শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ওপারে ভালোবাসা
আহমাদ কাউসার
প্রকাশ: শনিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৪, ৩:২৯ PM
অচেনা পাহাড়ি পথে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত নিতিশ। মাথা থেকে লাকড়ির বোঝাটা মাটিতে রেখে সরু রাস্তার পাশে জাম গাছটার নিচে বসলো। তপ্তরোদে ঘর্মাক্তদেহ, গায়ের জামা ভিজে লেপ্টে আছে শরীরের সাথে। ঝিরঝিরে বাতাসে উড়ছে মাথার চুলগুলো।
আনমনে দক্ষিণমুখী উদাস ভঙ্গিতে বসে আছে নিতিশ। রাস্তার পাশের বাড়ি থেকে নিতিশকে দেখে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে ধীর পায়ে হেঁটে এলো এক বৃদ্ধা।
কে তুমি এখানে বসে আছো কেন?
অপ্রতিভ নিতিশ বসা থেকে দাঁড়িয়ে বললো,আমি নিতিশ।
কী করছো এখানে?
লাকড়ি কুড়াতে এসেছিলাম, গরমে ঘেমে গেছি তাই  ছায়ায় বসে জিরাচ্ছি।
ও, আচ্ছা, তুমি জয়বাংলার লোক?
জ্বি!
লাকড়ি কুড়াতে এসেছো?
জ্বি।
নিতিশের চাহনিতে এক অসহায়ত্বের রেখা প্রত্যক্ষ করলো বৃদ্ধ মহিলাটি। তার নিরেট মায়াময় চাহনি বৃদ্ধার মনে কিছুটা ঠোকর মারলো। মহিলাটি মৃদুস্বরে ফের জিজ্ঞেস করলো, তোমরা ক্যাম্পে যাওনি?
না, আমরা ক্যাম্পে যাইনি। ক্যাম্পতো এখান থেকে অনেক দূরে, আমার মা খুব অসুস্থ তাই আপনাদের  স্কুলেই থেকে গেছি। এখান থেকে ক্যাম্পে যাওয়ার কথা, মা অসুস্থ তাই এই স্কুলেই আশ্রয় নিয়েছি।
তোমাদেরকে চাল ডাল দেয়?
না, আমাদেরকে ওসব দেয় না। কেউ খুঁজ-ও নেয় না আমাদের।
শরনার্থী ক্যাম্পে তো এসব নিয়মিত দিচ্ছে।
হ্যা, ওখানে সবকিছুই দিচ্ছে।
তাহলে তোমরা খাবার খাও কীভাবে?
বাডি থেকে চাল, ডাল কিছু নিয়ে এসেছিলাম, সেগুলো দিয়েই আপাতত চলছে।
ও, আচ্ছা!
স্কুলে তোমার আর কে আছে?
আমার মা আর ছোট একটা বোন। আমরা ছাড়াও অনেক লোক আছে।
মহিলাটি নিতিশের কথা শুনে কিছুক্ষণ লাকড়ির আটিটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, এই কয়টা লাকড়ি খুঁজতে পাহাড়ে গিয়েছো?
জ্বি, মাসি মা।
মাসি শব্দটা শুনে মহিলার বুকে একটা হালকা মায়াবী কম্পন দোল খেয়ে গেল। কিছুক্ষণের জন্য মহিলাটি তার অতীতে ফিরে গেল। মনে পড়ে গেল তার দিদির ছেলের কথা। যে তাকে এমন মায়াময় কণ্ঠে মাসি বলে ডাকতো। একটু স্বাভাবিক হয়ে বললো, এসো আমার বাড়িতে এসো। তোমার মুখটা শুকিয়ে আছে। কিছু খেয়ে নাও।
না, মাসি মা। আমার মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি ফিরলে খাবে।
ঠিক আছে, এসো,আমিতো তোমার মায়ের মতোই।
মহিলার পীড়াপীড়িতে নিতিশ মহিলার বাড়িতে গেল। মহিলাটি তাকে একটি পিঁড়ি এনে দিল। সে বারান্দায় বসলো। নিতিশকে দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো মহিলার একমাত্র মেয়ে অনামিকা। নিতিশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করলো, আপনি জয় বাংলার লোক?
জ্বি।
কোথায় ওঠেছেন?
আপনাদের স্কুলে।
ও, আচ্ছা।
অনামিকার মা একটি বড় বাটি দিয়ে ভাত আর তরকারি এনে বললো, এগুলো তুমি নিয়ে যাও, তোমার মা আর বোনকে নিয়ে খেও।
মাসি মা এগুলোর কি দরকার ছিলো।
মহিলাটি একটু শাসনের সহিত বললো, কোনো কথা বলো না, তোমরা তো এখানে বিপদে পড়ে এসেছো। তোমরা তো গরিব নও। তোমাদেরও দেশে আমাদের মতো সবকিছু আছে। যেহেতু আমাদের দেশে তোমরা আশ্রয় নিয়েছো তাই তোমাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য।
মহিলার কথা শুনে নিতিশ আর কোনো কথা বললো না। বাটিটা হাতে নিয়ে বললো, মাসি মা, আমি আসি।
এসো, তবে যখন কোনো কিছুর দরকার হবে তুমি মাসির বাড়িতে চলে এসো।
আচ্ছা।
নিতিশ একহাতে লাকড়ির আটি আরেক হাতে খাবারের বাটি নিয়ে চলে এল স্কুলে। তার হাতে খাবারের বাটি দেখে তার মা জিজ্ঞেস করলো, বাটিটা কোথায় পেলি, এটাতে কী আছে?
বাটিটাতে এক মহিলা আমাদেরকে খাবার দিয়েছে।
নিতিশের মা একটু আশ্চর্য হয়ে বললো, বলছ কী?
হ্যা, আমি ওনাদের বাড়ির সামনে লাকড়ির আটিটা নিয়ে জিরাইতে ছিলাম। ওনি আমাকে দেখে বাড়িতে নিয়ে গেল। তারপর বাটিটাতে করে কিছু খাবার দিয়ে দিল।
এখানের মানুষগুলো খুব ভালো। নিতুকে ডাক।ওর পেটে খিদে।
নিতু কোথায় গেছে?
স্কুলের পেছনে খেলছে।
নিতিশ তার বোন নিতুকে ডেকে এনে খেতে বসলো। খাবার খেয়ে ওরা বারান্দায় বসে রইলো। প্রচণ্ড গরম। স্কুলের ভেতরে বাতাস ঢুকার ব্যাবস্থা নেই। বিকেলে নিতিশ বাটিটা দিতে গেল সেই মহিলার বাড়িতে। নিতিশকে দেখে অনামিকা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
বাটি নিয়ে এসেছেন?
জ্বি।
অনামিকা নিতিশের সামনে একটা পিঁড়ি দিয়ে বললো, বসেন, মা পাশের বাড়িতে গেছে। এক্ষুনি চলে আসবে।
না, আমি বসবো না। বাটিটা দিতে এসেছি।
না, আপনি বসেন। মা এলে যাবেন।
নিতিশ পিঁড়িটা টেনে বসলো। অনামিকা নিতিশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। নিতিশের চেহারায় অনামিকা নিখুঁত লাবণ্যতার ছাপ প্রত্যেক করলো। অনামিকার কাছে অপরিচিত নিতিশকে মনে হলো যেন অনেকদিনের চেনা কেউ। নিতিশের মাথার চুলগুলো লম্বা হতে হতে কপোলে এসে ঠেকেছে। নিতিশকে দেখেই মনে হলো বুনিয়াদি বংশের ছেলে। মৌনতা ভেঙে অনামিকা জিজ্ঞেস করলো, আপনি পড়াশোনা করেন?
হ্যা, দশম শ্রেণিতে পড়ি।
আপনার বাবা নেই?
আমার বাবা কিছুদিন আগে শেল পড়ে মারা যায়। তিনি স্কুল শিক্ষক ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা এখানে চলে আসি।
আপনি পড়াশোনা করেন?
হ্যা, আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি।
ও, আচ্ছা।
এখানে কতদিন থাকবেন?
