শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
‘আজীবন সম্মাননা’ নিয়ে ‘নায়ক’ খসরুর উপলব্ধি
আনন্দমেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৪, ৭:১২ PM
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘আজীবন সম্মাননা’ প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকার গেরিলা ইউনিটের প্রধান কামরুল আলম খান খসরু। ঢাকা ফিরে তিনি লিখিত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। যাতে ফুটে উঠেছে অনেক অব্যক্ত কথা। ‘আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তি এবং আমার একান্ত অনুভূতি’ শীর্ষক -কামরুল আলম খান খসরুর লেখাটি সাংবাদিক ও চিত্রনাট্যকার মুজতবা সৌদের ওয়াল থেকে এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো-

কোনো কিছু প্রাপ্তির আনন্দ কিংবা সুখ ভাষায় প্রকাশ করা অনেক সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই অনুভূতি ভাষাহীন! উঞ্চ কিছু শব্দের নিবিড় আলিঙ্গনে কিংবা অলঙ্কৃত বর্ণগুচ্ছের সন্নিবেশিত বাক্যবিন্যাসে এ অনুভুতি বলে বোঝানোও আমার পক্ষে অসম্ভব। শুধু একটি কথা বলতে পারি, ‘রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি’ পাওয়া নিসন্দেহে আনন্দের এবং সম্মানেরও বটে। সেই অর্থে হয়তোবা নিশ্চয়ই আমি সম্মানীত। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সবাই সম্মানীত হতে চায়, সাফল্যের দেখা পেতে চায়; কিন্তু, ক'জনইবা পারে সাফল্যের সেই স্বর্ণতোরণে পৌঁছতে? কোনো অর্জনই সহজ নয়! সেইজন্য এ অর্জন ছোট নাকি অনেক বড়, তা পরিমাপ করতে চাই না। যে কোনো অর্জনই উদযাপন করা উচিত। তবে সুদীর্ঘ সময়ের অন্তহীন অপেক্ষার কষ্ট, প্রতিকূলতা আর ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে এ অর্জন। এটা আমার আজীবন কষ্টের সার্থকতা কি না, তা জানি না! প্রসঙ্গটা আনন্দের হলেও অপেক্ষা কিন্তু কষ্টের, তুমুল কষ্টের! যে ভুক্তভোগী, সে-ই শুধু জানে তাঁর কষ্টের তীব্রতা! যাক সেসব কথা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য প্রদত্ত বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা সম্মানীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার 'আজীবন সম্মাননা' পদকে আমাকে ভূষিত করা হয়েছে সেইজন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি প্যানেল ও এই আয়োজন এবং উদ্যোগে জড়িত সংশ্লিষ্ট সবাইকেই আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি এবং আমার স্ত্রী উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে সুদূর আমেরিকায় অবস্থান করায় পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারিনি। তাই আমার পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন জনপ্রিয় নায়ক আলমগীর। আমার স্নেহের এবং প্রিয় আলমগীরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি আমার এই পুরস্কারটি উৎসর্গ করছি সেই সমস্ত দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধাদেরকে যারা স্বাধীনতা ও সশস্ত্র সংগ্রামে আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের জন্য তাঁদের মূল্যবান জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমি মনে করি, যারা স্বাধীনতার আগে থেকে এখন পর্যন্ত চলচ্চিত্র শিল্পে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই ক্রমান্বয়ে এই সম্মাননায় ভূষিত করা উচিত। আর সেই মূল্যায়নটিও হতে হবে যথাপোযুক্ত কাজের ভিত্তিতে। আমি প্রথমে আপাদমস্তক একজন বিপ্লবী ও গেরিলা যোদ্ধা এবং তারপর অভিনয়শিল্পী কিংবা জনপ্রিয় নায়ক। প্রজন্মকে আমাকে এভাবেই চিনতে হবে, জানতে হবে। তবে অভিনয় করবো এমন ইচ্ছে মনে মনে পোষণ করতাম। আমার সেই ইচ্ছের কথা জানতেন আমার নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; তিনি প্রায়ই আমাকে অনুপ্রাণিত করে বলতেন, ‘তুই অভিনয় করবি, একদিন অনেক জনপ্রিয় অভিনেতা হবি’! আক্ষরিক ভাষায় আমার অন্তরের গভীরের সেই অনুভূতি এ মুহূর্তে প্রকাশ করতে আমি ব্যর্থ!

