বোধকরি সব শিল্পের কিছু শক্তি আছে। যে শক্তিবলে শিল্প বহুদূরে পৌঁছে যায়, খুঁজে নেয় নিজস্ব পথ। নইলে কলকাতার আকাশবাণী রেডিও থেকে একজন দাদা আমার সাক্ষাৎকার প্রচার করবেন কেন! তার নাম ভুলে গিয়েছি। কীভাবে আমার হদিস পেয়েছিলেন জানি না। লাইভ সাক্ষাৎকার প্রচার করার জন্য কয়েকবার কল করেছিলেন। পরে একদিন সাক্ষাৎকারও দিই। এমন আরও কিছু প্রাপ্তি আছে। সম্পাদক হিসেবে হাজারো দুঃখ ও বঞ্চনার বিপরীতে এমন কিছু প্রাপ্তি উজ্জীবিত করে বৈকি। মনে হয়, নিজের সব কাজ বৃথা যায়নি। সময়-অর্থ কোনোটাই শতভাগ নষ্ট হয়নি।
অনলাইন লিটলম্যাগ আর্কাইভ করার স্বপ্ন দেখেন কলকাতার সুশোভন রায় চৌধুরী। ইতোমধ্যে তার চমৎকার কিছু কাজ নজর কেড়েছে অনেকেরই। ফেসবুকে ‘লিটল প্রচার লিটল প্রসার’ নামে একটি লিটলম্যাগকেন্দ্রিক গ্রুপও পরিচালনা করেন। সর্বশেষ কাজটাও চমৎকার, উদ্যোগ নিয়েছেন লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক সংখ্যা করার। সম্পাদককে নিয়ে লিখবেন তার কাছের একজন। তো আমাকে নিয়ে লিখেছেন কথাসাহিত্যিক দীলতাজ রহমান। করোনার আগ থেকে সংখ্যাটা প্রকাশের তোড়জোড় চলছি, কিন্তু এখনো পড়ে আছে সম্পাদকের ল্যাপটপে। সম্পাদকের পারিপার্শ্বিক যাতনা কম নয়। এটা কম-বেশি সব সম্পাদকই জানেন, বোঝেন। লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনার ভূত মাথায় না চাপলে আমি হয়তো পেশাগত জীবনে উন্নতি করতে পারতাম। টানাটানির সংসারের লজ্জাজনক ঘানি টানতে হতো না। একবার ভর্তি হয়েছিলাম গ্রাফিক্স শেখা কোর্সে। কিন্তু গ্রাফিক্স শেখা আর হলো না। এখন হয়তো শুরু হবে গ্রাফিক্সের ক্লাস, আমি চলে গেলাম ধ্রুব এষের বাসায়Ñ প্রচ্ছদ আনতে! শেখা বিষয়গুলো যখন বাসার কম্পিউটারে মক্শো করতে হতো তখন আমি কারও লেখা এডিট করছি কিংবা লেখা সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন লেখককে কল করছি, দ্রুত লেখা পাঠানোর জন্য তাড়া দিচ্ছি। এসব করে তো আর ক্যারিয়ার গড়া যায় না; পেশাগত সাফল্য দূর অস্ত। একটু একটু করে আমিও পিছিয়ে পড়লাম, সঙ্গত কারণেই!
এত গ্লানি সয়ে, এত অপমান গায়ে লাগিয়ে একটি লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ না করলে কী হয়? প্রশ্ন রাখি নিজের কাছে। কেউ তো আমাকে দিব্যি দেয়নি করতেই হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এটা যদি আমি প্রকাশ নাও করি, কোথাও তো এতটুকু আঁচড় পড়বে না। ক্ষতি হবে না কারওই। তাহলে আমি কেন এত কষ্টের জীবন বেছে নিলাম স্বেচ্ছায়!