তা তো জানি না। দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকতে হবে।
আপনি যুদ্ধ যান নি কেন?
আমি যেতাম, বাবা-মা দেয়নি। মনে মনে ভেবেছিলাম বাবা-মাকে না বলেই যুদ্ধে যাব।এরই মধ্যে বাবা চলে গেলেন। এখনতো আর যাওয়ার সুযোগ নেই। ছোট একটা বোন আছে, মা অসুস্থ। আমার কিছু হলে ওরা বাঁচবে কি নিয়ে। নিতিশের কথা শুনে অনামিকার মনে নিতিশের জন্য একটা মায়াময় আকর্ষণ সৃষ্টি হল। অনামিকা কথার ফাঁকে ফকে নিতিশের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলো। নিতিশ কিছুটা লাজুকভাবে কথা বলে যাচ্ছিল।
অনামিকার মা এল। নিতিশকে দেখে বললো, তুমি এসেছো?
জ্বি, মাসি মা।বাটিটা নিয়ে এসেছি।
ও আচ্ছা।
তোমার মা কেমন আছে?
ভালো নেই। সারাক্ষণ অসুখ লেখেই আছে।
বাংলাদেশে কোথায় তোমার বাড়ি?
আমার গ্রামের নাম চান্দলা।
ও।
এখানে তোমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝি?
কষ্টতো হবেই। রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারিনা, মশার কামড়, পোকামাকড়ের উৎপাত। তাছাড়া জলের অভাব।আরো কতো কি।
অনামিকার মা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললো, হ্যা, নিজের দেশ আর অন্য দেশ। নিজের দেশে না খেয়ে থাকলেও শান্তি।
নিতিশ অনামিকার মা’কে বললো, মাসি মা, আজকে যাই। সন্ধ্যো হয়ে এলো।
আচ্ছা, যাও। আবার এসো।
নিতিশ পিঁড়ি থেকে ওঠে অনামিকার দিকে একপলক তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করলো স্কুলের দিকে। অনামিকা নিতিশকে যতক্ষণ দেখা যায় ততোক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো বাড়ির সামনের রাস্তাটায়। নিতিশ অদৃশ্য হয়ে গেলে অনামিকা ঘরে চলে গেল।
অনামিকার মা অনামিকাকে বললো, ছেলেটা অনেক ভালো। মনে হয় ভালো বংশের ছেলে।
হ্যা, ওর বাবা শিক্ষক ছিলেন। শেল পড়ে মারা গেছে।
অনামিকার চোখে ঘুম নেই। রাতে শুয়েই অনামিকার ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস। কিন্তু আজ রাতে অনামিকার চোখে ভাসছে নিতিশের লাবন্যময় মুখখানি। বারবার নিতিশের চেহারাটা ভাসছে তার নিদ্রাহীন চোখে। এপাশ-ওপাশ করছে অনামিকা। ঘুম আসছে না।
একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে ওঠে অনামিকার কিছুই ভালো লাগছে না। কেন এমন লাগছে তার। তবে কি সে নিতিশের প্রেমে পড়ে গেছে। নানারকম ভাবনা উদয় হচ্ছে তার মনে। একদিন দুইদিন এভাবে সপ্তাহ গেল। নিতিশ আর এলো না অনামিকার বাড়িতে। এক বিকেলে বান্ধবী অয়ন্তিকে বললো, তার মনের কথা। তার সবকথা শুনে অয়ন্তি বললো, তুই তাহলে ওর প্রেমে পড়েছিস!
যা, এসব কি বলিস।
সে আরেক দেশের লোক। ভিন দেশের মানুষের সাথে প্রেম করে শেষে কাঁদতে হবে।
কেন? বাংলাদেশে আমাদের এখানের অনেকেরই বিয়ে হয়েছে। ওরা নিয়মিত আসা-যাওয়া করে।
তবুও।
এখন বল! কী করবি। তুইতো মনে মনে ঠিকই হাবুডুবু খাচ্ছিস।
চল, স্কুলে যাই।
কেনো?
ওকে একটু দেখে আসি।
চল তাহলে।
বান্ধবীকে নিয়ে অনামিকা স্কুলে গেল। স্কুলে ঢুকেই অনামিকা দেখে নিতিশ তার বোনের সাথে খুনসুটিতে ব্যাস্ত। খুনসুটির ফাঁকে নিতিশের দৃষ্টি পড়লো স্কুলের মাঠের দিকে। নিতিশ দেখতে পেল অনামিকাকে। অনামিকাকে দেখে নিতিশ জিজ্ঞেস করলো, কেমন আছেন?
অনামিকা একটু অভিমানের স্বরে বললো, আছি কোনোরকম।
আপনি?
এইতো দেখতেই পাচ্ছেন। আমাদের আর ভালো। আপনার সাথে এটা কে?
আমার বান্ধবী, অয়ন্তি।
ও, আচ্ছা। কেমন আছেন?
জ্বি! ভালো।
নিতিশ অনামিকাকে বললো, কোথায় বসতে দেব আপনাদের। এই জায়গায়টায় বসুন।
না, আমরা বসবো না। এমনিতেই এসেছি। চলে যাব।
অনামিকা পলকহীন তাকিয়ে আছে নিতিশের দিকে। নিতিশ কিছুটা অনুভব করতে পারলো অনামিকার চোখের ভাষা। নিতিশ কিছুটা কোমল স্বরে বললো, বসেন না একটু।
অনামিকা আস্তে করে বললো, বিকেলে আমাদের বাড়িতে যাবেন।
আচ্ছা, যাব।
আচ্ছা, আপনার মা কোথায়?
মা, ওদিক একটু হাঁটতে গেছে, চলে আসবে এক্ষুনি।
আজ যাই, পরে একবার এসে আপনার মা’কে দেখে যাবো।
অনামিকা বান্ধবী অয়ন্তিকে বললো, চল যাই।
দুই বান্ধবী বাড়ির পথ ধরে হাঁটতে লাগলো। পথে অয়ন্তি অনামিকাকে বললো, তুই ওকে তোর মনের কথা বল।
এতো তাড়াতাড়ি এসব বলা কি ঠিক হবে? অল্প কিছুদিনের পরিচয়। তাছাড়া ওনি যদি এটাকে খারাপ ভাবে নেয় তাহলে কি হবে?
এতো কিছু ভাবিস কেন?
ওকে বলতে লজ্জা লাগে?
তাহলে একটা চিরকুট লিখে ওর হাতে দে।
আচ্ছা! বিকেলে আসুক আসলে চিরকুট দেব।
তোর মা যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে?
মা, কিছু বলবে না। মা ওকে পছন্দ করে। তাছাড়া আমার মতের বাহিরে মা যাবে না। সমস্যা একটাই।তা হলো আমরা দু’জন দুই দেশের।
আরে, এটা কোন সমস্যা না। বাংলাদেশে এখানের অনেকেরই আত্মীয় আছে। নিয়মিত আসা-যাওয়া করে।
ঝিরঝিরে বাতাসে গাছের পাতার থরো থরো শব্দ। শান্তবিকেলে নিতিশ হাঁটছে অনামিকার বাড়ির পথে। একটু ভীতমন নিয়ে ঢুকলো অনামিকার বাড়িতে। নিতিশকে দেখেই অনামিকা বারান্দায় একটা পিঁড়ি পেতে দিল।
মাসি মা কোথায়?
আছে, ঘরের ভেতরে।
অনামিকা তার মা আসার আগেই একটা চিরকুট নিতিশের হাতে দিল।
কি এটা?
স্কুলে যেয়ে পড়ে দেখবেন। লুকিয়ে রাখেন। মা দেখে ফেলবে। নিতিশ চিরকুটটা রেখে দিল তার পকেটে।
অনামিকার মা এল ঘর থেকে।
কেমন আছো, বাবা?
ভালো আছি, মাসি মা। আপনি কেমন আছেন? ভালো।
তোমার মা, কেমন আছে?
