বুধবার ১৪ মে ২০২৫
কোটা ব্যবস্থা থাকা না থাকা
ড. খুরশিদ আলম
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪, ৭:৫২ PM
কোটা হচ্ছে ক্ষতিপূরণ নীতির অংশ, যা চাকরির ক্ষেত্রে মেধার নীতিকে বাদ দিয়ে ক্ষতিপূরণ নীতি অনুসরণ করে করা হয়। আর এ কোটা কেবল চাকরির ক্ষেত্রে হবে এমন নয়, শিক্ষার ক্ষেত্রে, প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে, এমনকি কোনো কোনো দেশে সামরিক বাহিনীতে জোয়ান নিয়োগের ক্ষেত্রেও করা হয়। আর এ কোটা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে কিছু হিসাব-নিকাশ করা হয়। যেমন, কোন জনগোষ্ঠী কতটা পিছিয়ে আছে, তাকে কত কোটা দিলে সে এগিয়ে আসতে পারবে এবং অগ্রসরমান জনগোষ্ঠীর সমান হবে, আর তা কত বছরে কতটা এগিয়ে আসবে ইত্যাদি জটিল হিসাব থেকে তা নির্ধারণ করা হয়।   

ভারত, পাকিস্তানে কোটা আছে। ভারতীয় উপমহাদেশে কোটার প্রচলন শুরু হয় ১৯১৮ সালে। ভারতে মোট চার ধরনের কোটা রয়েছে; উপজাতি কোটা, বিভিন্ন জাত ভিত্তিক কোটা, অন্যান্য অনগ্রসরদের জন্য কোটা এবং বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘু কোটা। তাদের মধ্যে উপজাতি কোটা সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ; জাতভিত্তিক কোটা ১৫ শতাংশ এবং সংখ্যালঘু ও অন্যান্য অনগ্রসরদের জন্য ২৭ শতাংশ কোটা ভারতে সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষায় বিদ্যমান। একটি পরিবারের মাত্র একজনই কোটা সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে এবং যদি কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য কোটা গ্রহণ করে তবে সে চাকরিতে কোটা সুবিধা পাবে না।

সম্প্রতি বাংলাদেশে কোটা নিয়ে বেশ বিতর্ক হচ্ছে। দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৯৭২ সালে কোটা চালু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন সংস্থাপন সচিবের এক নির্বাহী আদেশে কোটা পদ্ধতি প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। তবে ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক কোটা বিরোধী আন্দোলন হয়। তার প্রেক্ষিতে নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দেয় সরকার। তার আগে এসব পদে চালু থাকা কোটার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা ৩০ শতাংশ (ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনি); নারী ১০ শতাংশ; জেলা কোটা ১০ শতাংশ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য পাঁচ শতাংশ। এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে এক শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে। কিন্তু এ কোটা নীতির মধ্যে সবচেয়ে আলোচনা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কারণ এটি পরিমাণে অনেক বেশি বলে মনে করছেন কেউ কেউ। দেখা যায়, একদিকে মেধাবীরা চাকরি পাননি, আবার অন্যদিকে ২৮-৩৮ তম বিসিএসের বিভিন্ন ক্যাডারে অন্তত ছয় হাজার পদ খালি ছিল। এমনকি আলাদাভাবে শুধু কোটা পূরণের জন্য ৩২তম বিসিএস করা হলেও সেখানে সকল কোটার মোট এক হাজার ১২৫টি পদ শূন্য ছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সহ অন্য প্রতিষ্ঠানে একই অবস্থা দেখা যায়। এ কারণে কোটা ব্যবস্থার পক্ষে ও বিপক্ষে নানারকম যুক্তি দেখা যায়।

কোটার পক্ষে
মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রসঙ্গে তাদের দাবি হচ্ছে ১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাদের বেশিরভাগ ছিল অতি সাধারণ মানুষ, কৃষক এবং শ্রমিক। তাদের রাষ্ট্রীয় চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তেমন যোগ্যতা ছিল না। তারা তেমন পড়াশোনা করার সুযোগ পায়নি। তাই তাদের সরকারি চাকরিতে ঢোকার জন্য কোটা দরকার। আবার তাদের অনেকের চাকরির বয়স স্বাধীনতার মাত্র আট থেকে ১০ বছরের মধ্যে চলে যায়। তাই তাদের সন্তানদের জন্য এ সুযোগ রাখা দরকার। যেমন, তিনি যদি ৭২ সালে বিয়ে করেন তাহলে তার ছেলের চাকরি সুযোগ ছিল ২০০০ সাল পর্যন্ত। আর যারা আগে বিবাহ করেছেন তাদের সে সুযোগ আরো আগে শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং যুক্তির খাতিরে ধরে নেওয়া যাক তাদের সন্তানদের ৬০-৮০ শতাংশ সে সুযোগ ২০০০ সালের আগেই শেষ হয়ে গেছে। এদিকে তারা যেহেতু তেমন লেখাপড়া করতে পারেনি তাদের আয়-রোজগার তেমন ভালো ছিল না, ফলে তাদের সন্তানরাও তেমন ভালো লেখা-পড়া শিখতে পারেনি। তাই তাদের নাতি-নাতনীদের জন্য এ সুযোগটা রাখা যেতে পারে।  মুক্তিযোদ্ধা কোটা প্রসঙ্গে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত।’ কোটার যথাযথ প্রয়োগের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, ‘কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আছেন, ছাত্র আছেন; যারা কোটার সুবিধা নিয়েছেন। যে একবার ভর্তির ক্ষেত্রে সুযোগ পান তাহলে চাকরির ক্ষেত্রে আবার চান, সেটি ঠিক হবে না। যদি কেউ ভর্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করে, তাহলে চাকরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন না। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, মুক্তিযোদ্ধার পরিবার যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল এখানে নানাভাবে বৈজ্ঞানিকভাবে ক্যাটাগরি করা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে প্রয়োগ করা হয়। মেধাবীরা চাকরি পাক সেটি আমরা অবশ্যই চাইবো। একইসঙ্গে সমাজে যারা পিছিয়ে পড়া, তারা যেন সামনে আসতে পারে, সেটাও দেখা দরকার’।

কোটার  বিপক্ষে
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে কোটা হচ্ছে ক্ষতিপূরণ নীতির অংশ। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটা হচ্ছে পুরস্কৃত করার নীতি। এই পুরস্কৃত করার নীতি সামাজিক ন্যাযাতা বিরোধী, নৈতিকতা বিরোধী এবং সাম্য বিরোধী।

কোটাবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের একজন আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘সরকারি চাকরির নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো কোটা থাকার এখন আর কেনো যুক্তি নেই। কারণ এখন যারা এই সুবিধা পাচ্ছেন তারা তৃতীয় প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সন্তান। তাদের নাতি-পুতিরা পাচ্ছেন। এটি হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধে তাদের যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য ওই কোটা ছিলো। এখন তো আর দরকার নেই।’

আবার মুক্তিযুদ্ধে যারা প্রাণ দিয়েছেন তা হলে আবার ৩০ লাখ লোকের সবাইকে সে কোটায় আনতে হবে। এদের আবার কোনো তালিকাও নেই।

আপত্তির আরেকটি কারণ, এখানে কোটার হার সবচেয়ে অসমানুপাতিক এবং একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নাতি-নাতনি এই কোটার অন্তর্ভুক্ত। যেমন, পিতার অপরাধে ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনিকে শাস্তি দেওয়া যায় না, তেমনি পিতার সম্মানও পুত্র এবং ছেলে-মেয়ে ও নাতি- নাতনিকে দেওয়া যায় না। কারো পক্ষে ভুয়া নারী বা ভুয়া প্রতিবন্ধী হওয়ার সুযোগ নেই, কিন্তু ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা আমাদের দেশে রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

বিবেচ্য বিষয়
আমাদের সংবিধান বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে সবার নিয়োগলাভের সমান অধিকার থাকবে। পাশাপাশি বাস্তবতা বিবেচনায় সংবিধান প্রণেতারা সমাজের অনগ্রসর শ্রেণির জন্য কোটা সংরক্ষণের বিধানও রেখেছেন। এখন উচ্চতর সিভিল সার্ভিসের মেধার মাধ্যমে নিয়োগ পান মাত্র ৪৫-৫০ শতাংশ প্রার্থী। এর মধ্যে আছে প্রশাসন, কূটনীতিক, পুলিশ থেকে সরকারি কলেজের শিক্ষক আর চিকিৎসক। একইভাবে নিয়োগ হয় নিম্ন আদালতের বিচারক পদেও। তবে সামরিক বাহিনীর কমিশন্ড অফিসার পদে কোনো ধরনের কোটা নেই, মেধাই একমাত্র নিয়োগের মাপকাঠি।

বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমানে ২০ হাজার টাকা মাসিক ভাতা দেওয়া হচ্ছে। গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর দেওয়া হচ্ছে। সকলে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে গেছেন, তাদের পেনশন দেওয়া হচ্ছে। মারা গেলে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেওয়া হচ্ছে। আবার সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলে মেয়েরাও এখন চল্লিশের কোটায় বা তার বেশি বয়সে পৌঁছে গেছেন। তারা এখন জাতির দায়িত্ব নেওয়ার কথা, জাতি তাদের দায়িত্ব নেওয়ার কথা নয়।

কোটা আছে উপজাতি, মহিলা, জেলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য। এর পরিমাণ ২৫ শতাংশ। আর মুক্তিযোদ্ধার পোষ্যদের প্রাধিকার কোটা ৩০ শতাংশ। স্বাধীনতার পরপর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটায় নিয়োগ এর যৌক্তিকতা ছিল। তবে একে স্থায়িত্ব দেওয়ার নৈতিক দিকটি ঠিক নয়। তাদের মধ্যে সমাজের অনগ্রসর শ্রেণির যারা আছে তাদের জন্য এটি যৌক্তিক। তাহলে কেবল তাদের জন্য কোটা রাখা যেতে পারে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার আছে, যাদের আর্থিক অবস্থা অনেক ভালো, অনেক শিল্পপতিও আছেন। এখন পর্যন্ত যত মুক্তিযোদ্ধা নিবন্ধিত হয়েছেন, তাদের অনেকের বিষয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আছে। আবার এদের পোষ্যের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ হবে। এদের ক্ষেত্রে তাদের জন্য ৩০ শতাংশ চাকরির প্রাধিকারের যৌক্তিকতা নেই।
একই ব্যক্তি বারবার মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবহার করছেন, যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময়, চাকরির সময় ইত্যাদি। একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি কোটা ব্যবহার করছে বলে নিয়ম রয়েছে, যেমন ছেলে এবং মেয়ে বা নাতি এবং নাতনি যা যে কোনো সংখ্যার হতে পারে।

উপজাতি কোটা দেশে তাদের সংখ্যানুপাতে অনেক বেশি। অন্যদিকে এর সুফল ভোগ করছে গোটা তিনেক তুলনামূলকভাবে উন্নত সম্প্রদায়। সাঁওতাল, মুন্ডার মতো সমতলের উপজাতিদের কোনো প্রতিনিধিত্ব সিভিল সার্ভিসে দৃশ্যমান হয় না। তাই এই কোটার পরিমাণ ও বিন্যাস নিয়ে কিছু ভাবার আছে।

উপসংহার
পরিশেষে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা, নারী কোটা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা ইত্যাদিও সকল কোটা পুনঃমূল্যায়ন করা দরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের কত শতাংশ অনগ্রসর তা যাচাই করে তাদের সন্তানদের জন্য কোটা রাখা যেতে পারে তবে তাদের নাতি এবং নাতনিদের জন্য নয়। তারা যদি অস্বচ্ছল বা পিছিয়ে পড়া হয়, তাহলে স্বাভাবিক কোটাতে তারা সে পিছিয়ে পড়ার সুযোগ পেতে পারেন। এর জন্য আগে সমাজবিজ্ঞানীর নেতৃত্বে একটি কমিশন করা দরকার। সে কমিশন ঠিক করবে কোটা থাকবে কিনা এবং থাকলে কার জন্য থাকবে এবং কতটা থাকবে। এটি আইনের লড়াইয়ের বিষয় নয়। মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার কারণকেই যদি পিছিয়ে না পড়ে তাহলে তার জন্য কোটা লাগবে কেন?
 
লেখক : সমাজবিজ্ঞানী ও গবেষক। চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশাল রিসার্চ ট্রাস্ট।

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
বিভেদ আমাদের সর্বনাশ ডেকে আনবে: সারজিস আলম
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধে উদ্বিগ্ন ভারত
কমার একদিন পরই বাড়লো সোনার দাম
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসি-কোষাধ্যক্ষকে অব্যাহতি
রাঙ্গামাটি প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দের সাথে সিআরএ'র মতবিনিময় সভা
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মমতাজ, ৭ দিনের রিমান্ড চাইবে পুলিশ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ইউট্যাবের নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন
সখিপুরে দুই ইউপি চেয়ারম্যনের কক্ষে তালা
আন্দালিব রহমান পার্থের স্ত্রীকে বিদেশ যেতে বাধা
সারাদেশে এনআইডি সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft