মো. আলী হোসেন খান, জগন্নাথপুর
সুনামগঞ্জ জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মানের দিক থেকে সেরা হয়েছে । স্বাস্থ্যসেবার মান, সেবা গ্রহণকারীদের সন্তুষ্টিসহ নানা দিক বিবেচনা করে সারাদেশের ৪৯২ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে ৪৮ তম হয়েছে ও জেলার মধ্যে প্রথম শ্রেষ্ঠত্বের কথা ঘোষণা করা হয়।
গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারী, মার্চের DGHS এর website এ প্রতি মাসের কাজের স্কোর অনুযায়ীএই রাঙ্কিং প্রাক্কালে এ ধরনের খবর জগন্নাথপুরকে আশ্বস্ত করেছে, আনন্দিত করেছে। সরকারি হাসপাতালের সেবা নিয়ে যারা হতাশ কিংবা যাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আছে, তারা এবার এই হাসপাতাল নিয়ে আশাবাদী হবেন।
৬০ বছর ধরে স্বাস্থ্যসেবার জন্য জগন্নাথপুর লক্ষ মানুষের প্রধান ভরসা জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। হাসপাতালের ৫০ শয্যাসংখ্যা হলেও একশত এর বেশি রোগী ভর্তি থাকে। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে সেবা নিচ্ছেন প্রতিদিন শতশত রোগী।
জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ নিরলসভাবে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শারমিন আরা আশার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য সেবার মান আরো উন্নত হয়েছে। জনগনের দোরগোরায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জগন্নাথপুর উপজেলায় স্বাস্থ্য সেবার মান পর্যায়ক্রমে উন্নতি হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৪/৭ নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে এবং গাইনী কনসালটেন্ট দ্বারা সিজার হচ্ছে। বিগত বছর গুলোতে হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে ৫০-৫৫টা নরমাল ডেলিভারি হতো তা বর্তমানে বেড়ে প্রতি মাসে গড়ে ৭০-৭৫টা হচ্ছে। বিগত বছরে যেখানে প্রতি মাসে সিজারিয়ান অপারেশন হতো ৩-৪টা, বর্তমানে তা ৭-৮টা তে উন্নীত হয়েছে।
বিগত বছরে বহিঃ বিভাগে প্রতিদিন রোগী দেখা হতো ২২০-২৫০ জন কিন্তু বর্তমানে প্রেক্ষাপটে দৈনিক রোগী সেবা পাচ্ছে গড়ে ৩০০-৩৫০জন। ২০২৩ সালে অন্ত বিভাগে প্রতি মাসে ভর্তি রোগীর সংখ্যার তুলনায় ২০২৪সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
পূর্বে মাইনর সার্জারী হতো মাসে ৩০০-৩৫০টি। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৪৫০-৪৮০টি। মেজর সার্জারী হচ্ছে বিশেষজ্ঞ সার্জনদের তত্ত্বাবধানে। এছাড়াও শিশু বিশেষজ্ঞ দ্বারা শিশুদের সঠিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ফলে শিশুদের জটিল কোন রোগের লক্ষণ দেখা দিলে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে।
অত্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃবিভাগে সরকার কর্তৃক প্রাপ্ত ঔষধ বিনামূল্যে সেবা গ্রহীতাদের দেয়া হয়। এছাড়াও এনসিডি কর্ণারে ডায়াবেটিস এবং উক্ত রক্তচাপের ৮ ধরনের ঔষধ নিয়মিত দেয়া হচ্ছে। আই সেন্টারে প্রশিক্ষিত সিনিয়র স্টাফ নার্স এবং এম.এ.জি ওসমানী হাসপাতালের চক্ষু কনসালটেন্ট এর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেবা দেয়া হচ্ছে। যা ২০২৩ সালে ৭৩৫জন ছিল এবং চলতি বছরে আগস্ট পর্যন্ত হয়েছে ২৪৭৩জনে।
এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকার নির্ধারিত মূল্যে প্যাথলজী, USG, ECGসহ মোট ৩৬ ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা হচ্ছে।
জগন্নাথপুর উপজেলার আওতায় পূর্বে ২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক ছিলো। কিন্তু সম্প্রতি আরও ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে ফলে মোট ২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক হয়েছে। নবনির্মিত কমিউনিটি ক্লিনিক এর জন্যে ইতোমধ্যে জনবলের চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে। এই কমিউনিটি ক্লিনিক এর সেবা প্রদানের কাজ শুরু হয়ে গেলে জনগন মোট ২৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে সেবা পাবে।
উপজেলাতে মোট ৫টি USC এবং মোট৩টি FWC টি রয়েছে। যার মধ্যে পূর্বে ৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মোট ৫টি সেন্টারে নরমাল ডেলিভারি হতো। কিন্তু বর্তমানে মোট ৮টি সেন্টারে ২৪/৭ নরমাল ডেলিভারি হচ্ছে। যার ফলে গর্ভবর্তী মায়েরা সঠিক সময়ে ডেলিভারি করাতে অনেকক্ষেত্রে সক্ষম হয়। উল্লেখ্য যে, ২০২৩ সালে উক্ত সেন্টারগুলোতে মোট ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছিল ১১৬টি। কিন্তু চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ডেলিভারি হয়েছে মোট ২৩৬টি।
এছাড়াও মাঠ পর্যায়ে এবং অফিসিয়াল কাজের গতি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ২০২৪সালের মে মাসে ২০জন স্বাস্থ্য সহকারীও ৩জন অফিসে নিয়োগ দেয়া হয়।
মাঠ পর্যায়ে ২০জন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ দেয়ার ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা এবং ইপিআই কার্যক্রম সহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের সূচকে সারা বাংলাদেশের মধ্যে জগন্নাথপুর উপজেলার সর্বোচ্চ অবস্থান ছিলো ২৪৬তম।
এদিকে শয্যাসংখ্যার অতিরিক্ত রোগীর কারণে মেঝেতে, বারান্দায়, আসন পাতা থাকে। সেখানে রোগী এবং তাদের অভিভাবক সব মিলিয়ে জগন্নাথপুর হাসপাতালের সুবিশাল অবকাঠামোটিতে যে প্রতিবেশ তৈরি হয়ে আছে, তাতে সব রোগীর প্রতি সমানভাবে দৃষ্টি রাখা সংশ্লিষ্টদের কঠিন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি হাসপাতালের বিশাল অবকাঠামোটি পরিচ্ছন্ন রাখা এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রাখাও চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। কিন্তু সেবাগ্রহীতা হিসেবে আমরা এ কথা নিশ্চিত বলতে পারি যে জগন্নাথপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এর আঙিনা এবং ভেতরে, বাইরে পরিচ্ছন্ন রাখার যুদ্ধটি নিয়মিত করেই যাচ্ছে। হাসপাতালটি বর্তমানে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক পরিচ্ছন্ন।কিছু কিছু চিকিৎসা যা বেসরকারি হাসপাতালে খুবই ব্যয়বহুল, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের নাগালের বাইরে থাকে, সেসব চিকিৎসা জগন্নাথপুর হাসপাতালে পাওয়া যায়। ডায়াবেটিস,থাইরয়েড, বিভিন্ন হরমোন জনিত রোগ,শ্বাসকষ্ট ,টিবি রোগীর চিকিৎসা ও শিশুদের জন্মগত জটিলতা, খিচুনিসহ অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয় জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
বর্তমানে ২০২৪ সালের জুন মাসে ৪৮ তম হয়েছে। এবং সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যে প্রথম অবস্থানে এবং সিলেট বিভাগে ৩য়।
জগন্নাথপুর স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ নিরলস পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা দ্বারা স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের জন্য দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। এই লক্ষ্যে সর্বস্তরের জনসাধারনের সার্বিক সহায়তা চেয়েছেন জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শারমিন আরা আশা।
আজকালের খবর/বিএস