। বাসায় এসে সোজা ওর মায়ের রুমে যায়। মায়ের কোলে ঢলে পড়ে। ওর মা বুঝতে পারে কলেজে কিছু একটা হয়েছে। টয় কিছু হয়েছে কী?
-হুম, টয় মাথা নাড়ে।
-কী হয়েছে বল?
টয় সব কথা খুলে বললো। ওর মা কী ভেবে বললো মেয়েটা কেমন? টয় বলে ‘এক চোখ ট্যারা, এক পা খোঁড়া’।
-সে কি? সত্যি না মিথ্যে বলছিস তুই। টয় কিছু না বলে কোল থেকে উঠে বসে। ওর মা অনেক ট্যালেন্ট। টয় কিছু একটা লুকোচ্ছে সেটা বুঝতে পারে। বলে, তাহলে সেই চোখ ট্যারা, খোঁড়া মেয়েকে একদিন নিয়ে আয় বাসায়। টয় বলে, সেকি আম্মু তুমি কী বলছো সব?
-তাই বলছি। টয় লজ্জায় উঠে দাঁড়ালো। পড়ার রুমে গিয়ে ধপাস করে শুয়ে পড়ে। পরের দিন টয় কলেজে যায়। শায়লা সাথীকে নিয়ে টয়ের দিকে এগিয়ে আসে। হাতে গোলাপ। পড়নে লাল শাড়ি। কড়া লিপিস্টিক। সাথী সালোয়ার পাজামা পড়ে। টয় ওদের আসা দেখে না দেখার ভান করে গাছের আড়াল হয়। শায়লা তবু দেখে ফেলে। টয় ভয়ে কাঁপছে। কাভার দেওয়ার মতো কোন বন্ধু নেই। এমনি শায়লা যা মেয়ে, যা টাউট। টয় মনে মনে ভাবছে। শায়লা গাছের আড়ালে গিয়ে টয়ের মুখোমুখি হয়। ‘আই লাভ ইউ টয়’ বলে গোলাপটি দিতে যায়। শায়লা নিস্তব্ধ নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। টয় কিছু না বলে গোলাপটি নিয়ে নিলো। শায়লার চোখে পানি আসে। টয় এতোটা কঠিন মনের ভাবতে পারেনি। তাকে ভালোবাাসার জন্য একজন মেয়ে হয়ে কী কী করতে হচ্ছে। তবু সান্ত্বনা পায় এই ভেবে যে গোলাপটি ফিরিয়ে দেয়নি। টয় ফিরতি আই লাভ ইউ না বলে ফুলটা পকেটে রেখে ক্লাসের দিকে চলে গেলো। খুব অমনযোগী ফিল করছে। শান্তি পাচ্ছে না। শায়লার শারীরিক বৈভব আছে। লাল শাড়ীতে এত মানায়। টয় এইসব ভাবছে। কিন্তু মাকে যে বলেছে ট্যারা চোখ, পা একটা খোঁড়া। এটার কী হবে। আসলে তো শায়লা অনেক সুন্দর। তার তো কোনো ত্রুটিই নাই। টয় কøাস থেকে বেরোয়। সোজা কৃষ্ণচূড়ার নিচে এসে বসলো। পাশ দিয়ে বিড়িওয়ালা যেতেই তাকে ডেকে দুটো বেনসন নিলো। দোকানদারের ঝুলানো ম্যাচ দিয়েই একটা ধরিয়ে নিলো ঠোঁটে। এই প্রথম ঠোঁটে আগুন ধরালো টয়। বিড়িওয়ালা যেতে ধরলে তাকে ডেকে বসায় সামনে। খুব জটাচুল বহন করা অল্প বয়সী ছেলেটা ভয়ে ভয়ে বসলো। নাম কি তোর? কামাল। প্রেম করিস? প্রেমের কথা শুনে ছল ছল করে পানি আসে কামালের চোখে। কামাল আস্তে বলে, করি স্যার, সারাদিন ঘুরে ফিরে দুজন সন্ধ্যার পর এক হই। তোর নায়িকা কী করে? গরিব আমার মতো, সারা শহরে দোকানে দোকানে চকলেট বিক্রি করে। টয় আশ্চর্য হয়ে কামালকে দেখছে আর ভাবছে আসলে প্রেম কি মানুষকে বাঁচাতে শিখায়। আমি তো মরে যাচ্ছি। শায়লা কি সত্যি বাঁচাতে পারবে আমাকে। টয় চুল টানছে সাথ সিগারেটের ধুঁয়ো চারপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। শায়লা ক্লাস করতে করতে জানালা দিয়ে চোখটা একবার বাহির করতেই চোখে পড়ে টয়কে। টয় সিগ্রেট টানছে। শায়লা ক্লাস ছেড়ে সোজা চলে আসে কৃষ্ণচূড়ার নিচে এবং টয়ের মুখ থেকে সিগ্রেট কেড়ে নেয়। শায়লা খুব ক্ষিপ্রভাবে বলে। তুমি আমার জন্য সিগ্রেট নিতে পারো না। তুমিতো শান্ত ভদ্র ছেলে। অধূমপায়ী। তেমার প্রশংসা সবাই করে। এটাই তোমার গৌরব। আমাকে ভালোবাসতে হবেনা। প্লিজ, তবু...বলে শায়লা সিগ্রেট মুচড়ে ফেলে দেয়। টয় কিছু বলে না। বিড়িওয়ালা কামাল ভয়ে পালায়। টয় বলে, শায়লা আমাকে বাঁচাতে পারবে তুমি?
-কেন, তোমার কী হয়েছে?
-বুঝতে পারছি না, বুঝাতেও পারছি না। শায়লা বলে, ‘আমি তোমার নিকট থেকে অনেক অনেক দূরে চলে যাব, তবু তুমি ভালো থাকো। শায়লা এই কথা বলে শাড়ীর আঁচলে চোখ মুছে। ওদের দেখে একটু পর সাথীও আসলো। সাথী আসলে টয় একটু বিরক্তবোধ করে। তবু লজ্জা শরম রেখে টয় শায়লার শাড়ীর আঁচল ধরে চোখ মুছে দেয়। বলে, ‘শায়লা আই লাভ ইউ’। শায়লার বিশ্বাস হচ্ছে না। সাথীও অবাক হয় । আসলে টয় খুব কঠিন টাইপের ছেলে। শায়লা বলে, তুমি আর নেশা করবে না তো। কথা দাও। টয় তিন সত্যি বলে প্রমিজ করে। টয় মুচকি হেসে বলে বিপদে পড়েছি একটা।
-কী বিপদ?
টয় বলে তুমি তো আস্ত এক চোখ ট্যারা মেয়ে, পা খোঁড়া।
-হয়তো, কিন্তু বিপদটা কীসের সেটা বলো? টয় শায়লাকে বলে- ‘এর থেকে বাাঁচতে হলে আমার বাসায় যেতে হবে, আম্মুর কাছে। শায়লার বুক ধক করে ওঠে। প্রেম শুরু হতে না হতেই তোমার আম্মু? এই শোনো, তুমি আামকে ভালোবাসো আর না বাসো, এসব বাদ দেও প্লিজ। এমন শাস্তি দিও না আমায়। টয় হাসে খিল খিল করে। বলে, তোমাকে তো সাহসী ভেবেছিলাম। আমার আম্মু তোমাকে দেখবে বলেছে। শায়লা এবার আর রা করলো না। এক রিকশায় তিনজন চেপে বাসায় আসলো। টয়ের মা একটু ঘুমিয়েছিলো। টয়ের ডাকে উঠে এসে দরজা খুলে দেয়।
-টয় তুই একি করছিস, আগে বলিসনি কেনো?
শায়লার বুকে অস্বাভাবিক ভয় আর উৎকণ্ঠা। কী জানি কী হয়। সাথীটাও সাথে সাথে নার্ভাস ফিল করছে। এই ভয় উৎকণ্ঠার মধ্যেই শায়লা ভাঙা ভাঙা গলায় সালাম দেয়, স্লামালিকুম। সাথে সাথীও দিলো সালাম। টয়ের মা সালাম নিয়ে বারবার দেখছে। চোখ ট্যারা আর পা খোঁড়া কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। এবার রাগান্নিত হয়ে বললো, টয় তোমাকে কলেজে পড়তে দিয়েছি, বারবার প্রেম করার জন্য পাঠায়নি। চোখ ট্যারা মেয়েকে আনতে বলেছিলাম, তাকে নিয়ে আসোনি ক্যানো? এর সাথে আবার কবে কী হলো? টয় হেসে বলে, আম্মু এই যে শায়লা, এর কথাই বলেছিলাম। তোমাকে মিথ্যা বলেছিলাম আম্মু। ও খুব কিউট মেয়ে।
-ও,তাহলে আমার ছেলে অনেক বড় হয়েছে। মিথ্যা বলা হচ্ছে আমাকে। ও নাকি খুব টাউট? টয় মুচকি হাসে। শরম পায়। ওর মা শায়লাকে কাছে টেনে নিয়ে ভেতরে চলে যায়। আদর করে মিষ্টি খাওয়ালো। আপেল খাওয়াওলা। সাথীকেও প্লেটে করে সামনে দিলো মিষ্টি-আপেল। শায়লাকে ওর মায়ের পছন্দ হয়েছে বেশ। তারপর সাথে নিয়ে এ ঘর ও ঘর করে। টয়কে বলে, ঘরে চাঁদ এনেছিস, বাজারে যা এবার। আজ অনেক দিন পর ভালো খাবার হবে। শায়লা সাথী তোমরা কিন্তু না খেযে যাবে না। শায়লা একবার টয়ের দিকে তাকায় টয়ও তাকায় শায়লার দিকে।