সোমবার ১৯ মে ২০২৫
আজিমের খণ্ডিত দেহ ও অখণ্ডিত প্রশ্ন
মোস্তফা হোসেইন
প্রকাশ: বুধবার, ২৯ মে, ২০২৪, ৭:৫২ PM
গণমাধ্যমে এখন এমপি আজিমের হত্যাকাণ্ডের চুলচেরা বিশ্লেষণ ও সংবাদে ভরে আছে। হয়তো আরো কয়েক দিন এমনটি চলতে থাকবে। আলোচনা ও সংবাদগুলো কখনো সাংবাদিকতার নীতিমালাকেও ডিঙিয়ে যাবে, কখনো আবেগ এবং হতাশারও মূল্যায়ন-বিশ্লেষণ হবে। হাল আমলে প্রযুক্তিগত সুবিধা ব্যবহার করে পাঠক প্রতিক্রিয়াও যুক্ত হচ্ছে। পাঠক প্রতিক্রিয়াগুলো অনেক প্রশ্নের জন্ম দেওয়ার মতো। এমপি আজিমের এই সংবাদের পাশাপাশি পাঠক-দর্শকের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমদকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেদেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সংবাদে। তারও আগে সাবেক পুলিশ বাহিনীর প্রধান বেনজীর আহমদের প্রদর্শিত আয়ের চেয়ে অধিক মূল্যের সম্পদের মালিক হওয়ার সংবাদ নিয়েও তোলপাড় কম হয়নি সংবাদমাধ্যমে।

এসব সংবাদের রাজনৈতিক ব্যবহার হতেও দেরি করেনি আমাদের রাজনীতিবিদগণ। বিরোধী দল গলা ফাটিয়ে বলতে শুরু করেছে- এই দেখো, সরকারের অবস্থা! আগাগোড়া দুর্নীতিতে সয়লাব হয়ে গেছে। তাদের এই সুযোগ নেওয়াটা স্বাভাবিক। একটি গণতান্ত্রিক দেশে এভাবে দুর্নীতির সমালোচনা করবে বিরোধী দল, এটিই গণতান্ত্রিক নিয়ম।

বেনজীর আহমেদ কিংবা আজিজ আহমেদ এখনো আদালতের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হননি। তাই তাদের আইনানুগভাবে এখনো দুর্নীতিবাজ বলার সুযোগ নেই। হয়তো তারা দুর্নীতি করেও থাকতে পারেন, আবার আদালতে তারা নির্দোষও প্রমাণ হয়ে যেতে পারেন। টেলিভিশনে দেখলাম, সাবেক সেনাপ্রধান নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন এই বলে যে তার চাকরিকালে কথিত দুর্নীতির কোনো প্রমাণ যদি কেউ হাজির করতে পারেন, তিনি যেকোনো শাস্তি মাথা পেতে নেবেন।

প্রাসঙ্গিকভাবে তাদের বিষয়টি আলোচনার বাইরে রেখে যদি দুর্নীতির আলোচনা করা হয়, তাহলেও কি সহনীয় মাত্রা পাওয়া যাবে? মাঠের আলোচনায় বলা যায়, হাটে-মাঠে দুর্নীতি বাতাসের মতো ছড়িয়ে আছে। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকার কারণে সেসব ঘটনা ওইভাবে প্রকাশ হচ্ছে না।

সরকারের সহযোগী প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন চাঞ্চল্যকর মামলা নিয়ে দৌড়ে কূল পায় না। তারা নিজেরা যে অনুসন্ধান করে কিছু বের করবে, এমন সক্ষমতা তাদের আছে কিনা জানা নেই। এমনও মনে করা যায়, তাদের যেন অনুসন্ধান করে বের করা দায়িত্বভুক্তও নয়। তারা অপেক্ষা করে কখন মিডিয়ায় কোনো কীর্তিমানের প্রসঙ্গ প্রকাশ হবে। আর তারা সেই চিহ্নিত ব্যক্তির পেছনে পাইক-পেয়াদা নিয়ে দৌড়াবে।
কখনো কখনো মনে হয় মাঠের বড় বিরোধী দলটি জোরগলায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলতেও চাইছে না। মুখরক্ষার খাতিরে বলা দরকার, তাই টুকটাক বলছে। কারণ তাদের আমলে যে বিশ্বকলঙ্কের অধিকারী ছিল বাংলাদেশ। তাও এক দুইবার নয়। পাঁচবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার ভাগ্য হয়েছিল দুর্নীতিতে। সুতরাং তারা যতটা নিরাপদ দূরত্ব রেখে কথা বলতে পারে সেটিই ভালো।

প্রশ্ন হচ্ছে, অভিযোগ অনুযায়ী সরকারি দল দুর্নীতি রোধে ব্যর্থ হয়েছে, বিরোধী দল তাদের আমলের রেকর্ডের কারণে জোর গলায় কিছু বলতে পারছে না। তাহলে দেশটার অবস্থা হবে কী? নাকি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে না পারার দুঃখ আমাদের উসকে দিচ্ছে?

বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা নিয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। সেক্ষেত্রে বিরোধী দলের অভিযোগগুলো পাতে জায়গা পায় না, এটি আমার ধারণা। অন্তত মানুষ সেই উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে, এটি জোর দিয়েই বলা যায়। এর ফিরিস্তিও মোটামুটি লম্বাই হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবর্তমানে ভবিষ্যতে যখন ইতিহাস লেখা হবে, নিশ্চিত বলা যায়, তাকে স্মরণ করতে হবে দীর্ঘদিন- শুধু তার উন্নয়ন সাফল্যের কারণে। কিন্তু তার কাছে সাধারণ মানুষের চাওয়াটাও একটু বেশিই। জাতির জনকের কন্যা, সেটি তো আছেনই। তিনি নিজ গুণে ইতিহাসেও স্থান করে নিতে পেরেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার ব্যক্তিগত চেষ্টা সম্পর্কেও মানুষ ওয়াকিবহাল। স্বাভাবিকভাবেই মানুষ চায়, দুর্নীতি যেন সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। মানুষ এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের চাপে অতিষ্ঠ। সেই জায়গায় যদি দুর্নীতির খবর একটির পর একটি প্রকাশ হতে থাকে, তখন মানুষের চাওয়া-পাওয়ায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

কথা হচ্ছে, দুর্নীতির কথা শুধু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পরই অ্যাকশন শুরু হয় কেন? প্রতিটি বিভাগের দায়িত্ব সততার সঙ্গে নিজ নিজ কর্তব্য পালন। প্রতিটি বিভাগে যদি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন সুষ্ঠুভাবে হয়, তাহলে এমনিতেই দুর্নীতি কমে আসার কথা। বাস্তবতা হচ্ছে- সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এর বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছে। সুবিধা ভোগ করছে কতিপয় মানুষ, ভোগান্তিতে পড়ছে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার আগেই তাদের টুঁটি চেপে ধরা সম্ভব হলে জনভোগান্তি কম হতো। এর জন্য টাস্কফোর্স করা উচিত বলে মনে করি। টার্গেট করে কিছু ব্যক্তির ব্যক্তিগত সম্পত্তির খোঁজ নিলে দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসবে। কোন কোন বিভাগ দুর্নীতির রাজা-রানি সবই মানুষের জানা। সাধারণ মানুষ সবাই জানে কোথায় কোথায় কেমন দুর্নীতি হয়। সুতরাং যাদের দায়িত্ব দেখভাল করার তাদের অজানা থাকার কথা নয়। একেবারে উদাহরণ দিয়ে যদি বলি- শিক্ষা অধিদফতর, আয়কর বিভাগ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, ওয়াসা, গণপূর্ত এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে শুরু করা হোক। তাদের কর্মকর্তাদের সম্পদের অনুসন্ধান করা হোক। যতই নগদ টাকা রাখুক না কেন, যতই টাকা পাচার করে বেগমপাড়া বানাক না কেন, দেশেও তাদের সম্পদের গরমিল পাওয়া যাবেই।

এটি গেলো সরকারি আমলাদের ব্যাপারে। দলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপারেও তল্লাশি করা প্রয়োজন। যারা পেশা হিসেবে রাজনীতিকে বেছে নিয়েছেন, তাদের খোঁজ করলে দেখা যাবে কতটা সৎ পথে তারা রাজনীতি করছেন। একসময় ইডেন কলেজের এক ভিপির সম্পদ নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল। এখন বিরোধী দলে থাকা সেই নেত্রী কলেজের ছাত্রী থাকাকালেই বিলাসবহুল গাড়িসহ বেশ সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। এখনও সেই ধারাবাহিকতা চলছে বলা বাহুল্য। ছাত্ররাজনীতিরই যেখানে এই হাল, মূল রাজনীতির অবস্থা যে কী হবে তা সহজেই অনুমেয়।

অনেক সময় অবাক হয়ে যাই, যখন কোনো রাজনীতিবিদকে দেখি অস্বাভাবিক বিত্তের মালিক হয়েছেন। অথচ দৃশ্যত তিনি কোনো আয়যোগ্য পেশায় নিয়োজিত নন। এই অবস্থাটি কিন্তু শুধু সরকারি দল নয়, বিরোধী দলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সাধারণ মানুষ হিসেবে তাই প্রশ্ন আসেই।

হারিছ চৌধুরী কিংবা আনোয়ারুল আজিম, অন্যদিকে বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির পার্থক্য। এই ভিন্ন ব্যক্তি যখন সাধারণ মানুষের দরবারে আলোচিত হন, তখন অভিন্ন প্রশ্নই থাকে। তারা কি জনমানুষের বন্ধু হতে পারেন? একইসঙ্গে আরেকটি প্রশ্নের জন্ম হয়, তারা কি সত্যিই অবিনাশী।

লেখক : সাংবাদিক, শিশুসাহিত্যিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক।

আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
গাজায় ‘ব্যাপক’ স্থল হামলা শুরু করল ইসরায়েল
পরিস্থিতি তৈরি করে ভিডিও ধারণ, চাঁদাবাজি: রাবি শিক্ষকের দাবি
আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইশরাকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে
বরখাস্ত/অব্যাহতি প্রাপ্ত সাবেক সেনাসদস্যদের বিক্ষোভ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান
প্যানিক অ্যাটাকে ইবি শিক্ষার্থী, নেপথ্যে যা জানা গেছে
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
প্যানিক অ্যাটাকে ইবি শিক্ষার্থী, নেপথ্যে যা জানা গেছে
নায়িকা নুসরাত ফারিয়া আটক
বদলগাছীতে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস পালিত
সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাজুলসহ ১৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, ১১ জন আটক
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft