১৯৯৬ সালের ৩১ আগস্ট। রাজশাহী থেকে ঢাকায় ছুটে এলেন দুই যুবক। তারা ধানমণ্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করতে এসেছেন। এক যুবকের নাম মো. তাঈদ উদ্দিন খান, অন্যজন মো. মহসিনুল হক। ধানমণ্ডি থানা এজাহারটি গ্রহণ করলেও তেমন অগ্রগতি চোখে পড়েনি। সেই সময়ের সকল পত্রিকা এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ে এই ঘটনা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়। এমনকি কিছুদিন আগেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আবদুল মান্নান ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এই ঘটনার উল্লেখ করেন। এ ছাড়া বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. নীলিমা ইব্রাহিম এক বক্তৃতায় এই ঘটনার উল্লেখ করেছিলেন। সিনিয়র সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজের ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও বিচার’ গ্রন্থেও ওই এজাহারের কথা উল্লেখ আছে। এই এজাহারপত্রে মন্তব্য করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ৫৬ নম্বর সাক্ষী ও এজাহার গ্রহীতা সেই সময়কার ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শফিক উল্লাহ এজাহারপত্রে লিখেছিলেন, ‘অত্র গণহত্যার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রহিয়াছে বিধায় আপাততভাবে নিয়মিত মামলা রুজ্জু না করিয়া উহা বিবেচনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহিত আলোচনাক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।’ সেই ঘটনার ২৮ বছর পেরিয়ে গেছে। এই ঘটনা নিয়ে অভিযোগকারীদের অন্যতম মো. তাঈদ উদ্দিন খান কথা বলেছেন আমাদের সঙ্গে। তিনি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিজ্ঞ আইনজীবী।
১৯৯৬ সালে আপনারা যখন এমন একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিলেন এর মানসিক প্রস্তুতি কবে থেকে নিচ্ছিলেন? কখন মাথায় এল যে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের সম্মুখিন করা উচিত?
তাঈদ উদ্দিন খান: ১৯৯৬ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান নেতা, স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২১তম শাহাদাত বার্ষিকী ভাবগাম্ভীর্য্যরে সঙ্গে সারাদেশে পালিত হয়। এই দিনটি আমাদেরকে ব্যথিত করে। তখন থেকেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া একান্ত দরকারÑ এই অনুভূতি আমাদের মনে তীব্রভাবে অনুভূত হতে থাকে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ প্যান্ডোরার বাক্স এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রতিবন্ধকতার প্রচার শুনে আসছি। ১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ওপর ৩২ নম্বর বাড়িকে ঘিরে ম. হামিদ প্রযোজিদ ‘সেই অন্ধকার’ নামক একটি ডকুমেন্টারি বিটিভিতে প্রচারিত হয়। এই ডকুমেন্টারিতে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মর্মস্পর্ষী বর্ণনা, ঘটনাস্থল, বিভিন্ন আলামত এবং প্রত্যক্ষ্যদর্শীসহ সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তির বক্তব্য তুলে ধরা হয়। এই ডকুমেন্টারি আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের ‘ধীরে বহে মেঘনা’ চলচ্চিত্রটিও এ মাসেই প্রচারিত হয়েছিল বিটিভিতে। সেখানে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘটনাবলী চিত্রিত হয়েছিল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। আরো চিত্রিত হয়েছিল বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতা আর গণহত্যার বীভৎসতা। ‘সেই অন্ধকার’ নামক ডকুমেন্টারিতে প্রচারিত বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মর্মস্পর্ষী বর্ণনা এবং ‘ধীরে বহে মেঘনা’ চলচ্চিত্রটিতে গণহত্যার দৃশ্য দেখেই বঙ্গবন্ধু, তার পরিবার ও স্বজনদের হত্যাকাণ্ড মানবতাবিরোধী ও গণহত্যাজনিত অপরাধ বলেই মনে হয়। এরপর গণহত্যা বিষয়ে দেশের প্রচলিত আইন কানুন ঘাঁটতে থাকি। আইনের ছাত্র হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানও দেখি। আমরা দেখতে পাই আমাদের সংবিধানে গণহত্যাজনিত অপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সুব্যবস্থা আছে। বঙ্গবন্ধুই সংবিধানে এ সংক্রান্ত বিধান রেখে গেছেন তার অসীম দূরদর্শিতা বলে। আমাদের সংবিধান পাঠ করে সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারি মানবতাবিরোধী এই নারকীয় গণহত্যাজনিত অপরাধ সংঘটনকারী সশস্ত্র বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী অফিসারের বিচার সংবিধানের আলোকে করা সম্ভব। ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ এক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়। এরপরই আমরা অভিযোগ দায়েরের মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকি।
৩১ আগস্ট ১৯৯৬-এর আগে পরে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী কোনো মহল বা ব্যক্তির সাথে আপনারা যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন?
