প্রকাশ: সোমবার, ১২ আগস্ট, ২০২৪, ৭:৪৪ PM
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকি, সবার জন্য মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি, আমাদের বিজয় অবশ্যই হবে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের অর্জনকে অনেকদূর নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করার পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, এতদিন ক্ষমতা কুক্ষিগত ছিল। এখন স্বাধীনতা উপভোগ করুন। এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট সরকার দেশের সবার সরকার। এখানে সবার আকাক্সক্ষা পূরণের অধিকার থাকবে। এখন যে-ই অরাজকতার বিষবাষ্প ছড়াবে, বিজয়ী ছাত্র-জনতাসহ মুক্ত মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা রুখে দেবে। নিশ্চয়ই স্বৈরাচারী সরকার দূর হয়ে গেছে। নতুন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে গণতন্ত্রের, সুবিচারের, মানবাধিকারের, নির্ভয়ে মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের এ লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করুন। সারা বিশ^ আজ অবাক হয়ে বলছে, ‘শাবাশ বাংলাদেশ। শাবাশ বাংলাদেশের ছাত্র জনতা।’ আমরা এই অর্জনটাকে অনেকদূর নিয়ে যেতে চাই। ছাত্র-জনতার জন্য কিছুই অসম্ভব না। আমাদের দেশের তরুণরা অসম্ভবকে সম্ভব করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকি, সবার জন্য মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারিÑ আমাদের বিজয় অবশ্যই হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। ছাত্র-জনতাকে যারা হত্যা করেছে, আইনানুগ বিচারের মাধ্যমে শিগগিরই তাদের শাস্তি প্রদান করা হবে। একই কথা দেশের সব মন্ত্রণালয়ের, সংস্থার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানা কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য হবে। বিশ^ব্যাপী আলোচিত এই ব্যক্তি আরো বলেন, সর্বত্র অপরাধের বিচার হবে। আজ প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ও তার সদস্যরা নিজ নিজ কর্তব্য পালন করার মাধ্যমে দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে উপভোগ করবেন। দেশকে গৌরবের শীর্ষে নিয়ে যাবেন। দেশবাসী ও জগৎবাসীকে উপভোগ করার সুযোগ করে দেওয়া হবে। জাতির পক্ষ থেকে সকলে নির্ভয়ে আনন্দচিত্তে নিজ নিজ কর্মস্থলে নিজ নিজ সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করছি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব নিয়েছে। নতুন সরকারকে আমরা স্বাগত জানাই। সহিংস গণ-আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর দেশ কার্যত সরকারবিহীন হয়ে পড়ে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে সেই শূন্যতা পূরণ হয়েছে। একই সঙ্গে দেশ এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেল। বাংলাদেশের এক ক্রান্তিকালে দায়িত্ব নেওয়া নতুন সরকারকে নিঃসন্দেহে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। দীর্ঘ স্বৈরশাসনে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে অকার্যকর হয়েছে, সেগুলোকে সংস্কার করে কার্যকর করার কাজটি সহজ নয়। তা ছাড়া এই সরকারের কাছে সব মহলের প্রত্যাশাও থাকবে অনেক বেশি। যথাযথ পরিকল্পনা ও প্রাধান্য ঠিক করে তারা সেই কাজগুলো নিশ্চয় করবেন। কিন্তু এই মুহূর্তে সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া এবং পুলিশ ও প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় ফিরে তার প্রথম প্রতিক্রিয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা তার প্রথম কাজ বলে উল্লেখ করেছেন। কারো ওপর কোনো হামলা না করার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে, এ কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ধর্ম-গোত্র রক্ষা করা আমাদের কাজ। প্রতিটি মানুষ আমাদের ভাই। বিশৃঙ্খলা অগ্রগতির বড় শত্রু।’ প্রধান উপদেষ্টা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, সেটা যথার্থ বলে মনে করি। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে না আনতে পারলে সরকারের কোনো পদক্ষেপই ফলপ্রসূ হবে না। একই সঙ্গে দল-মত নির্বিশেষে জনগণ ও সব রাজনৈতিক নেতৃত্বের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে সরকারকে কাজ করে যেতে হবে। দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার কাজটিও একই সঙ্গে শুরু করতে হবে।
রাজনৈতিক সরকারগুলোর মধ্যে একধরনের প্রবণতা দেখা যায়, ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু দলীয়করণ করা হয়। দেখা যাচ্ছে শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আসীন অনুগত কর্মকর্তাদের অনেকেই বিদায় নিয়েছেন। অনেকে বিদায়ের অপেক্ষায় আছেন। এই পদগুলোতে যেন মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই কিছু নিয়োগ ও পরিবর্তন হয়েছে, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সব ক্ষেত্রেই নির্দলীয় লোকের অধিষ্ঠানই কাম্য। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশকে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার কাজে নতুন সরকার সফল হবে, এটাই প্রত্যাশিত। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে যে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসন ও তিন দফা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ক্ষোভ থেকেই ছাত্র ও জনতা গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে হাসিনা সরকারকে বিদায় করেছে। ফলে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। এতদিন যে স্বৈরতান্ত্রিক ধারায় দেশ চলে আসছিল, তার বদলে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার কাজটি অত্যন্ত কঠিন। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত নতুন অন্তর্বর্তী সরকার তাদের ওপর অর্পিত এই কঠিন দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরই বদলে গেছে বাংলাদেশের রাজনীতির নানা হিসাব-নিকাশ। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে দুর্নীতির মামলায় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার চলছিল ঢাকার একটি আদালতে। সেই বিচার শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতা ছাড়তে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। আর ড. ইউনূস বাংলাদেশের সেনাসমর্থিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নিযুক্ত হন। সামনের দিনগুলোয় দেশ চালাতে গিয়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী নতুন সরকারকে প্রধান তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। প্রথম চ্যালেঞ্জ- ড. ইউনূসের প্রথম কাজ হবে দেশে আবার শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। দেশের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার চেয়ে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। জুলাই মাসে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি হয়। আন্দোলনের মুখে কোটা সংস্কারের পক্ষে রায় দেন আদালত। তবে এত রক্তপাত ও বহু বছর ধরে চলা শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের হতাশাকে উসকে দিয়েছিল। তার বাসভবনে ভাঙচুর এবং পুলিশ স্টেশন ও আওয়ামী লীগ মন্ত্রীদের বাড়িতে হামলার ঘটনাগুলো প্রতিবাদকারীদের ক্ষোভেরই প্রতিফলন। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জÑ বাংলাদেশের রাজনীতির পুনর্গঠন করা হবে ড. ইউনূসের পরবর্তী কাজ। এ জন্য শুধু দ্রুত নতুন নির্বাচন দেওয়াই যথেষ্ট নয়। তাকে দেশের আদালত ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাব কমাতে হবে। একই সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত হওয়ার জন্য সময় ও সুযোগ দিতে হবে। তৃতীয় চ্যালেঞ্জÑ ড. ইউনূসের জন্য তৃতীয় বড় চ্যালেঞ্জ হলো একটি জটিল ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্র তৈরি করা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী দেশ ভারত এ পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে। গত এক দশকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় ভারত শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য, জ্বালানি ও সামরিক সম্পর্ক সম্প্রসারিত করেছে। নির্বাসনে যাওয়া শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে অনেক বাংলাদেশির মনে ভারত বিরোধিতা আরো বাড়বে। এ ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থান করা আনুমানিক ১০ হাজার ভারতীয় নাগরিক এবং এক কোটি ৪০ লাখ হিন্দু সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় সহায়তা করার জন্য চাপে রয়েছে দিল্লি। সামনের দিনগুলোতে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং যেকোনো উত্তরসূরি শেখ হাসিনার চেয়েও বেশি চীনের দিকে ঝুঁকতে পারেন- এমন আশঙ্কাই বেশি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলতে থাকা দুর্নীতির মামলায় গত ৫ আগস্ট রায় হওয়ার কথা ছিল এবং তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারত। তবে বিচারের বদলে তিনি এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পদে আসীন হয়েছেন। এরই মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারপতনের পর দেশের প্রশাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় ইউনূসকে কঠিন সময় পার করতে হবে এবং শক্ত হাতে দেশের হাল ধরতে হবে। বাংলাদেশে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করাটা ইউনূসের জন্য কঠিন হবে। কারণ, শেখ হাসিনার আকস্মিক দেশত্যাগের ফলে দেশে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তার দল আওয়ামী লীগ জনগণের কাছে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। অন্যদিকে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি বর্তমানে অসুস্থ ও শেখ হাসিনার আমলে তার দল বিএনপি একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ এখন চীন, ভারত এবং পশ্চিমাদের মধ্যে একটি ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেনাবাহিনীর সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবকে আশা জাগানিয়া বলে মনে করা হচ্ছে।
ছাত্রসমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রাথমিক জয় এসেছে ৫ আগস্ট। তবে সমন্বয়কদের বক্তব্যে স্পষ্ট স্বীকৃতি রয়েছে যে উপযুক্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন ও প্রচলিত ধারার রাজনীতির বাইরে গিয়ে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান নতুন করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। পাশাপাশি গতানুগতিক ধারায় দেশ পরিচালনার রাজনীতি পুনঃস্থাপনের উদ্যোগও লক্ষণীয়। এ প্রবণতা ইতিহাসে বহুবার দেখা গেছে। সাধারণ মানুষ যখন আত্মত্যাগের মাধ্যমে বিজয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে, সে সময় পক্ষে-বিপক্ষের কিছু শক্তিধর স্বার্থগোষ্ঠী দরকষাকষি ও সমঝোতা করে পুরোনো ধাঁচে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। সমাজে দ্রুত স্থিতি ফিরিয়ে আনার জন্য নির্দিষ্ট আন্দোলনের দ্রুত পরিসমাপ্তি টানার চাপ থাকে। সেই প্রক্রিয়ায় প্রথাগতভাবে যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল, তারা যেমন সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কারণে জড়িত থাকেন, তেমনি দেশি-বিদেশি নানা শক্তি বা স্বার্থ ভবিষ্যৎ রূপরেখাকে প্রভাবান্বিত করার জন্য সক্রিয় ভূমিকায় লিপ্ত হয়। নানা কারণে যাদের রক্তের বিনিময়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়েছে, তারা অন্তর্বর্তীকালীন প্রক্রিয়ায় পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখতে পারেন না অথবা সুকৌশলে তাদেরকে প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার প্রচেষ্টা থাকে। এই প্রক্রিয়ায় নতুন মোড়কে যে পুরোনো ধাঁচের ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়, তা থেকে জনতার অর্জন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। বাঙালির ইতিহাসে এবং পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা কয়েকবার ঘটেছে। সে কারণে সমঝোতা প্রক্রিয়া শুরুর আগে আন্দোলনের অগ্রজদের রাষ্ট্র বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে ন্যূনতম কিছু ‘মৌলিক’ পরিবর্তন চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বিজয়ী তরুণদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা। সামষ্টিকভাবে তার কার্যকর রূপ দিতে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে এবং নিহত ও যোদ্ধাদের অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য একটি দিন বেছে নিয়ে তাকে জাতীয় দিবসের মর্যাদা দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে উপযুক্ত সম্মাননার ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুন এক সোনালী সময়ের প্রত্যাশায় আমরা বুক বেঁধেছি। আগেও অনেকবার আশায় বুক বাঁধলেও বারবার আমাদের আশাহত হতে হয়েছে। এবার আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, তরুণ প্রজন্মের এই গৌরবময় বিজয় কোনোভাবেই ব্যর্থ হবে না। অতীতের মতো দিকভ্রান্ত, পথভ্রষ্ট হবে না রাষ্ট্র এবং সরকার।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক।
আজকালের খবর/আরইউ