আগামী ১৭ জুন ঈদুল আজহা কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় বসছে কোরবানির পশুর হাট। বিভিন্ন এলাকায় ১৯টি পশুর হাট বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন। একটি বাদে সব হাটের ইজারা শেষ করেছে সংস্থা দুটি। হাট সাজানোর প্রস্তুতিও প্রায় সম্পন্ন। এরই মধ্যে সারা দেশ থেকে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশু। ১৩ জুন থেকে পুরোদমে চলবে বেচাবিক্রি।
ট্রাক ও পিকআপ বোঝাই করে দলবদ্ধ হয়ে হাটে গবাদি পশু আনছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। হাট শুরুর আগেই নির্ধারিত স্থানে গবাদি পশু রেখে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। উৎসুক ক্রেতারা আগেই হাটে এসে দরদাম জানার চেষ্টা করছেন। ইজারার শর্তানুযায়ী, পাঁচ দিন কোরবানির পশু কেনাবেচা করতে পারবেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
সরেজমিন রাজধানীর কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা যায়, হাজারীবাগ, ঢাকা পলিটেকনিক কলেজ মাঠ, মিরপুর ৬ নম্বর ইস্টার্ন হাউজিংয়ের মাঠের হাট প্রস্তুত করা হয়েছে। কোরবানির পশুও উঠেছে হাটে। দেশের সর্ববৃহৎ হাট গাবতলী ও সারুলিয়ার স্থায়ী হাট পশুতে ভরে উঠেছে। আগেভাগে চলে আসা বিক্রেতারা বলছেন, সড়কের দুর্ভোগ মাড়াতে তারা আগেভাগে চলে এসেছেন।
গাবতলী হাট ঘুরে দেখা যায়, নানা ধরনের পশুতে ভরে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ এই গবাদি পশুর হাট। ক্রেতার আনাগোনাও বেড়েছে। নিয়মিত মাংসের চাহিদা পূরণের পশু বিক্রির পাশাপাশি কোরবানি উপলক্ষেও পশু বিক্রি শুরু হয়েছে এই হাটে।
হাজারীবাগের বাসিন্দা সাফায়েত হোসেন জানান, গাবতলী হাটে এসেছি। পশু দেখছি। প্রতি বছর আগেভাগে পশু কিনি। বাড়িতে পশু রাখার জায়গা থাকায় ঝামেলা এড়াতে এটা করি। তা ছাড়া পরিবারের সবাই মিলে পশুকে খাবার খাওয়াই। যেহেতু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোররবানি করা, তাই কিছুদিন পশুকে যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করে থাকি।
পাবনার বেড়া থেকে আসা পশু বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, সড়কের দুর্ভোগ এড়াতে আগেভাগে এসেছি। আশা করি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পশু বিক্রি করে বাড়ি ফিরে যেতে পারব। হাটের সার্বিক পরিবেশ ভালো রয়েছে, তেমন কোনো অসুবিধা নেই। তবে গরমের কারণে কষ্ট হচ্ছে বলে জানান তিনি।
দনিয়া কলেজের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উত্তর পাশে ফাঁকা জায়গায় বাঁশ পুঁতে, শামিয়ানা টানিয়ে শত শত গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। হাটের সীমানা যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার থেকে প্রায় শনিরআখড়া পর্যন্ত চলে গেছে। হাটে ট্রাক ও পিকআপে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে আসছেন ব্যাপারীরা। তবে হাট এখনো জমে ওঠেনি। অনেককে দরদাম করতে দেখা গেছে। ধোলাইখাল, রহমতগঞ্জে পশুর হাটেও দেখা গেছে প্রায় একই চিত্র।
আফতাবনগরে হাট বসছে না: আফতাবনগর এলাকাটি ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ দুই অংশে পড়ায় সেখানে দুই সিটি করপোরেশন পশুর হাট ইজারা দিয়ে থাকে। তবে আফতাবনগর এলাকার বাসিন্দাদের প্রতিবাদে তা আর হচ্ছে না। সংক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই হাটের দরপত্র বিজ্ঞপ্তির ওপর স্থগিতাদেশ নিয়েছেন উচ্চ আদালত থেকে। তবে দুই সিটি করপোরেশন এখনো সেখানে হাট না বসানোর ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে কোনো কিছু বলেনি। শেষ মুহূর্তে হাট বসানো হয় কি না তা নিয়েও আলোচনা রয়েছে।
ঢাকা উত্তরের পশুর হাট: ভাটারা সুতিভোলা খালসংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা দিয়াবাড়ী ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরসংলগ্ন বউবাজার এলাকার খালি জায়গা, মিরপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বসিলার ৪০ ফুট রাস্তাসংলগ্ন খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসংলগ্ন খালি জায়গা, খিলক্ষেত থানাধীন ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মস্তুল চেকপোস্টসংলগ্ন পশ্চিমপাড়ার খালি জায়গা, উত্তরার ভাটুলিয়া সাহেব আরী মাদরাসা সংলগ্ন খালি জায়গা এবং গাবতলী স্থায়ী গবাদি পশুর হাট।
ঢাকা দক্ষিণের হাট: উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, পোস্তগোলা শশ্মানঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন খালি জায়গা ও কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, শ্যামপুর কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ডসংলগ্ন খালি জায়গা এবং সারুলিয়া স্থায়ী কুরবানির পশুর হাট।
আজকালের খবর/এসএইচ