ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) হলের শিক্ষার্থীদের মিটিংয়ে ছাত্র আন্দোলন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের কর্তৃক দুইজনকে মারধর করে ক্যাম্পাস ছাড়া করার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলে এ ঘটনা ঘটে। ওই দুই শিক্ষার্থী হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আহসানুল্লাহ অলি এবং ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নাফিজ ইকবাল।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা হলের মধ্যে গ্রুপিং করে আন্দোলনকে বিতর্কিত করা ও নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছিল। এছাড়া পূর্বে তারা ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানায়, রবিবার সকালে হলের গণরুম বাতিল ঘোষণা করে ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় হয় প্রশাসন। এ নিয়ে অনাবাসিক ও আগে গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীদের নিয়ে টিভি কক্ষে মিটিং ডাকে অলি। সেখানে বিভিন্ন জন তাদের মত প্রকাশ করে। তবে অলি তার বক্তব্য দিতে গেলে আন্দোলন নিয়ে নেতিবাচক নানা মন্তব্য করে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই ও আগস্টের পুরো সময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। কিন্তু অলি তার বক্তব্যে দাবি করে ১৭ জুলাই হল বন্ধের পর ক্যাম্পাসে তেমন কোন আন্দোলনই হয়নি। এছাড়া আন্দোলনকারী ও সমন্বয়কদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর নানা মন্তব্য করে। এতে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হলে হট্টগোল ও বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে অলিকে মারধর করে ধাওয়া দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এতে সে দৌঁড়ে ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যায়। পরে তার বিভাগের জুনিয়র নাফিজ অলির পক্ষ নিলে শিক্ষার্থীরা তাকেও ধাওয়া দেয় এবং সেও ক্যাম্পাসের বাইরে চলে যায়। পরে সমন্বয়ক প্যানেলের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে কথা বলে শিক্ষার্থীদের শান্ত করে।
হলের শিক্ষার্থীদের দাবি, অলি আগেও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। তবুও হলে বৈধ সিট আছে দাবি করায় সে হলে থাকছে। কিন্তু সে হলে উঠার পর থেকেই সে আন্দোলনকারীদের বিভক্ত করা ও সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে। মিটিং ডেকে সেখানে আন্দোলন নিয়ে যে মন্তব্য করা হয়েছে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের আঘাত করেছে। সে আন্দোলনকে ছোট ও বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে। যা কোনভাবেই মানা যায় না। আন্দোলনে সামনে থাকা শিক্ষার্থীদের হেয় করে সে আন্দোলকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে।
এবিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, ‘অলি নামের একজন যে আগে ছাত্রলীগকর্মী ছিল, সে শিক্ষার্থীদের সামনে আন্দোলন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে। ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে মন্তব্যের প্রেক্ষিতে হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সে হল ছেড়ে পালিয়ে যায়।’
লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, ‘গণরুমে র্যাগিংসহ বিভিন্ন ধরণের ঘটনার কারণে আমাদের আগে থেকেই চিন্তা ছিল গণরুম বাতিলের। আমরা নোটিশ দিয়ে গণরুম বাতিল করেছি। আগামীতে আবাসিকতার বাইরে কেউ যেন হলে না থাকে সেজন্যই এটি করা। এ নিয়ে আমার কাছে কেউ কোন কথা বলেনি। এছাড়া রাতে ছাত্রদের মধ্যেও একটি ঘটনা ঘটেছে শুনেছি। এটি নিয়েও কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
আজকালের খবর/ এমকে