খান ইউনিসের পশ্চিমে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ বলে ঘোষিত আল-মাওয়াসি এলাকার একটি শিবিরে ইসরায়েলি হামলার পর কান্নায় ভেঙে পড়েছেন এক ফিলিস্তিনি নারী। গত ১৩ জুলাইয়ের ছবি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় আরও অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গাজার একটি স্কুলে বর্বর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ৩০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
হামলায় আহত হয়েছেন আরও শতাধিক মানুষ। বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা এই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
শনিবার (২৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের কাছে একটি স্কুলে ইসরায়েলি বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। ওই স্কুলে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, দেইর আল-বালাহ শহরের খাদিজা স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ওই স্কুলে হামলায় নিহতদের মধ্যে ১৫ জন শিশু ও আটজন নারী রয়েছেন এবং আরও ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) টেলিগ্রামে বলেছে, খাদিজা স্কুলের ভেতরে হামাসের একটি কমান্ড এবং নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ছিল। তাদের দাবি, হামাস হামলার নির্দেশনা ও পরিকল্পনা এবং অস্ত্র মজুদ করার জন্য গোপন স্থান হিসাবে ওই কম্পাউন্ড ব্যবহার করেছিল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ফুটেজে দেখা গেছে নিহতরা বেসামরিক নাগরিক এবং তাদের বেশিরভাগই শিশু। বিবিসি একটি ভিডিও যাচাই করেছে, যাতে আহতদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে বলে দেখা গেছে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস জানিয়েছে, স্কুলটিতে বাস্তুচ্যুত লোকেরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, স্কুলটি সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে এমন খবর মিথ্যা এবং ‘বাস্তুচ্যুত, অসুস্থ এবং আহত মানুষ, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু’ তারা এই হামলায় নিহত হয়েছেন।
মোস্তফা রাফাতি নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেন, বিস্ফোরণে তার শরীর কেঁপে ওঠে এবং তিনি পড়ে যান। ভয় পেয়ে তিনি স্কুলের ভেতরে দৌড়ে গিয়ে যান এবং সেখানে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পড়ে থাকার মতো ‘ভয়ঙ্কর দৃশ্য’ দেখতে পান।
বিবিসি বলছে, ঘটনাস্থল থেকে যাচাইকৃত ভিডিওতে সেখানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। ভিডিওতে লোকজনকে ধ্বংসস্তূপে আবৃত কম্পাউন্ডের চারপাশে দৌড়াতে দেখা যাচ্ছে। পুরুষরা তাদের হাতে করে দুটি রক্তাক্ত শিশুকে বহন করছে এবং একজন নারীকে আরেকজনকে আলিঙ্গন করতেও দেখা যাচ্ছে। এছাড়া আহত ব্যক্তিকে স্ট্রেচারে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি কম্বলে ঢেকে মাটিতে লাশ পড়ে থাকতেও দেখা যায়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার সকাল থেকে দেইর আল-বালাহ এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে ইসরায়েলি সামরিক বহিনীর বোমা হামলায় ৫৩ জন নিহত ও আরও ১৮৯ জন আহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গাজায় চলমান আগ্রাসনে প্রায় ৩৯ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আরও ৯০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই বর্বর আগ্রাসনে আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
আজকালের খবর/বিএস