মো. আমির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ
স্থানীয় নির্বাচন কমিশন, সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা, থানা-পুলিশ, দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভাঙার বিষয়ে অর্ধশতাধিক লিখিত অভিযোগ করেও কোন ব্যবস্থা পাননি মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা উপ নির্বাচনে নারিকেল গাছ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মাহতাব উদ্দিন কল্লোল।
সোমবার (৪ মার্চ) দুপুরে মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিক সফিউদ্দিন আহমেদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি।
এসময় সন্ত্রাস-মাদক, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নমুক্ত স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক শান্তিপূর্ণ-মানবিক মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নির্বাচন উপলক্ষে ১৫ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন এই প্রার্থী।
মাহতাব উদ্দিন কল্লোল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর দিন থেকে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী জগ প্রতীকের প্রার্থী চৌধুরী ফাহরিয়া আফরিন ও তার স্বামী মুন্সীগঞ্জ ৩ আসনের এমপি ফয়সাল বিপ্লবের নির্দেশে তার অনুসারী নেতাকর্মীরা ৪ মার্চ পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণায় বাধা, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মাইক ভাঙচুর, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, বাড়িঘরে হামলাসহ অসংখ্য লিখিত অভিযোগ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও স্থানীয় থানা-পুলিশকে জানিয়েছি। কিন্তু একটি অভিযোগের বিষয়েও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, একটি সুষ্ঠু, উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনের প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে এই নির্বাচনে কে বিজয়ী হবে সেটি তাদের মাধ্যমে আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। ফলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কমে গেছে। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভায় আগামী ৯ মার্চ যদি একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হয় সেজন্য দায়ী থাকবে মুন্সীগঞ্জের বর্তমান প্রশাসন। এরপরও আমি যেহেতু জনগণ মনোনীত প্রার্থী তাই জনগণের মত আমারও সরল মন একটি সুষ্ঠু, উৎসবমুখর নির্বাচন প্রত্যাশা করে। তাই নির্বাচনের দিন পর্যন্ত আমি রাজপথে আছি।
নির্বাচনী ইশতেহারে মেয়র প্রার্থী মাহতাব উদ্দিন কল্লোল বলেন, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্মা বিধৌত গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ জনপদ মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিল্প-সাহিত্য ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ জনপদ হওয়া সত্ত্বেও মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার সেভাবে বিকাশ ও উন্নয়ন ঘটেনি। রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী এলাকা সত্ত্বেও এবং এ অঞ্চলে শত শত শিল্প কল-কারখানা গড়ে উঠলেও পরিকল্পিত পদক্ষেপের অভাবে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার জনগণ এখনও উন্নত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়ে গেছে। রাস্তা-ঘাট ব্রীজ- কালভার্টসহ অবকাঠামো উন্নয়নে দেশের অন্যান্য পৌর শহর থেকে মুন্সীগঞ্জ যেমন পিছিয়ে আছে, ঠিক তেমনি সুপেয় পানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পয়-নিস্কাশন ব্যবস্থার সংকট, ভয়বহ যানজট এবং সামাজিক নিরাপত্তার চরম অনিশ্চয়তা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, দস্যুতা ও দুর্বৃত্তায়নের নগ্ন আস্ফালন।
তিনি বলেন, আমাদের প্রাণের শহর মুন্সীগঞ্জকে ভয়াবহ এই সংকট থেকে রক্ষা করে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি আধুনিক, উন্নত, শান্তিপূর্ণ ও মানবিক শহর হিসেবে গড়ে তোলা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকেই মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার সকল নাগরিকের জীবনমান্নোয়নের মহান ব্রত নিয়ে আসন্ন মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা উপ-নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করছি। ভোটাররা আমাকে সুযোগ দিলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভাকে উন্নয়ন-অগ্রগতি শান্তি ও মানবিকতার রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। উন্নত-সমৃদ্ধ মানবিক ও কল্যাণকর মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে ১৫ দফা ইশতেহার (নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি) ঘোষণা করেন এই প্রার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের কাছে দেয়া অর্ধশত লিখিত অভিযোগের অনুলিপি সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন তিনি।
আজকালের খবর/বিএস