তাউখা: না, তবে আমরা আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রফেসর আফম মহসিন স্যারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করি। তিনি বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখেন এবং আমাদেরকে সৎ সাহস যোগান। তার এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। এ ছাড়া স্থানীয় কয়েকজন বিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গেও মতবিনিময় করি। তারাও আমাদের সঙ্গে এই বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
ধানমন্ডি থানায় যে এজাহার বা অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সেটির ভাষা এক কথায় অসাধারণ। অনেকের সঙ্গে অভিযোগপত্রটি নিয়ে আমি কথা বলেছি, প্রত্যেকেই স্বীকার করেছেন যে এটি একটি অসামান্য অভিযোগপত্র। এটি লিখতে আপনারা কারো সাহায্য নিয়েছিলেন?
তাউখা: কোনো ব্যক্তির সাহায্য নেইনি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, ফৌজদারী কার্যবিধি এবং দণ্ডবিধি পাঠ করেছি। এ ছাড়া ’৭৫-এর এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ওপর লিখিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন, ডকুমেন্টারি, বিভিন্ন প্রকাশনা এবং বুদ্ধিজীবীদের লেখা ও আলোচনা সংগ্রহ করে পাঠ করেছি। এগুলো থেকে অর্জিত জ্ঞান ও ধারণার ভিত্তিতে আমরা অভিযোগপত্রটি লিখি।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারেই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার করা সম্ভবÑ এটি সর্বপ্রথম কখন জানতে পারলেন?
তাউখা: ১৯৯৬-এর আগস্ট মাসেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান পাঠ করে দেখতে পাই ৪৭(৩), ৪৭ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই গণহত্যাজনিত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার পরিস্কারভাবে করা সম্ভব।
অভিযোগপত্র নিয়ে যখন ধানমন্ডি থানায় গেলেন- সে মুহূর্তের অভিজ্ঞতা বলবেন কি?
তাউখা: ৩১ আগস্ট ১৯৯৬, আনুমানিক সময় বিকাল ৫ ঘটিকায় এই গণহত্যাজনিত ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে বিচারের জন্য অভিযোগ দায়ের করতে ধানমন্ডি থানায় যাই। ওই সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিক উল্লাহ থানায় উপস্থিত ছিলেন না। আমরা ডিউটি অফিসারের কাছে ১৩ পৃষ্ঠার হাতে লিখিত অভিযোগপত্র দাখিল করি। বিষয়টি তিনি দেখে তাৎক্ষণিকভাবে ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই ওসি থানায় আসেন এবং আমাদেরকে তার কক্ষে নিয়ে অভিযোগপত্রটি পাঠ করেন। আমরা তাকে অভিযোগপত্রটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার অনুরোধ জানাই। পাশাপাশি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান থেকে এ সংক্রান্ত কিছু অনুচ্ছেদ পাঠ করে শোনাই। এরপর তিনি ডিএমপি কমিশনারকে ফোন করেন এবং জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ওপর অভিযোগ নিয়ে এসেছেন, তারা আমাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান দেখাচ্ছেন। এখন আমি কি করবো স্যার?’ তখন ডিএমপি কমিশনার জানান, ‘তুমি ওদের ফিরিয়ে দিও না, তুমি অভিযোগটি গ্রহণ করো। আমি উপরে যোগাযোগ করছি।’ এরপর ওসি অভিযোগটি গ্রহণ করে আমাদের কপিতে লিখেন- ‘মূলকপি বুঝিয়া পাইলাম। অত্র গণহত্যার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রহিয়াছে বিধায় আপাততভাবে নিয়মিত মামলার রুজু না করিয়া উহা বিবেচনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহিত আলোচনাক্রমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।’
আপনারা অভিযোগপত্রে নিজেদেরকে বঙ্গবন্ধুর সন্তান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে আপনার নিজস্ব কোনো পর্যবেক্ষণ আছে?
তাউখা: চতুর্থ সংবিধান সংশোধন আইনের ৩৫(খ) ধারা বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতির পিতা। সেহেতু আমরা সবাই তারই সন্তান। এ কারণেই অভিযোগপত্রে আমরা নিজেদেরকে বঙ্গবন্ধুর সন্তান হিসেবে উল্লেখ করেছিলাম। বাঙালি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অপরিসীম। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান নেতা, স্বাধীনতার রূপকার।
১৯৯৬ সালের ৩১ আগস্ট আপনারা বঙ্গুবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ধানমন্ডি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সেই অনুভূতি বিস্তারিত বলেন।
তাউখা: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আমাদের ওপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনার্থে বঙ্গুবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ধানমন্ডি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলাম। এই অনুভূতি অন্য ধরনের। আমরা যে কাজ করেছিলাম এ দেশের প্রতিটি নাগরিকেরই এই দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। বিচারে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। ইতোমধ্যে ছয় জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এখন পলাতক সকল আসামীকে দেশে ফিরিয়ে এই রায় শতভাগ কার্যকর করতে পারলেই বাংলাদেশ অভিশাপমুক্ত হবে।
সম্প্রতি কানাডা টেলিভিশনের এক প্রতিবেদনে পলাতক এক খুনীর অবস্থান সনাক্ত হয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জনদাবী এখনো আশার আলো দেখেনি। এই বিষয়ে আপনার ভাবনা আমাদের সরকারের করণীয় কী হওয়া উচিত?
তাউখা: হ্যাঁ, অনেকদিন পর খুশী হওয়ার মতো একটি খবর পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীর বর্তমান অবস্থান সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে এবং কানাডার একটি টিভি চ্যানেল দীর্ঘ সাত মাস এই খুনিকে অনুসরণ করে একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে।
টেলিভিশনটির অনুসন্ধানী বিভাগ ‘দ্য ফিফথ স্টেট’ এ ‘দ্য অ্যাসাসিন নেক্সট ডোর’ শিরোনামের ৪২ মিনিটের এই প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয় বাংলাদেশ সময় গত নভেম্বরে। প্রতিবেদনে টরোন্টোর নিজ ফ্লাটের ব্যালকনিতে নূর চৌধুরীকে দেখানো হয়। এ ছাড়া গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নূর চৌধুরীকে ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা অবস্থায় দেখা যায়। কিন্তু প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা না বলে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে যান তিনি। দীর্ঘদিন অনুসরণ করে তাকে খুঁজে বের করেছে ফিফথ স্টেটের অনুসন্ধানী দল।
কানাডার টরোন্টো থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরের এলাকা ইটোবিকো। সেখানে একটি কনডোমিনিয়ামের তিনতলায় থাকেন প্রায় ৭০ বছর বয়সী বঙ্গবন্ধু হত্যার এই খুনি। প্রতিদিন বিকালে ব্যালকনিতে আসেন। কানাডায় মুক্তভাবে জীবনযাপন করলেও প্রথমবারের মতো তার দেখা পাওয়া গেল ক্যামেরায়। এর ফলে আমরা আশাবাদী হয়ে উঠেছি। কিন্তু কানাডায় নিযুক্ত আমাদের কূটনীতিকদের ব্যর্থতায় বন্দী বিনিময় চুক্তি এখনো সম্পাদিত হয়নি। কানাডা তার দেশের মানবাধিকার দেখছে, কিন্তু একটি দেশের জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড যে কত বড়ো মানবাধিকার লঙ্ঘন সেটি আমলে নিচ্ছে না।
পলাতক বিভিন্ন খুনীর অবস্থান এখনো অনিশ্চিত। রিসালদার মুসলেহউদ্দিন, মেজর ডালিম, মেজর রশিদ প্রমুখের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিষ্ক্রিয়তায় আপনি কি ক্ষুব্ধ?
তাউখা: আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনিকে এখনো ফিরিয়ে আনা যায়নি। এটি আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতা। তাদের মধ্যে নূর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরীর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত। বাকি তিনজনের অবস্থান অজানা।
এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনিকে দেশে ফেরানো ও সাজার মুখোমুখি করা নিয়ে সংশয় কাটছে না, একথা অস্বীকারের উপায় নেই।
মূলত আইনি জটিলতায় কানাডা থেকে নূর চৌধুরী এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরানো ঝুলে আছে। অন্যদিকে পালিয়ে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য তিন খুনি খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও রিসালদার মোসলেহউদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।
কানাডা মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করায় দেশটি থেকে নূর চৌধুরীকে ফেরানোর ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা রয়েছে। আর ২০২০ সালের জুনে মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয়সংক্রান্ত মামলার নথি তলব করেছিল। মামলাটি পুনরায় সচল হলে রাশেদ চৌধুরীর রাজনৈতিক আশ্রয় বাতিল হওয়ার সুযোগ তৈরি হতো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলের পর সে প্রক্রিয়াও ঝুলে গেছে। সব মিলিয়ে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শেষ পর্যন্ত ফেরানো যাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
সাম্প্রতিক কালে বেশ কয়েকবার সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার কাছে যথাক্রমে রাশেদ চৌধুরী ও নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়। তবে দুই দেশই বরাবরের মতো বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ার আওতাধীন বলে উল্লেখ করেছে। তবে অন্য খুনীরা পাকিস্তানে আছে বলে অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং এর বিচার নিয়ে আপনি বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকাশনা আমরা পেতে পারি কি?
তাউখা: হত্যাকারীদের নিয়ে প্রথম এজাহার এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে আমার একাধিক লেখালেখি আছে। আছে সাক্ষাৎকার। এ ছাড়া এই ঘটনা নিয়ে ১৯৯৬ থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন জন লেখালেখি করেছেন, সেগুলো সম্পাদনা করে একটি বই প্রকাশের ইচ্ছে আছে।
আপনাকে ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।
তাউখা: আপনাকেও।
আজকালের খবর/আরইউ