সন্তোষজনক জবাব না পেয়ে শেষপর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে উপনীতি হতে পারি, কথাটা শুনতে খারাপ শোনালেও সত্য- চালচুলোহীনরা এসব করে। যারা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায় কিংবা অন্যকিছু করার নেই (অথবা অনেক কিছুই করার আছে- এক অর্থ উপার্জন ছাড়া)! একই সঙ্গে ‘চাল’ (তিন রকম অর্থে) আছে আবার ‘চুল’ও আছে, এমন মানুষের পক্ষে আর যা-ই হোক লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা সম্ভব না, কস্মিনকালেও না!
আমি যেমন বাবা-মায়ের কুলাঙ্গার সন্তান হয়ে আছি, আমার মতো আরও অনেককেই নিশ্চয়ই খুঁজে পাব চারপাশে। ফেলে এসেছি যে-পথ, সামনে অপেক্ষা করছে আরও যে-পথ কেমন সেগুলো! কিছু গ্লানি তো এখনো মন খারাপ করিয়ে দেয়, কিছু আনন্দ দিয়ে যায় ভালোলাগার চকমকির পাথরের রোশনাই। ‘প্রকাশ’ প্রথম সংখ্যার সহকারী সম্পাদক হিসেবে মহল্লার একজন ছিল। চুক্তি হয়েছে, ম্যাগাজিনের অর্ধেক খরচ বহন করবে সে, বাকি অর্ধেক আমি। লেখা আহ্বান ঘোষণা দেওয়ার তিন দিন পরে সন্দ্বীপ রেজিস্ট্রি ডাকে কবিতা এল। পাঠিয়েছে দুই বোন একা ও লেখা। ঠিকানা দেখে সহকারী সম্পাদক বলল, আমি এদের চিঠি লিখব। কেন চিঠি, কীসের চিঠি? লেখা প্রকাশিত হবে এটি জানিয়ে।
বোঝানোর চেষ্টা করলাম, দুর্বল লেখা তো প্রকাশিত হবে না। কিন্তু সে গোঁ ধরে আছে! পত্রপ্রেম করতে যাওয়ার আগে একটা উছিলা লাগে। এই উছিলা নিয়ে সুযোগ পেতে চাচ্ছে সে! ফলে একার পথেই হাঁটার সিদ্ধান্ত নিতে হলো। ক্ষুদ্র চিন্তার ঊর্ধ্বে উঠতে না পারলে কীসের সম্পাদনা সহযোগী!
চতুর্থ সংখ্যা থেকে অষ্টম সংখ্যা পর্যন্ত প্রকাশ হয়েছিল ঢাকা থেকে। মানিক চন্দ্র দেবনাথ জোহানেসবার্গে গিয়ে প্রথম দিকে সংগ্রাম করেছেন অনেক। ওখানকার ছিনতাইকারীরা ভয়ঙ্কর। রাতের বেলায় বিশেষ ধরনের কাঁচি দিয়ে দোকানের টিন কেটে ফেলে ডাকাতি করে। প্রত্যাশিত টাকা ও মালামাল পেয়ে গেলেও ছুরি বসিয়ে দেয় পেটে। দিনে-দুপুরে! শুরুর দিকের সংগ্রাম শেষে তিনি থিতু হয়েছেন। বর্তমানে ভালো অবস্থা। দেশ থেকে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে কর্মী নেওয়া শুরু করেছেন। ভালো সময়েও তাকে পৃষ্ঠপোষকের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বললে সাড়া দেননি আর। তবে চতুর্থ সংখ্যা প্রকাশ করার জন্য কিঞ্চিৎ আর্থিক সহযোগিতা করেছেন আমার দুই বন্ধু সাইফুল আমিন ও শহীদুল কায়সার লিমন।
ম্যাগাজিন প্রকাশিত হলে প্রথম কাজ হচ্ছেÑ লেখকদের সৌজন্য কপি পাঠানো আর বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন স্টলে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দেওয়া। যদিও বিক্রি হয় কম, হলেও টাকা পাওয়া যায় না। তারপরও ছড়িয়ে দিতে না পারলে সম্পাদনাই তো বৃথা! এমন পন্থাতেই চালিয়ে নিতে হচ্ছে সম্পাদনার কাজ। কুরিয়ারে ও সরাসরি সৌজন্য কপি বিলিও চলে। তবে সৌজন্য কপি দিলে টাকা দিয়ে ম্যাগাজিন কিনে নেন এমন ক’জন মানুষের সন্ধানও পেয়েছি। ‘উলুখড়’ সম্পাদক সাগর নীল খান, গল্পকার-অধ্যাপক আনিস রহমান, পর্যটনবিচিত্রা’র মিজান মিজানুর রহমানের নাম মনে পড়ছে এখন।
একটি নামকরা লিটলম্যাগ দোকানের কর্মী ছিলেন একজন কবি। তিনিও অন্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সম্পাদকদের বিক্রিলব্ধ টাকা দিতেন না। উল্টো নিজের কবিতাটি গছিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা কষতেন। তো একবার তিনি সাক্ষাৎকার দিলেন একটি লিটল ম্যাগাজিনে। লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে উল্লেখ করলেন ‘বিক্রির টাকা পাওয়া যায় না’! অথচ নিজেই কাজটি বছরের পর বছর দক্ষতার সঙ্গে করে যাচ্ছেন। মনে মনে হাসলাম।
বিগত বিশ বছরে এমন মানুষও কম পাইনি, যারা বলেছেন হলুদ রঙের মলাট কিংবা ফিরোজ রঙের মলাটের সংখ্যাটা আমার কাছে আছে! অথচ এমন কোনো প্রচ্ছদই হয়নি কখনো। একবার দীলতাজ রহমানের বাসায় পরিচয় হলো পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ আগত কবি গোলাপ আমিনের সঙ্গে। তিনি আগে থেকেই আমাকে চিনতেন, আমিও চিনতাম লেখার সূত্রে। তো গোলাপ আমিন বললেন, ‘আমি আপনার পত্রিকার একটা কপি কিনেছি বইমেলার সামনে থেকে। পুরোনো কপি, কম দামে।’ যথারীতি মনে মনে হেসেই উড়িয়ে দিলাম। বাংলা একাডেমির সামনে কোথায় পুরোনো লিটলম্যাগ বিক্রি হয়! আমি তো দেখিনি কখনো। কিন্তু বছর দুয়ের পরে যখন তার বাড়িতে বেড়াতে যাই, তার প্রতিষ্ঠিত সালুয়াদী পাঠাগারে সেখানে সপ্তম সংখ্যাটা ঠিকই দেখতে পাই। তার মানে কবি মিথ্যা বলেননি! চারপাশে অসংখ্য মিথ্যাবাদী গিজগিজ করে যে কারণে, আমরা একজন সত্যবাদীকেও তাদের কাতারে ফেলে দিই। ভাগ্যিস, এসেছিলাম এখানে। অনুতপ্ত হলাম অবিশ্বাসের জন্য।
লিটলম্যাগ সম্পাদনার হ্যাপা কম নয়। তার মধ্যে বড় সমস্যা বিজ্ঞাপনের দুষ্প্রাপ্যতা। সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ এটাকে ‘খয়রাত’ হিসেবেই আখ্যায়িত করতে চান। আরেকটি বড় সমস্যা ভালো লেখার দুষ্প্রাপ্যতা। বিশেষ করে গদ্য। লেখকের ধৈর্যহীনতাও বড় সমস্যা। লেখকরা লেখা পাঠানোর পর কিছুদিন অপেক্ষা করেই লেখাটা অন্য পত্রিকায় দিয়ে দেন। কিংবা তিন জায়গায় পাঠান একই সঙ্গে! তারা চিন্তাও করেন না, সম্পাদক বেচারা আরও লেখা সংগ্রহের প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিংবা মুদ্রণ ব্যয় কীভাবে সংকুলান হবেÑ এমন ভাবনায় হিমশিম খাচ্ছে! ধনাঢ্য-জমিদারপুত্ররা লিটলম্যাগ সম্পাদনায় আসেন না। ‘বাপে খেদানো, মায়ে তাড়ানো’ উদ্যমী ছেলেপেলেরাই নিজ উদ্যোগেই দায়িত্ব ঘাড়ে তুলে নেয়। এদের জন্য বিজ্ঞাপনের বাজার আরেকটু সহনীয় থাকা উচিত। এখানে যদি ‘প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা’র প্রসঙ্গ তোলেন কেউ, তাহলে আলাপ অন্যদিকে মোড় নেবে। সম্পাদকদের নিয়ে কটুকথা নিয়ে বলার লোকজনও কম নেই। একবার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলাম বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের, গুলশানে তার বাসভবনে। কথাপ্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করে গাড়ি-বাড়ি করেছে এমন কেউ কি আছে! আদতে নেই। কেউ বড়জোর টেনে-টুনে নিজের সংসারটা চালাতে পারে। এমন দুয়েকজন ‘সম্ভাবনাময়’ সম্পাদক আগে দেখেছিলাম, ইদানীং তাও চোখে পড়ে না। ম্যাগাজিনই তো দিনকে দিন বিলুপ্তির পথে হাঁটছে!
প্রাকৃতিক বিধানে একসময় আমি থাকব না, আমরা সবাই চলে যাব। থেকে যাবে ছাপাখানা, চিন্তা-চেতনা। আসবে নতুন শিশু, নতুন নতুন মানুষ। তখনো লিটলম্যাগ যেন থাকে। নিত্যনতুন সম্পাদকের যেন জন্ম হয়। তারা যেন গ্লানি-লাঞ্ছনা-অপমানকে অলংকার ভাবতে শেখে। তাহলেই হয়তো সময়ের চাহিদা পূরণ করতে লিটলম্যাগ সম্পাদনা করতে পারবে। সবচেয়ে বড় কথা, সৃষ্টি-সুখের আনন্দে মেতে থাকতে পারা জরুরি। নইলে আত্মা রুদ্ধ হয়ে থাকে, সমাজ হয়ে পড়ে কলুষিত! সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্যই বোধে চাবুক-হানা লেখা দরকার। দরকার চিন্তাশীল তেমন লেখক ও সম্পাদক।
সম্পাদনার খারাপ দিকও কম নেই। তার মধ্যে একটি হলোÑ নিজের লেখালেখি বন্ধ হয়ে যায়। লেখকসত্তা ও সম্পাদকসত্তা একত্রে টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন এমন মানুষ খুবই কম। আলো যারা জ¦ালাতে চান, নিজেকে অন্ধকারে রেখেই তারা আলো জ¦ালিয়ে যান পৃথিবীব্যাপী।
২০১৬ সালে ‘প্রকাশ’ লিটলম্যাগের সর্বশেষ সংখ্যাটি প্রকাশ করার বন্ধ্যা হয়ে আছি দীর্ঘ আট বছর। যদিও ম্যাগাজিন প্রকাশ করার জন্য লেখা সংগ্রহ করে রেখেছি ২০১৭ সালেই। এই ফাঁকে কত দুর্যোগ এসেছে, কত দুর্বিপাকে পড়েছি সাংসারিক ও চাকরিজীবনে! বলে শেষ করা যাবে না। অন্তত আরো একটি সংখ্যা প্রকাশ করে ইতি টানতে হবে। এর মধ্যেই আমার মাথায় কুটকুট করে কামড়াচ্ছে আরেকটি চিন্তা। এটা তো করলাম গল্পবিষয়ক লিটলম্যাগ, আরেকটি বিষয়েও সম্পাদনা করা যায়। এমন ম্যাগাজিন বাংলাদেশে নেই। যদিও জানি না, শেষপর্যন্ত কী পারব আর কী পারব না। বিরূপ পরিস্থিতি কখনোই তো আমাদের স্বস্তি দেবে না, শান্তি দেবে না। এই বিপ্রতীপ সময় তো সম্পাদনা-অনুকূল নয়! নানা সীমাবদ্ধতা চারদিকে। এরমধ্যেই কেন মাথার ভেতরে সম্পাদনার পোকা হাঁটে পিলপিল করে। ছেলেরা বড় হচ্ছে, সংসারের ছন্নছাড়া দশা ঘোচানোর চিন্তায় যখন নিদ্রাহীন থাকার কথা, তখন কেন আমি এমন সৃষ্টিছাড়া স্বপ্ন দেখি! বোধকরি অনেকেই আমার মতো। কিছু করতে পারবে না, নিজে ঠুঁটো জগন্নাথ জেনেও আকাশে-বাতাসে উড়ে বেড়ায় আর স্বপ্ন দেখে! তারপর লীন হয় স্বপ্নভঙের বেদনায়।
সম্পাদক মূলত দুই প্রকার। কেউ হাত-পাকা হয়ে সম্পাদনায় নামেন। আবার কেউ কেউ কাজ করতে করতে সম্পাদনা শেখেন। ২০০৪ সালে প্রথমে কবিতা সংখ্যা প্রকাশ করতে গিয়ে বুঝেছি, এই কাজ না করলেও চলে। কবিতার মতো জটিল একটি বিষয়কে যেভাবে আমরা সহজ করে ফেলছি, তাতে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। আমার নিজেরও যে না বুঝে দুয়েক পঙ্ক্তি কবিতা লেখার বদঅভ্যাস ছিল, সেখান থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি এই সম্পাদনার সুবাদেই!
প্রচুর ফোনকল আসত তখন। শুরুর দিকে মোবাইল ফোনের দাম ছিল অস্বাভাবিক বেশি, কলরেটও বেশ চড়া। পুরোনো একটি মটোরোলা সেট কিনেছি চার হাজার ২০০ টাকায়। রবি সিমসহ। ৩০০ টাকায় একটি কার্ড রিচার্জ করলে এটি ব্যবহার করা যেত সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ পর্যন্ত। তাও ব্যালেন্স থাকা সাপেক্ষে। লেখকরা, বিশেষ করে কবিরা চান সম্পাদকের সঙ্গে আলগা খাতিরের সম্পর্ক গড়ে তুলতে। অথচ সময়টা যদি নিজেদের লেখা ও পাঠের মানোন্নয়নে ব্যয় করতেন তাহলে এতটা সময় অপচয় করতে হতো না। সম্পাদকরাও মুক্তি পেতেন উটকো কলের যন্ত্রণা থেকে। দুই-চারদিন কুশলাদি বিনিময়ের নামে কবি-লেখকরা ফট করে একদিন প্রশ্ন করে বসতেনÑ এই সংখ্যায় কি আমার লেখাটা যাচ্ছে?
বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পে প্রশিক্ষণ হিসেবে পেয়েছিলাম সৈয়দ শামসুল হককে। প্রান্তবর্তী লেখকদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সব্যসাচী বলেছিলেন, ‘সাহিত্যের মূল স্রোতটাকে টিকিয়ে রাখে এরাই’। কারও কারও প্রতি বিরক্তি থাকলেও এরপর থেকে আমি সবকিছু সহজভাবে দেখার চেষ্টা করি। পিছিয়ে থাকা লেখকদের একেকজনের অধ্যবসায় ও সাধনা কম নয়। কিন্তু ভুল পন্থার কারণে, প্রয়োজনীয় পঠন-পাঠন ও অনুশীলনের অভাবে অনেকেই পিছিয়ে। ভুল তরিকায় এগোতে চান। এটাও সত্য, বর্তমানে যাদের আমরা খ্যাতিমান লেখক হিসেবে চিনি-জানি এদের বড় একটি অংশই এসেছেন গ্রাম থেকে। যেখানে এখনো কাদা-মাটির উপর বয়ে যায় স্বচ্ছ জলধারা! (শেষ পর্ব)
আজকালের খবর/আরইউ