শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ছাত্রদের আত্মদানে স্বৈরাচারমুক্ত হলো দেশ
মাজহারুল ইসলাম
প্রকাশ: শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪, ৮:৪৭ PM
মানুষের ভোটের অধিকার ও বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে অবৈধভাবেই ক্ষমতায় ছিল স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার। সম্প্রতি ছাত্ররা কোটা সংস্কার আন্দোলনে রাজপথে নামলে  সরকার তাদের দাবী না মেনে  আন্দোলনরত নিরীহ ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়ে বাংলাদেশকে রক্তাক্ত করে।  স্বৈরাচার ক্ষমতালোভী শেখ হাসিনা কতটা ভয়ংকর মনুষ্যত্বের অধিকারী ও বিবেকহীন হলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এমন বর্বর হত্যাকাণ্ড চালাতে পারে। পৃথিবীর কোন দেশে  এমন বর্বরোচিত ঘটনা ঘটেনি। যা বাংলাদেশে ঘটিয়েছে। যা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ছাত্রদের এই যৌক্তিক আন্দোলনের পক্ষে সংহতি প্রকাশ করেছিল। বিভিন্ন দেশের ছাত্ররা নিজ নিজ দেশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে। 

এই নির্মম হত্যাকাণ্ড অন্যায়-নির্যাতন বাংলাদেশের মানুষ মেনে নিতে পারেনি। দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের জাগ্রত বিবেক ফুঁসে উঠে। আর ছাত্রদের সঙ্গে তারা একাত্ম পোষণ করে। মানুষের আর্তনাদ কান্নায় আহাজারিতে  বাংলার আকাশ বাতাস ভারি হয় উঠেছিল। এই বৈষম্যবিরোধী  আন্দোলন  অসহযোগ আন্দোলনে পরিণত হয়ে উঠেছিল। সারা দেশে ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠে। সরকারের পালিত বাহিনীর গুলি-লাঠি, টিয়ার-সেল আগ্নেয়াস্ত্রকে উপেক্ষা করে রাজপথে মেধাবী ছাত্র আবু সাঈদ, মুগ্ধরা বুক চেঁতিয়ে বুকে গুলি খেয়ে শহীদ হয়ে রাজপথ দখল করে নেয়। ছাত্র-জনতার হুংকার-প্রতিবাদে  পেটোয়া বাহিনীরা রাজপথ ছেড়ে পালিয়ে যায়। 

ঠিক তেমনি স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বাস ভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকার রাজপথ ধরে ছাত্র-জনতা এগিয়ে গেলে তাৎক্ষণিক পদত্যাগ করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি। দেশে ঘটে  আরেকটি গণঅভ্যুথান। এই গণঅভ্যুথানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। এ দেশের মানুষের ঘৃণার পাত্র হয়। এই ভয়ংকর শেখ হাসিনা তার গদি ধরে রাখতে যত অপকৌশল আছে সব প্রয়োগ করেছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ১৬টি বছর বাংলাদেশের মানুষকে জিম্মি করেছিলেন। কায়েম করে ছিল রামরাজত্ব। হরণ করে ছিল মানুষের ভোটের অধিকার। কেড়ে নিয়ে ছিল মানুষের প্রতিবাদের ভাষা। কায়েম করে ছিল একনায়কতন্ত্র।

দেশের  সর্ববহৎ দল বিএনপিকে দমন-পীড়ন, মামলা-হামলা, গুম-খুন জখম চালিয়ে এক তরফা নির্বাচন দিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার কেঁড়ে নিয়েছিল। অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়ে ছিলো তাদের ওপর। তেমনিভাবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিবাদের ভাষা হরণ করে মামলা-হামলা করে তাদেরকেও ক্ষত-বিক্ষত করেছিল। স্বৈরাচার সরকারপ্রধান ক্ষমতা ধরে রাখতে  চাপে ফেলে একটি দেশপ্রেমিক বাহিনীকে বার বার কলুষিত করেছে। তাদেরকে বার বার ব্যবহার করেছে। এই প্রেক্ষাপটে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের চাওয়া এই বাহিনীকে যেন আর কোনো সরকার ব্যবহার করতে না পারে। তারা যেন দেশপ্রেমকে আঁকড়ে ধরে এ দেশের মানুষের নিরাপত্তায় সর্বদায় সক্রিয় থাকে। তাদের জাগ্রত বিবেক যেন অন্যায়কে-অন্যায়, ন্যায়কে-ন্যায় বলতে পারে। তারা যেন জনগণের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে দেশবাসীকে নিরাপত্তা দিয়ে সত্যের পথে এগিয়ে যেতে পারে। তাদের প্রতি জাতির প্রত্যাশা অনেক।  

আমাদের সবার মনে রাখতে হবে স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। ছাত্রদের আত্মদানে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। তাদের রক্তের ঋণ কোনো দিন শোধ হওয়ার নয়।  তাদের জীবনের অবদানে বাঙালি জাতি পেয়েছে একটি নতুন  স্বাধীন সকাল। কিন্ত স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে অর্জিত স্বাধীনতা রক্ষা  আরো করা কঠিন।  ষড়যন্ত্র হবেই। তবে এ বিজয়কে ধরে রাখতে দেশবাসীকে সর্বদা জাগ্রত থাকতে হবে। ছাত্রদের অক্লান্ত পরিশ্রম আত্মত্যাগকে আজীবন মূল্যায়ন করতে হবে। তারা  স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি ইতিহাস রচনা করেছে। দেশপ্রেমিক ছাত্ররা রাষ্ট্রকে নতুন করে মেরামত করছে। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে নিরাপত্তায় যানবাহন চলাচলে  ট্রাফিক দায়িত্ব পালন করছে। বিভিন্ন রাস্তার পাশে দেয়ালগুলোতে প্রতিবাদি শ্লোগান লিখছে। যা মুক্তিকামী মানুষের চেতনারই একটি অংশ। ছাত্রদের বুকে গুলি চালিয়ে বিশে^র অন্যতম স্বৈরশাসক মধ্যে শেখ হাসিনার নাম যুক্ত হলো। 

এদিকে  নোবেল বিজয়ী  অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্ঠা করে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। এতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস প্রধানমন্ত্রীর পদমর্র্যাদায়  দায়িত্ব পালন করবেন। গত বৃহস্পতিবার (৮ আগষ্ট) রাতে তারা শপথ নেন। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা  বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের দপ্তর বণ্টন করেছেন। এই সরকারের কাছে নতুন প্রজন্মসহ দেশবাসী অনেক প্রত্যশা নিয়ে তাকিয়ে আছে। বাংলাদেশের মানুষ চিরকাল শোষণ-নির্যাতন বঞ্চনার শিকার হয়েছে। ২০০ বছর ব্রিটিশদের রোষাণলে জিম্মি ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারত পার্টিশনের মধ্য দিয়ে ভারত প্রজাতন্ত্র ও পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব বাংলাকে যুক্ত করে দুটি রাষ্ট্র করা হয়েছিল। কিন্তু ওই পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠি  ক্ষমতা পেয়েই প্রায় দীর্ঘ ২৪ বছর বাঙালি জাতিকে শোষণ-বঞ্চনা করতে শুরু করে। বাঙালিদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। 

১৯৫২ সালে বাঙালি জাতির মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়ে ছিল। ঠিক ওই সময়ও ছাত্ররা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষা বাংলাকে রক্ষা করে ছিল। এর থেকে পাকিস্তানকে বাঙালি জাতি হঠাতে ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে। বাঙালিদের বুকে ক্ষোভের দানা বাঁধতে শুরু করে।  একের পর এক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুথান ঘটে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেও সরকারে যেতে পারেনি।  তখনই তথাকতিথ পাকিস্তানের জাতি স্বত্তা দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়।  ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিস্বত্তার উন্মেষ ঘটে। ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ কালরাত্রি নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালি জাতির ওপর সার্চ অপারেশন চালায় পাক হানাদার বাহিনী শত্রুরা। স্বাধীনতার জন্য মুক্তিকামী  বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মহান মুক্তিযুদ্ধেও ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অগ্রণী। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পরও এ দেশের মানুষ বার বার ক্ষমতা লোভীদের শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়েছে।  জাতি  স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ পায়নি। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। 

যারাই ক্ষমতার মসনদে বসেছে, তারাই কোনো না কোনোভাবে জনগণকে ঠকিয়েছে। দেশবাসীর আস্তা-বিশ্বাসকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে।  আতঙ্ক এখনো কাটেনি। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে। মানুষের আশা-ভরসা এখন অধ্যাপক ড. ইউনূসকে নিয়ে। তার দেশপ্রেম বাংলাদেশকে কতোটা এগিয়ে নিয়ে যায় সেটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে গোটা জাতি। এদিকে দেশবাসী ও বিশে^র ক্ষমতাধর  রাষ্ট্রগুলো ড. ইউনূসকে স্বাগত জানিয়েছে। যুগে যুগে বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে  আবু সাঈদ, মুগ্ধরা মানুষের পাশে দাঁড়াবে। তাদের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা।

লেখক : সাংবাদিক। 

আজকালের খবর/আরইউ








http://www.ajkalerkhobor.net/ad/1724840661.gif
সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকা ওয়াসার এমডি হলেন ফজলুর রহমান
১ অক্টোবর থেকে বিমানবন্দর এলাকা হর্নমুক্ত ঘোষণা
বিএসএমএমইউ শিক্ষক নিপুণ গ্রেপ্তার
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গ্রেপ্তার
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগে শরিক হতে প্রস্তুত বিশ্বব্যাংক
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, ঘুরতে দেখা গেছে লোদি গার্ডেনে
যুবককে পিটিয়ে হত্যা: ঢাবির ৫ শিক্ষার্থী আটক
ঢাবির হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনি, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির মৃত্যু
সেনাবাহিনীকে সব জায়গায় ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া ঠিক হবে না: ফখরুল
আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৬ জনের মৃত্যু: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft