![](../2024/03/04/ak_1709543271.jpg)
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ডিজিটাল থাবার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ও গরীবের সরকারী ভাতার টাকা লুটে নিচ্ছে মুখোশধারী প্রতারক চক্রের সদস্যরা। সহজ সরল মানুষ ওই চক্রের ডিজিটাল ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভাতাভোগীদের অনেকেই। সমাজসেবা অফিসে অভিযোগ জানিয়েও লুন্ঠিত টাকা ফেরত না পাওয়ায় আতঙ্কে আছেন ভাতাভোগীরা। তবে প্রতারক চক্রের ডিজিটাল থাবার সমাধানের পথ খুঁজছে সমাজসেবা অফিসসহ উপজেলা প্রশাসন।
এলাকাবাসী, ভাতাভোগী ও উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে প্রতিবন্ধী, অসহায় ও দারিদ্র মানুষের জন্য বিভিন্ন ভাতা প্রদান করে আসছে বর্তমান সরকার। এর ধারাবাহিকতায় গাজীপুরের কালিয়াকৈরেও ১৯ হাজার ৬৭৫ জন সরকারী ভাতা পাচ্ছেন প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবাসহ অসহায় গরীব মানুষ।
গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের দ্বিতীয় কিস্তিতে প্রায় ৩ কোটি ৮৯ লক্ষ ২৪ হাজার ৯২৭ টাকা ভাতা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, হিজড়া, অনগ্রসর, বেদে, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি, অনগ্রসর শিক্ষা উপবৃত্তি, বেদে শিক্ষা উপবৃত্তি ভাতা পাচ্ছেন। মোবাইল ব্যাংকিং নগদের মাধ্যমে এসব ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। কিন্তু অসহায় গরীব মানুষের সরকারী ভাতার টাকায় নজর পড়েছে শকুনের। এসব সহজ সরল মানুষের উপর ডিজিটাল থাবা দিচ্ছে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। তারা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সমাজ সেবা অফিসের পরিচয়ে অনায়াসে লুটে নিচ্ছে গরীবের ভাতার টাকা।
ওই চক্রের ডিজিটাল ফাঁদে পড়ে প্রতারণার শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভাতাভোগীদের অনেকেই। সমাজসেবা অফিসে অভিযোগ জানিয়েও লুন্ঠিত টাকা ফেরত না পাওয়ায় আতঙ্কে আছেন ভাতাভোগীরা।
সচেতন মহলের লোকজন বলছেন, এসব ভাতাভোগীরা অতি সহজ সরল মানুষ। এজন্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সাধারণত তাদের জন্মসাল পিন নাম্বার হিসেবে ব্যবহার করে সমাজ সেবা অফিস। আর এসব তথ্য জানতে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের পরিচয়ে টাকা ঢুকবে বা টাকা ঢুকছে না এমন নানা অজুহাতে ভাতাভোগীদের ফোন দিচ্ছে ওই চক্র। ফলে সহজ সরল ভাতাভোগীরাও অতি সহজেই নিজের জন্ম সাল বা পিন নাম্বার দিয়ে দিচ্ছেন। এসময় সুকৌশলে প্রতারক চক্রের সদস্যরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার মাধ্যমে গরীবের সরকারী ভাতার টাকাগুলো নিয়ে নিচ্ছে।
ভাতাভোগীসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, যেখানে অনেক ভাতাভোগী নিজের মোবাইল নাম্বার বা নগন নাম্বার বলতে পারে না, সেখানে বেছে বেছে শুধু ভাতাভোগীদের কিভাবে টার্গেট করা হয়ে থাকে। ওই চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ জড়িত আছে কি? এমন প্রশ্ন ভাতাভোগীসহ স্থানীয়দের।
এসব প্রতারক চক্রের ডিজিটাল থাবার সমাধানের পথ খুঁজছে সমাজসেবা অফিস। ফোনে কেউ যেন কোনো তথ্য না দেয়াসহ সবাইকে আরো সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, ইতিমধ্যে বেশকিছু ভাতাভোগী প্রতারণার শিকার হয়ে আমাদের জানিয়েছেন। যারা ওই চক্রের শিকার হয়েছেন তাদের নাম্বার সংশোধনের সুযোগ আছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর, অর্থমন্ত্রণালয় আইব্যাচ সিস্টেম, বাংলাদেশ ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিং নগদের মাধ্যমে ভাতা প্রদান হচ্ছে। কিন্তু কিভাবে হ্যাকাররা তথ্য পাচ্ছে আর ভাতার টাকা লুটে নিচ্ছে আমরাও খুঁজছি। এরপরও আমাদের পরামর্শ ভাতাভোগীদের কেউই যেন ফোনে কোনো তথ্য না দেয়। আমরা এ সংক্রান্ত বিষয়ে চিঠি ইস্যুসহ উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে উপস্থাপন করেছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউছার আহম্মেদ জানান, এ বিষয়ে সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে। আর ফোনে কেউ যেন কোনো তথ্য না দেয়। প্রয়োজনে অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। তবে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
আজকালের খবর/এসএইচ