ভালো আছে।
অনামিকা ঘর থেকে বিস্কুট আর পানির গ্লাস এনে দিল নিতিশের সামনে। অনামিকার মা বললো, এগুলো খাও।
এসব কি দরকার মাসি মা।
অনামিকা নিতিশের দিকে তাকিয়ে বললো, এগুলো খেয়ে নেন।
নিতিশ বিস্কুট খেতে খেতে কথা বলছে অনামিকার মা’র সাথে। আর অনামিকা পাশে দাঁড়িয়ে শুনছে ওদের কথা।
বিস্কুট খাওয়া শেষ হলে অনামিকার মা বললো, তোরা কথা বল। আমি অমলদের বাড়ি থেকে আসি। নিতিশ,তুমি বসো, আমি একটু আসছি।
অনামিকার মা চলে গেলে নিতিশ চিরকুটটা পকেট থেকে বের করে পড়লো। অনামিকা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। চিরকুটটা পড়ে নিতিশ অনামিকার দিকে তাকিয়ে বললো, এটা কী সম্ভব?
কি?
ভালোবাসা!
আমি ভিনদেশের লোক।কখন চলে যাই ঠিক নেই।
তাছাড়া...
তাছাড়া কী?
তাছাড়া মাসি মা জানতে পারলে কি হবে?
কিছু হবে না।আপনি রাজি কি না বলেন?
নিতিশ চুপ করে রইলো। অনামিকা ফের জিজ্ঞেস করলো কি হলো বলেন।
ঠিক আছে আমি রাজি।
অনামিকার মুখে একটা অস্ফুট হাসি দোল খেয়ে গেল। অনামিকা নিতিশের দিকে তাকাল। নিতিশও অনামিকার দিকে তাকিয়ে বললো, এজন্যই আসতে বলেছেন?
হুম! এখন থেকে রোজ একবার আসবেন।
মাসি মা, কিছু বলবে না?
না, আমার মা তেমন মানুষ না।
আচ্ছা আসবো। তাহলে এখন যাই।
একটু বসেন।
অনামিকা ঘর থেকে একটা কাগজের ঠোঙ্গায় করে কিছু বিস্কুট দিয়ে বললো, এগুলো আপনার বোনকে দিবেন।
আচ্ছা, ঠিক আছে।তাহলে আজ যাই।
সাবধানে যাবেন।
বিকেলের শেষে পাহাড়ি পথে গাছে গাছে পাখির কিচিরমিিিচর ডাক  মাথায় নিয়ে নিতিশ ফিরে এলো স্কুলে।
নিতিশের মনে এক অন্যরকম শিহরণ আবার দেশের কথা মনে হলে সেই শিহরণ চাপা পড়ে যায়।
রাতের খাবার শেষে স্কুলের বারান্দায় শুয়ে নিতিশ তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। রূপালি চাঁদের সোনালী জোসনা নাচে মেহগনির গাছের পাতায় পাতায়।নিতিশ ভাবছে অনামিকার কথা। অনামিকা
চিরকুটার শেষে লিখা ছিল, ভালোবাসি তোমায়।সেই লিখাটিই মনে পড়ছে নিতিশের বার বার।
একসময় ক্লান্তি নামে নিতিশের চোখে, ঘুমিয়ে পড়ে নিতিশ।
নিতিশ আর অনামিকার প্রেম ধীরে ধীরে গাঢ় হতে থাকে। দু’জনে মনের ডানা ওড়ে স্বপ্নের আকাশে।
অনামিকার বাড়িতে নিতিশের আসা যাওয়া বেড়ে যায়। অনামিকাও স্কুলে এসে প্রায়ই দেখে যায় ওদের।
নিতিশের মনে তবুও একটা অদৃশ্য বাঁধা এসে দাঁড়ায় কখনো কখনো। এই প্রেমকে পরিনতি দেয়ার কৌশল খুঁজে নিতিশ। যদি দেশ স্বাধীন হয়, তাহলে তো দেশেই চলে যেতে হবে। তখন অনামিকার কি হবে। এই ভাবনা তাড়া করে নিতিশকে।
এক বিকেলে খবর আসে দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্কুলজুড়ে নেমে আসে আনন্দের বান।লোকজন দেশে ফেরার জন্য উদগ্রীব হয়ে জিনিসপত্র গুছাচ্ছে। আপন ভিটায় ফেরার আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে...ভিন দেশে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো। কিন্তু নিতিশের মনে সেই আনন্দটা প্রচ্ছন্ন থাকে। নিতিশের মা নিতিশকে বলে, সকলে দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, আমরাও ওদের সাথে চল। নিতিশ মুখে কোনো কথা না বলে, মাথা নেড়ে সায় দিল তার মা'র কথায়।
আস্তে আস্তে ঘুছাতে লাগলো জিনিসপত্র। সন্ধ্যা নেমে এলো দুর্গম পাহাড়ি পথে। নিতিশ একবার ভাবলো অনামিকার কাছে বলে আসি, আবার ভাবলো এই অন্ধকারে কারোর বাড়িতে যাওয়া ঠিক হবে কি না। কিংকর্তব্যবিমুঢ় নিতিচ সকল দ্বিধার অবসান ঘটিয়ে মা’কে বলে গেল অনামিকার বাড়িতে।মাসি মাসি বলে ডাকতেই বেরিয়ে এলো অনামিকার মা। নিতিশের কণ্ঠ শুনে অনামিকাও এলো। মাথা নিচু করে নিতিশ বললো, দেশ স্বাধীন হয়েছে, আমরা দেশে চলে যাব।
অনামিকার মা একটু উচ্চস্বরে আনন্দের সহিত বললো, বল কী! বেশ হয়েছে! তো, বাবা রাতেই যাবে।
হ্যা।
সকালে যাও!
না, মাসি সকলে চলে যাচ্ছে। আমরা এখানে একা থাকবো কী করে।
তাতো ঠিক।
অনামিকা এক বিস্ময় দৃষ্টিতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। চোখ ছলছল করছে। ফেটে যাচ্ছে তার বুক। অনামিকার মা কুপি আনতে গেল ঘরে। নিতিশ অনামিকাকে বললো, আমি কয়দিন পর আবার আসবো। তুমি চিন্তা করো না। দেশেতো যেতেই হবে। তাছাড়া আমার ঠিকানাতো তোমার কাছে আছে, চিঠি দিও। আমিও চিঠি দেব। তোমার আমার প্রেম পরিণতি পাবে। তুমি চিন্তা করো না। তবুও অনামিকার মুখে কথা নেই, হাসি নেই।
অনামিকার মা কুপি নিয়ে এসে বললো, এই অন্ধকারে তুমি এসেছো, নাও কুপিটা নিয়ে যাও।
দেশে গিয়ে মাসি মাকে ভুলো না। মাঝে মাঝে এসো,চিঠি দিও।
আচ্ছা মাসি মা, আসবো। আপনি ভালো থাকবেন।
কুপি হাতে পাহাড়ি পথে হাঁটতে হাঁটতে নিতিশ স্কুলে চলে এলো। সকলে দেশে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। নিতিশরা দুর্গম পাহাড়ি পথে ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলো আপনভূমির উদ্দেশ্য। 

আজকালের খবর/আরইউ








http://www.ajkalerkhobor.net/ad/1724840661.gif
সর্বশেষ সংবাদ
ঢাকা ওয়াসার এমডি হলেন ফজলুর রহমান
১ অক্টোবর থেকে বিমানবন্দর এলাকা হর্নমুক্ত ঘোষণা
বিএসএমএমইউ শিক্ষক নিপুণ গ্রেপ্তার
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গ্রেপ্তার
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগে শরিক হতে প্রস্তুত বিশ্বব্যাংক
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, ঘুরতে দেখা গেছে লোদি গার্ডেনে
যুবককে পিটিয়ে হত্যা: ঢাবির ৫ শিক্ষার্থী আটক
ঢাবির হলে চোর সন্দেহে গণপিটুনি, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির মৃত্যু
সেনাবাহিনীকে সব জায়গায় ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া ঠিক হবে না: ফখরুল
আগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭৬ জনের মৃত্যু: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft