লাউ স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। শরীর ঠান্ডা রাখা থেকে শুরু করে ওজন কমানোসহ
নানা স্বাস্থ্যগুণ আছে এই সবজিতে। লাউ দিয়ে চিংড়ি কিংবা ইলিশ মাছের ঝোল সবারই মন কাড়ে।
পুষ্টিবিদরাও সুস্থ থাকতে সবাইকে লাউ খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ এই সবজিতে একসঙ্গে মেলে ভিটামিন, পটাশিয়াম, আয়রনের মতো উপাদান। যা অন্য কোনো সবজিকে একসঙ্গে মেলে না।
একটি লাউয়ে ৯২ শতাংশ পর্যন্ত পানি থাকে। যা শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখে। দেশ-বিদেশের সেলিব্রিটি থেকে শুরু করে অনেক স্বাস্থ্য সচেতনরা শুধু রান্নাতেই নয়, উচ্চ রক্তচাপ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে লাউয়ের রসও পান করেন।
তবে পুষ্টিবিদরা বলছেন, কাঁচা লাউয়ের রস পান না করে লাউয়ের বিভিন্ন পদ খেলেই থাকবেন সুস্থ। কারণ কাঁচা লাউয়ের রসের স্বাদ যদি তেঁতো হয় তাহলে তা পেটের সমস্যার কারণ হতে পারে।
লিভার ও কিডনি ভালো রাখে
বয়সজনিত কারণে ধীরে ধীরে লিভার তার কার্যক্ষমতা হারাতে থাকে। ফলে হজমের সমস্যা বাড়ে। যারা এ সমস্যায় ভুগছেন নিয়মিত লাউ খান। হজমের ওষুধের চেয়ে লাউ ভালো কাজ করে। লাউয়ে থাকা পটাশিয়াম কিডনির স্বাস্থ্যও ভালো রাখে।
শরীর ঠান্ডা থাকে
লাউ শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এর কারণ হলো এতে ৯২ শতাংশ পানি থাকে। যা শরীরে শীতল প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে গরমে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে লাউ। যেহেতু গরমে প্রচুর ঘাম হয়, তাই ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি থাকে। তবে নিয়মিত লাউ শরীরের আর্দ্রতা বজায় থাকে, ফলে পানির ঘাটতি হয় না।
‘ব্যাক টু নেচার উইথ আয়ুর্বেদ’ নামক বইয়ে আশা দেবী পরামর্শ দিয়েছেন, লাউয়ের রস নাক থেকে রক্ত পড়া, ব্রণ বা আলসারের মতো তাপ সম্পর্কিত যে কোনো রোগের জন্য একটি দুর্দান্ত প্রতিকার।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
লাউ ওজন কমাতেও সাহায্য করে। বলিউডের অনেক তারকা কাঁচা লাউয়ের জুস নিয়মিত পান করেন ফিট থাকতে। লাউয়ের রস ফাইবার দ্বারা পরিপূর্ণ যা দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরা রাখে, আবার এটি ক্যালোরিতেও কম। ‘২৫ ফ্যাট বার্নিং জুস রেসিপি’ নামক বইয়ে আশা থোরাট ব্যাখ্যা করেছেন, আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে লাউয়ের রস ওজন কমানোর ক্ষেত্রে দারুন কার্যকরী।
তিনি বইতে লিখেছেন, ‘ফাইবার হলো ওজন কমানোর চাবিকাঠি। লাউয়ে কম ক্যালোরি থাকে যার মধ্যে ফ্যাট নেই। এতে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, আয়রন, ফোলেট, পটাসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজের মতো প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ আছে।’
পেটের সমস্যা সারায়
নিয়মিত লাউ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও সারে। আবার ডায়রিয়ারও চিকিৎসা করে। লাউয়ে থাকা পানি ও ফাইবার হজম ট্র্যাক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে ও সহজে মলত্যাগের অনুমতি দেয়।
ডায়রিয়ার চিকিত্সার জন্য, লাউয়ের রসের সঙ্গে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে পান করুন। এই রস শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আয়ুর্বেদ অনুসারে, লাউয়ের রস হজমের জন্য দুর্দান্ত।
হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে লাউয়ের রস পান করলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। ফলে হৃদযন্ত্রও সুস্থ থাকে।
মূত্রনালির সংক্রমণ সারে
লাউয়ের রসের সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে মূত্রনালির সংক্রমণ সারে। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার।
চাপ কমায়
লাউয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে কোলিন। এটি এক ধরণের নিউরোট্রান্সমিটার যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। এমনকি স্ট্রেস , বিষণ্নতা ও অন্যান্য মানসিক ব্যাধি প্রতিরোধে সহায়তা করে।
পোস্ট ওয়ার্কআউট পানীয়
লাউয়ের রস একটি প্রাকৃতিক পানীয়। এতে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে যা গ্লুকোজের মাত্রা পুনরুদ্ধার করতে ও ব্যায়ামের সময় হারিয়ে যাওয়া কার্বোহাইড্রেট প্রতিস্থাপন করতে সহায়তা করে। প্রোটিন ও অন্যান্য পুষ্টিগুণে ভরপুর হওয়ায় লাউয়ের রস পেশিরর কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
আজকালের খবর/ এমকে