আমার অভিনিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’-এর মূল ভাবনা আমার মাথায় এসেছিলো একাত্তরে রণাঙ্গনে যুদ্ধ চলাকালীন। তখনই ভেবে রেখেছিলাম দেশ স্বাধীন হবার পর যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে সেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করবো। দেরাদুনের তান্ডুয়ার মিলিটারি একাডেমির ক্যাম্পে প্রশিক্ষণের সময় আমি যে অভিনয় করতে চাই সেই ইচ্ছের অনুভূতিটুকু প্রকাশ করেছিলাম আমার সেকেন্ড ইন কমান্ড মুরাদকে। মনের গহীনের সেই সুপ্ত ভাবনা থেকেই স্বাধীনতা ও সশস্ত্র যুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’-এ আমার অভিনয় করা।   

আমার অভিনিত স্বাধীনতা ও সশস্ত্র যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘সংগ্রাম’-এ স্বয়ং অভিনয় করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সিনেমাটির দৃশ্য ছিলো এমন - যুদ্ধ শেষে সদ্য স্বাধীন দেশের সামরিক বাহিনী বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের নায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্যালুট করছে। শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি ছিলো বঙ্গবন্ধুর ব্যাপক আগ্রহ। অভিনয়শিল্পীসহ সকল ধরনের সাংস্কৃতিককর্মীদের সবসময় উৎসাহ দিতেন বঙ্গবন্ধু। 

আমি আমার নেতা বঙ্গবন্ধুর আদেশ ও নির্দেশ পালনের জন্য, তাঁকে ভালোবাসার জন্য নিজের জীবনও বিসর্জন দিতে চেয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেছি বলে তাঁর মৃত্যুর পর আমাকেও বিশ্বাসঘাতকের হাতে বুলেট বিদ্ধ হতে হয়েছে। আজও বয়ে বেড়াচ্ছি বুকের ভেতর গেঁথে থাকা স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা। এতো যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানোর পরও যদি বাংলদেশের মানুষ, আমার প্রজন্ম আমাকে শুধুমাত্র একজন জনপ্রিয় নায়ক কিংবা অভিনেতা হিসেবে চেনে-জানে তাহলে এটা তো আমার জন্য তুমুল কষ্টের। আর এই কষ্ট তো হবে আমার জন্য চৌদ্দ বছর জেলের হুলিয়া মাথায় বয়ে বেড়ানো, পলাতক জীবন কাটানো কিংবা ইকবাল হলে পানির ট্যাঙ্কিতে এগারো ঘন্টা শ্বাসরোধ হয়ে বন্দী থাকার চেয়ে বেশি শ্বাসরুদ্ধকর। কারণ আমি তো শুধুমাত্র একজন খ্যাতিমান অভিনেতা কিংবা জনপ্রিয় নায়ক নই, আমি একজন বিপ্লবী ও গেরিলা বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি প্রত্যাশা করবো বাঙালি জাতি আমাকে আমার সঠিক পরিচয়ে চিনবে, জানবে। 

সবাইকে আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ। জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু! আমার প্রাণের সোনার বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক!

* ‘আজীবন সম্মাননা’ পদক হাতে কামরুল আলম খান খসরুর ছবিটি তুলেছেন ভাবি (মিসেস খসরু)।

আজকালের খবর/আতে








সর্বশেষ সংবাদ
অর্থনীতিকে পঙ্গু করতেই সহিংসতা চালানো হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
আহতদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রী
ভিপিএন ব্যবহারে সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে যেসব ঝুঁকি
সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস
সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন আজ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রুপা-আপসানার প্রস্তাব
রিমান্ড শেষে কারাগারে নুর
ফেসবুক-টিকটকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি
ফরিদপুরে ১৪ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল, চলছে যানবাহন
জাবি শিক্ষকের ‘পদত্যাগ নাটক’
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft