দেশের চিকিৎসকদের মান বিশ্বের কোনো দেশের থেকে কম নয়। তবে তাদের মেধা প্রকাশে সুযোগের ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। এ অবস্থায় চিকিৎসকদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরিতে কাজ করার কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ‘ভুটান থেকে বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর’ সর্বশেষ আপডেট তথ্য নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটাই সমস্যা, দেশের চিকিৎসকরা সুযোগ পান না। ভালো কাজ করার জন্য পরিবেশ লাগে। সেই পরিবেশের অভাবে অনেকে তাদের জ্ঞানটা ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারেন না। শুধু এই কারমা দেমার (ভুটান থেকে আসা রোগী) বিষয় নয়, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের চিকিৎসকরা মাথা জোড়া লাগানো শিশুকে অপারেশনের মাধ্যমে সফলভাবে আলাদা করা হয়েছে। যদিও হাঙ্গেরির চিকিৎসক ছিল। তারপরও বাংলাদেশি চিকিৎসকদের যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে, তা প্রশংসার দাবিদার। অপারেশনের পরেও চিকিৎসার অনেক বিষয় থাকে, তা আমাদের চিকিৎসকরাই দেখেছেন। উপরওয়ালার আশীর্বাদে বাচ্চা দুইটা এখনো সুস্থ অবস্থায় বেঁচে আছে। এটি বিশ্বে একটি বিরল ঘটনা।
প্রথমবার বিদেশ থেকে রোগী আসা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভুটানে আমাদের একটা টিম গিয়েছিল। আমরা যখন গিয়েছিলাম, আমি আউটডোরে ছিলাম তখন এ মেয়েটা সম্পর্কে আলাপ হয়। আমরা তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার কথা ভাবি। আমি সে সময় সেদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে মেসেজ করি। আমরা তাকে একজন রোগী নিয়ে আসার কথা জানাই। তিনি আমাদের বলেন, ঠিক আছে। নিয়ে আসো।’
এর আগে ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তৎকালীন প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্লাস্টিক সার্জারি টিম ভুটানে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দু দেশের সরকারের উদ্যোগে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে সাত দিনব্যাপী প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্প পরিচালিত হয়। ওই ক্যাম্পে বাংলাদেশের সার্জনরা ১৬টি সফল জটিল প্লাস্টিক সার্জারি করেন। সেই ক্যাম্পেই প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে নাক ঠিক করার জন্য কারমা দেমাকে নিয়ে আসা হয়েছিল।
কারমা দেমার চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার প্লাস্টিক সার্জারিতে আমার এখানের চিকিৎসকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাদের পরিশ্রমের ফলে মেয়েটাকে আজকে এ অবস্থায় আনা সম্ভব হয়েছে। সে এর আগে দিল্লিসহ অনেক জায়গায় গিয়েছে। কিন্তু কোনো স্থানেই তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। যে অপারেশনটি করা হয়েছে তা এখানেই শেষ নয়। এরপরও আরও অপারেশন আছে। আমরা এখন তাকে ছেড়ে দেব, এরপর সে আবার আসবে। তখন তার নাককে আরও সুন্দর করে আমরা একটি পর্যায়ে নিয়ে যাব। এর মাধ্যমে আমি শুধু এইটুকু মেসেজ দিতে চাই যে, আমরাও পারি। সেই প্রথম রোগী যে মেডিকেল ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। এ জন্য প্রত্যেকের সহযোগিতা পেয়েছি।
সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় জানিয়ে সামন্ত লাল সেন বলেন, কয়েকদিন আগে নেপালের রাষ্ট্রদূত আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাকেও বলেছি, আমরা নেপালেও এমন একটি টিম নিয়ে যেতে চাই। সেখানে যদি এমন ক্রিটিক্যাল রোগী থাকে, তারে যেন আমাদের এখানে নিয়ে আসে। আমরা চাচ্ছি, সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি করতে। তারা আমাদের এখানে আসবে এবং আমরাও যাবো। আমরা মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে কাজ করবো।
আজকালের খবর/এসএইচ