শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ছাত্র আন্দোলন এবং বিপ্লবী হয়ে উঠা
কাজী খাদিজা আক্তার
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৪, ৬:৩২ PM
২০২৪ সালের সাধারণ ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী  আন্দোলন পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া এবং এই আন্দোলন গণআন্দোলনে  রূপ নিয়ে এক দফা দাবির মাধ্যমে সরকারের পতন এবং বিজয়ের পর অন্তর্র্বীকালীন সরকারের দায়িত্বপালনের জন্য আন্দোলনের দুই সমন্বয়কের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ, এই যে স্ক্রিপ্ট বিহীন এতোবড়ো এক সাহসী ইতিহাস গড়ে তোলা তা কেবল আমরা সাধারণ জনতা সিনেমাতেই উপভোগ করেছি। দেশের কোটি কোটি মানুষের চোখে মুখে বিস্ময়। এ এক নতুন ইতিহাস, নতুন বাংলাদেশ, অবাক পৃথিবী।

ইতিহাসে প্রথম ছাত্র আন্দোলন হয় ১৬০ খ্রিস্টাব্দে চীনে। সেখানে ইমপেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তখন সরকারের কয়েকটি নীতির প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন এবং তাদের আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন কিছু গরিব মেধাবী শিক্ষার্থী। আন্দোলন ব্যাপক সারা ফেললেও সরকার এই আন্দোলন কঠোর হস্তে দমন করে। ৩০ হাজার মানুষের এই ছাত্র আন্দোলনকে দমিয়ে দিয়ে ১৭২ জন শিক্ষার্থীকে কারগারে বন্দী করে অমানুষিক নির্যাতন চালায় সরকার। যুগে যুগে এমন  অনেক ছাত্র আন্দোলন স্থান পেয়েছে ইতিহাসের পাতায়। কখনো সফল, কখনো বিফল হলেও সামনের পথ প্রসারিত করে দিয়েছে ভবিষ্যৎ ছাত্র জনতার জন্য। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্ররা যুগে যুগে অত্যাচার, অবিচার, অসমতার বিরুদ্ধে এবং অধিকারের পক্ষে আন্দোলন করেছে। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, ২০১৮-এর কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং ’২৪-এর বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলন।

তবে আমাদের বর্তমান ছাত্র আন্দোলনের বিজয় দেখিয়ে দিয়েছে কীভাবে একতাবদ্ধ হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে হয়। বিপ্লবী হয়ে উঠতে হয়। ২০২৪ সালের ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সংগঠনটি সৃষ্টি হয়। কোটা সংস্কারের এই আন্দোলন পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয় এবং প্রায়  সকল শ্রেণির মানুষ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য রাজপথে নেমে আসে।  গত ১৬ জুলাই আবু সাঈদ এর সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শহীদ হওয়ার পর আন্দোলনের দানা বাঁধে বাংলাদেশের প্রায়  প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র জনতার মধ্যে।  আরো বেশি বিস্ফোরিত হয়। ধীরে ধীরে আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয়। আর যেখানে দেশের সর্বোচ্চসংখ্যক জনতা এক হয় সেখানে ন্যায়সংগত কারণে জনতাই সঠিক এবং বিজয়ী বলে সাব্যস্ত হয়।

এই আন্দোলনকে বিপ্লব বলেও অবহিত করা যায়। কারণ বিপ্লবের মাধ্যমেই আমূল পরিবর্তন হয়। এরিস্টটল দুই ধরনের রাজনৈতিক বিপ্লবের কথা বলেছেন। প্রথমটি এক সংবিধান থেকে অন্য সংবিধানে পূর্ণাঙ্গ পরিবর্তন। দ্বিতীয়টি একটি বিরাজমান সংবিধানের সংস্কার। ছাত্রদের এই আন্দোলনে মূলত দেশ সংস্কারের প্রতিজ্ঞাই প্রস্ফুটিত হয়। তাই বিপ্লব ঘটেছে  রাজপথে, বিপ্লব ছড়িয়েছে  সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিপ্লব দেখেছি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের চোখে মুখে। বিপ্লবী হয়েছে কোটি প্রবাসী বাঙালি।

সরদার ফজলুল করিম তার ‘এরিস্টটল-এর পলিটিক্স’ বইটিতে বিপ্লব কখন এবং কেন হয় তার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘যারা সমতার জন্য উদগ্রীব তারা যদি বিশ্বাস করে যে, তারা যদিও অধিকতর যারা পাচ্ছে তাদের সমান তথাপি তারা কম পাচ্ছে তবে তারা বিপ্লবের সূত্রপাত ঘটায়  ক্ষমতায় যারা অধিষ্ঠিত তারা যখন নির্দয় এবং অত্যাচারী হয়ে উঠে এবং যখন তারা নিজেরা মুনাফা অর্জন করতে থাকে তখন তারা যেমন পরস্পরের বিরুদ্ধে আঘাত করে, তেমনি যে শাসনব্যবস্থা তাদের ক্ষমতার উৎস তার বিরুদ্ধেও তারা আঘাত হানে। এরপর আসছে অত্যধিক ক্ষমতার কথা। এক বা একাধিক ব্যক্তি একেবারে অনুপাতহীনভাবে কিংবা নাগরিক সংস্থার সংগে বিষমভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে থাকে তখন এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘৃণামূলক মনোভাবের কারণেও বিপ্লব গৃহযুদ্ধ সংগঠিত হতে পারে।’ এই কারণগুলোর মূলত সবগুলো কারণই বর্তমান আন্দোলনের কারণ। তাই এই আন্দোলনের প্রতিটি ব্যক্তিই ছিলেন যে যার অবস্থানে বিপ্লবী।

সমাজে প্রায় সকল উচ্চশ্রেণিরাই যুগে যুগে লাভবান তাই আন্দোলনটা সবসময় মধ্যবিত্ত এবং নিম্নশ্রণি থেকেই জন্ম নেয়। বর্তমান ছাত্র আন্দোলন সাহস দেখিয়েছে কোটি কোটি মানুষকে। আন্দোলনের প্রথম দিকে সাধারণ জনতা সরকারের বিরুদ্ধে সমর্থন নিতে ভয় পেলেও একসময় দেশের অনেক শ্রেণি-পেশার, ছয় সাত বছরের বাচ্চা, বৃদ্ধ সকলেই এই আন্দোলনে মত প্রকাশ করে এবং অনেকেই রাজপথে নেমে আসেন। ইতিহাসজুড়ে বিপ্লব ঘটেছে অনেক যার ফলে পরিবর্তন এসেছে সংস্কৃতি অর্থনীতি এবং সামাজিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সমূহে। প্রথমে বর্তমান ছাত্র আন্দোলন বা ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হলেও পরবর্তীতে সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের দিকে ধাবিত হয়। তাই এই আন্দোলন ছিল এবং থাকবে। সরকারের নীতি বা সামাজিক মূল্যবোধ পরিবর্তনের জন্য একদল মানুষের এটি হলো সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায় এখনও ছাত্রদের মধ্যে। যেমন রাষ্ট্র পরিচালনায় তেমনি ট্র্যাফিক সামলাতে,  পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায়, দেয়ালে দেয়ালে ফুটে উঠছে দেশপ্রেম, বিদ্রোহ, আন্দোলন, ভালোবাসা, অসাম্প্রদায়িকতা। এই প্রজন্ম যেন এমনই থাকে, অস্তিত্বের মিছিলে এরা যেন অগ্রগামী তারুণ্য,  এরা নির্ভীক পথপ্রদর্শক কোটি কোটি বাঙালির।

লেখক : শিক্ষক ও কলামিস্ট।

আজকালের খবর/আরইউ








http://www.ajkalerkhobor.net/ad/1724840661.gif
সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকা ওয়াসার এমডি হলেন ফজলুর রহমান
১ অক্টোবর থেকে বিমানবন্দর এলাকা হর্নমুক্ত ঘোষণা
বিএসএমএমইউ শিক্ষক নিপুণ গ্রেপ্তার
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গ্রেপ্তার
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগে শরিক হতে প্রস্তুত বিশ্বব্যাংক
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, ঘুরতে দেখা গেছে লোদি গার্ডেনে
যুবককে পিটিয়ে হত্যা: ঢাবির ৫ শিক্ষার্থী আটক
ঢাবির হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনি, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির মৃত্যু
সেনাবাহিনীকে সব জায়গায় ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া ঠিক হবে না: ফখরুল
আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৬ জনের মৃত্যু: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft