সোমবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীর তালিকায় সামিটের আজিজ খান
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:০৩ PM
দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুরে শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশের সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান।  

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ফোর্বস প্রকাশিত ২০২৪ সালের ধনকুবের (বিলিয়নিয়ার) তালিকায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

ফোর্বস জানিয়েছে, বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সারিতেই আছেন মুহাম্মদ আজিজ খান। বর্তমানে সিঙ্গাপুরের ৪১তম শীর্ষ ধনী তিনি। আগের বছর (২০২৩) সে দেশের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় ৪২ নম্বরে ছিলেন। 

গত ২ এপ্রিল প্রকাশিত ফোর্বসে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের (বিলিয়নিয়ার) তালিকায় ৭৮টি দেশের ২ হাজার ৭৮১ জন রয়েছেন। তাদের নাম এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।   

উল্লেখিত সেই তালিকায় আজিজ খান রয়েছেন ২ হাজার ৫৪৫ নম্বরে। তার মোট সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার। জ্বালানি খাত থেকেই তিনি এ বিপুল সম্পদ আয় করেছেন বলে জানানো হয়েছে সেখানে।  

ফোর্বস বলছে, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়া আজিজ খান এখন সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা। বাংলাদেশের একটি শীর্ষ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের কর্ণধার ৬৮ বছর বয়সী আজিজ খান। সামিট গ্রুপ বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিকস, আবাসন ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস নিয়ে কাজ করে। আজিজ খান সিঙ্গাপুরের ৪১তম ধনী।  

ফোর্বসের সর্বশেষ তালিকায় ২৩৩ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ নিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছেন ফ্রান্সের ধনকুবের বার্নার্ড আর্নল্ট। ১৯৫ বিলিয়ন ডলার নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ইলন মাস্ক এবং ১৯৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন জেফ বেজোস। এ ছাড়া ফেসবুকের মালিক মার্ক জাকারবার্গ ১৭৭ বিলিয়ন ডলার নিয়ে রয়েছেন চতুর্থ স্থানে। ফোর্বসের তালিকায় দীর্ঘসময় প্রথম অবস্থান ধরে রেখে ছিলেন বিল গেটস। তার অবস্থান এখন সপ্তমে। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ১২৮ বিলিয়ন ডলার।  

ফোর্বস জানায়, শীর্ষ ধনীর তালিকায় মার্কিনিদের পর সবচেয়ে বেশি আছেন চীনারা, হংকংসহ চীনের মূল ভূখণ্ডের ধনীদের মধ্যে বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ৪৭৩ জন। বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যার ভিত্তিতে দেশ হিসেবে তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে ভারত।  

এদিকে শীর্ষ ধনীর তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশের সামিট গ্রুপের আজিজ খান অর্থ পাচারসংক্রান্ত দুর্নীতিতে অভিযুক্ত। ২০১৬ সালে পানামা পেপারসে নাম উঠে তার।  

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করলেও সরকারি পর্যায়ে প্রভাব এবং আইনি জটিলতায় আজও অনুসন্ধান শেষ হয়নি।

বাংলাদেশে সামিট গ্রুপের দুর্নীতি-

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) দপ্তরের অভিযোগ, আজিজ খান বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে অর্জিত প্রায় সব টাকা পাচার করেছেন সিঙ্গাপুরে।  

মাত্র দুই মাস আগেই বিটিআরসি থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল সামিট কমিউনিকেশনস কোনো ফি ছাড়াই তার শেয়ার হস্তান্তর করতে পারবে। তবে আকস্মিকভাবেই সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে যায় সংস্থাটি।  

অভিযোগ উঠেছে, সামিট কমিউনিকেশন নতুন শেয়ার ইস্যুর আড়ালে শেয়ার হস্তান্তর ও বিক্রি করছিল।  

সামিট কমিউনিকেশন ২০০৯ সালে আত্মপ্রকাশের পর টেলিকম ও ইন্টারনেট সেক্টরের বৃহত্তম কোম্পানিতে পরিণত হয়। প্রতিষ্ঠানটি মার্চের শেষের দিকে আবুধাবি ও মরিশাসভিত্তিক দুটি পৃথক কোম্পানির কাছে ১৭০ কোটি ৫ লাখ টাকা মূল্যের নতুন শেয়ার ইস্যু করার জন্য বিটিআরসির অনুমোদন চায়। আবেদন অনুসারে প্রতিটি ১২ টাকা দরে মোট ১৪ দশমিক ২০ কোটি নতুন শেয়ার ইস্যু করা হবে। এর এক মাস পর এটির প্রাক-অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পরের মাসেই সরকারি অনুমোদন আসে। এরপর চলতি বছরের ১২ জুন বিটিআরসি কোম্পানিটিকে কোনো চার্জ ছাড়াই শেয়ার ট্রান্সফারের অনুমতি দেয়। সরকারি অনুমোদনের জন্য পাঠানোর আগে বিটিআরসি আইন সংস্থার আইনি মতামত চেয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল- যেহেতু সামিট কেবল নতুন শেয়ার ইস্যু করছে, তাই মোট শেয়ার বিক্রয়মূল্যের ওপর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ফি প্রদানের যে নিয়ম রয়েছে তা সামিট কমিউনিকেশনের জন্য প্রযোজ্য হবে না।  

এ ক্ষেত্রে সামিটও একই কথা উল্লেখ করে ‘এই ফি প্রযোজ্য নয়, কারণ কম্পানিটি নতুন শেয়ার ইস্যু করে তার মূলধন বাড়াচ্ছে। 

তবে বিটিআরসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বিটিআরসির আইনি ও লাইসেন্সিং বিভাগ শুরু থেকেই চার্জগুলো কোম্পানিটির ওপরই চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। কারণ সামিট আসলে নতুন শেয়ার ইস্যু করার আড়ালে শেয়ার হস্তান্তর ও বিক্রি করছিল।

কিন্তু সামিট কমিউনিকেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফরিদ খান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও তৎকালীন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খানের ছোট ভাই। ফরিদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়েরও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ফলে সামিট বিশেষ সুবিধা পাচ্ছিল বলে অভিযোগও করেন তারা।  

এ অবস্থায় গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে বিটিআরসি আইন সংস্থাকে আবার চিঠি দেয় এবং বলে যে তাদের আইনি মতামত শুধু উপদেশমূলক এবং বাধ্যতামূলক নয়। এরপর গত ১৫ আগস্ট সামিট কমিউনিকেশনকে তাদের শেয়ার হস্তান্তরের ফি না দেওয়ার সিদ্ধান্তটি পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে চিঠি পাঠায় বিটিআরসি।

সামিট কমিউনিকেশনের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, সামিট কমিউনিকেশনস বিটিআরসির দেওয়া ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিকে ১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা জমা দিয়েছে। 

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যশনালের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সামিট কমিউনিকেশনের এই অর্থ নয়ছয় করার চেষ্টা এবং পরে অর্থ প্রদান করা, সামিট গ্রুপের ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ। ফলে এই অর্থ প্রদানকে সামনে রেখে যেন সামিটের ক্ষমতার অপব্যবহারে অন্যদিকে আর্থিক অনিয়ম রয়েছে তা ঢাকা না পড়ে। সঙ্গে এই অর্থ আদায় একটি উদাহরণ যে, সরকার চাইলে তার ক্ষমতার সুষ্ঠু ব্যবহার করে বিগত দীর্ঘ সময়ে হওয়া আর্থিক অনিয়ম থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারে। 

আজকালের খবর/বিএস 








http://www.ajkalerkhobor.net/ad/1724840661.gif
সর্বশেষ সংবাদ
প্রধান উপদেষ্টার সেনাসদর পরিদর্শন
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ
সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর গ্রেফতার
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও মামলা স্বাধীন মত প্রকাশের অন্তরায়: এলআরএফ
সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী গ্রেফতার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
নেতাকর্মীদের জরুরি নির্দেশনা দিলো আওয়ামী লীগ
সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গ্রেফতার
সাংবাদিক ঊর্মি রহমান মারা গেছেন
জমজমাট নান্দাইলে আমন ধানের চারা হাট
পদ্মা সেতুতে নিয়ে টুস করে ফেলে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনার নামে মামলা
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft