বাজেটে ইলেকট্রিক গাড়ি, লিথিয়াম ব্যাটারি ও চার্জিং স্টেশনকে প্রাধান্য দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ অটোমোবাইল অ্যাসেম্বেলারস অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএএমএ) এবং বাংলাদেশ ইলেকট্রিক মোবিলিটি অ্যাসোসিয়েশন (বিইএমএ)। যা বিশ্বব্যাপী চলমান ইলেকট্রিক ভেহিকেল উৎপাদন, বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনাকেও বাঁধাগ্রস্ত করবে বলেও মন্তব্য করেছেন সংগঠন দুটির নেতারা।
বুধবার (১২ জুন) রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও বাজেট পরবর্তী এক আলোচনা সভায় এ অভিযোগ করেন সংগঠন দুটির নেতারা।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, অর্থমন্ত্রী গত ০৬ জুন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। বর্তমান অর্থনীতি পরিস্থিতি বিবেচনায় অর্থনীতি গতি পুনরূদ্ধারে যা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী।
বক্তারা আরও বলেন, এবারের বাজেট প্রতিপাদ্য বিষয় ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অন্যতম উপাদান হল স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা। স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ইলেকট্রিক ভেহিকেলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আশা ছিল স্মার্ট পরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম উপাদান ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্প বিকাশে প্রয়োজনীয় সহায়তামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে, কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে যা প্রতিফলিত হয় নি। যা এই শিল্পের প্রসারকে এবং মুজিব ক্লাইমেট প্রোসপারেটি প্ল্যান ২০৩০ এ গৃহীত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে না। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী ইতোমধ্যে চলমান ইলেকট্রিক ভেহিকেল উৎপাদন, বিপণন, বিক্রয় ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে চলার মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজার ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনাকেও বাঁধাগ্রস্থ করবে।
বক্তারা বলেন, আসন্ন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্প উন্নয়নে বৎসরভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহন করে বিনিয়োগের শর্তসাপেক্ষে আগামী দুই বছর সিবিউ অবস্থায় ইলেকট্রিক গাড়ি আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক মওকুফ করন সহ সর্বনিম্ন কাষ্টমস ডিউটি নির্ধারণ এবং পরবর্তী ১০ বছর ইঞ্জিন চালিত গাড়ির ন্যায় ইলেকট্রিক গাড়ির প্রোগ্রেসিভ ম্যানুফ্যাকচারিং এর ওপর ভিত্তি করে কর কাঠামো নির্ধারণ করার প্রস্তাব করছি এবং নতুন ইলেকট্রিক ভেহিকেল রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স মওকুফ সহ প্রতিবছর গাড়ির ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেন প্রদানের ক্ষেত্রে অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স মওকুফের প্রস্তাব করছি। এ ছাড়া ইলেকট্রিক ভেহিকেলে ব্যবহৃত লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ও চার্জিং স্টেশন স্থাপনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির ওপর সর্বনিম্ন হারে আমদানি শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। ইলেকট্রিক মোটর শিল্প বিকাশে এই শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান করায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
বক্তারা বলেন, বায়ুদূষণ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে পৃথিবীর উন্নয়নশীল ও উন্নত রাষ্ট্রগুলি ইলেকট্রিক ভেহিকেলের ব্যবহারের উপর অধিকতর গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ইলেকট্রিক ভেহিকেলের দ্রুত প্রসারে এই শিল্পের উন্নয়ন ও ব্যবহারকারীকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন ধরনের কর সুবিধা ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করেছে। যেমন: পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সিবিউ অবস্থায় ইলেকট্রিক ভেহিকেল আমদানির ওপর বিনিয়োগের শর্তসাপেক্ষে আমদানি শুল্ক ১৫% নির্ধারণ, আয়কর আইনের ৮০ ইইবি ধারার আওতায় প্রথমবার ইলেকট্রিক ভেহিকেল ক্রয়ের জন্য গৃহীত ঋণের মোট ১.৫ লাখ রুপি পর্যন্ত কর সুবিধা প্রদানসহ বিনা মূল্যে ইনস্যুরেন্স ও রেজিস্ট্রেশন, সকল ইলেকট্রিক ভেহিকেলের ওপর GST সুবিধা প্রদান, মূল্যের ওপর ৪০% পর্যন্ত প্রণোদনা প্রদান করেছে। অনুরূপভাবে ইউরোপ, আমেরিকা, চীন ইলেকট্রিক ভেহিকেল প্রসারে কর ছাড় সহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা প্রদান করেছে। যেমন: রেজিস্ট্রেশন ও রোড ট্যাক্স, পার্কিং ফি, টোল, আমদানি কর মওকুফ, নিম্ন হারে লোন সুবিধাসহ মূল্যের উপর নগদ সুবিধা প্রদান করেছে।
বক্তারা বলেন, ইলেকট্রিক ভেহিকেল একটি প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প। এই শিল্প উন্নয়নে অতি দ্রুত কার্যকরী দিক নির্দেশনা প্রদান করা হলে আগামী দিনে বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্পের হাব হিসেবে গড়ে উঠবে। অটোমোবাইলের মত প্রযুক্তি নির্ভর ভারী শিল্প গড়ে তুলতে সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগীতা ছাড়া শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব নয়। উল্লেখ্য যে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় দেশে আজ মোটরসাইকেল শিল্পে দেশি-বিদেশি প্রায় ৮০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এবং ২ লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় দেশে আজ গাড়ি সংযোজন শিল্প গড়ে উঠেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতি সহায়তায় বেশ কিছু ব্র্যান্ড এ দেশে গাড়ি উৎপাদনে কারখানা স্থাপন করেছে। ইলেকট্রিক ভেহিকেল শিল্পের উন্নয়নে সরকারের নীতি সহায়তা প্রদান করা হলে আমদানি নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উৎপাদনমুখী শিল্পে অগ্রসর হবে।
আজকালের খবর/এসএইচ