শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
পাবনায় চার হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদে কৃষকের ভাগ্যবদল
আটঘরিয়া (পাবনা)
প্রকাশ: শনিবার, ২ ডিসেম্বর, ২০২৩, ৮:৩২ PM
মাঠজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সবুজ পাতার মাঝে হালকা বেগুনি রঙের ফুলগুলো যেন স্বপ্নরঙে দোলা দেয় কৃষকের মনে। মাঠের পর মাঠ শুধু শিম আর শিম। কৃষক পরিবারের সদস্যরা ক্ষেতে এখন শিম পরিচর্যায় ব্যস্ত। এ চিত্র সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে পাবনা সদর, আটঘড়িয়া ও ঈশ্বরদী উপজেলা বিভিন্ন এলাকায়। এছাড়া জেলার আটঘরিয়া, বেড়া, সাঁথিয়া, ফরিদপুর ঈশ্বরদী ও অন্যান্য উপজেলায়ও শিমের আবাদ হয়। তবে উল্লিখিত তিন উপজেলার মতো এতো ব্যাপক হারে না।

মাঠে মাঠে এখন চলছে শিম তোলা ও শিমক্ষেত পরিচর্যার কাজ। চলতি মৌসুমে পাবনা জেলায় চার হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ২২৫ টন। আগাম জাতের শিম আবাদ করে ভাগ্য বদলেছে আলহাজ উদ্দিনের। কিনেছেন জমি, তুলেছেন নতুন ঘর। সংসার থেকে অভাব যেন পালিয়ে গেছে। পাবনার আটঘড়িয়া উপজেলার খিদিরপুর গ্রামের এই শিমচাষির এমন সচ্ছল অবস্থা পাঁচ বছর আগেও ছিল না। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে টানাটানির সংসার ছিল তার। বছর পাঁচেক আগে গ্রামের বিভিন্ন জমিতে আগাম জাতের শিম চাষ করতে দেখে তিনিও নিজ বাড়ির পাশের এক বিঘা জমিতে শিমের আবাদ শুরু করেন। সেই থেকে শুরু। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। 

মাত্র পাঁচ বছরেই পাল্টে ফেলেছেন তার সংসারের চিত্র। আটঘড়িয়া উপজেলার নাদুরিয়া গ্রামের কয়েকজন শিমচাষি জানান, তাদের জমিগুলো ধানচাষের জন্য উপযুক্ত নয়। তাই বিকল্প হিসেবে তারা শিমচাষ বেছে নিয়েছেন। আলহাজ উদ্দিনের মতো আগাম জাতের শিমচাষ করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন পাবনা জেলার অনেক কৃষকই।

এই শীত মৌসুমে আগাম সবজি হিসেবে গত এক মাস আগেই বাজারে উঠেছে শিম। শীতে রূপবান ও অটো নামে দুই রকমের শিমের চাহিদা বেশ। দামও বেশ ভালো। শুরুতে পাঁচ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে কমে গিয়ে তিন হাজার টাকায় এসেছে।

আটঘড়িয়ার মণ্ডলপাড়ার কয়েকজন শিমচাষি জানান, তারা প্রায় ১৬ বছর ধরে নিজেদের সংগৃহীত বীজ থেকেই প্রায় তিন হাজার পরিবার শিমের আবাদ করেছেন। তাদের মতে, বিভিন্ন গ্রামে সুখের বাতাস বইছে শিমচাষের কারণে। মণ্ডলপাড়ার তোফাজ্জল, ফকরুল, আতাই, কামালকে দেখা যায়, শিমক্ষেতে তারা মরাফুল ও পোকা বাছাইয়ের কাজ করছিলেন। তারা একেকজন তিন বিঘা করে শিমের চাষ করেছেন। শিমচাষে বীজ বপন থেকে শুরু করে বাজারে শিম তোলা পর্যন্ত বিঘাপ্রতি ২০-২২ হাজার টাকা খরচ হয়। তারা আশা করছেন, খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় তাদের লাভ হবে কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা।

আটঘড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার নাছিরামপুর, রামেশ্বর, কাঁকমাড়ি, কচুয়ারামপুর, দুর্গাপুর, রোকনপুর, খিদিরপুর, পারখিদিরপুর চাঁদভা, নাদুরিয়া, সাড়াবাড়িয়া, কলমনগর, সোনাকান্দার, সঞ্জয়পুর, বাচামারা, হাপানিয়া, বেরুয়ান, কুমারেশ্বর ও লক্ষ্মণপুর গ্রামের মাঠের পর মাঠজুড়ে শিমের আবাদ হচ্ছে। দিগন্ত বিস্তৃত এই শিমক্ষেতের জন্য এলাকার পরিচিতিই যেন বদলে গেছে। লোকমুখে এ এলাকার নাম এখন ‘শিমসাগর’।

শিমচাষিরা এখন ক্ষেত পরিচর্যা ও নতুন শিম তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। শিম কেনাবেচার জন্য গ্রামে গ্রামে বসেছে অস্থায়ী হাট-বাজার। এসব বাজার থেকে ইঞ্জিনচালিত নসিমন-করিমন ও ট্রাকবোঝাই শিম যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে। খিদিরপুর গ্রামের পাইকারি শিম ব্যবসায়ী শুকুর আলী জানান, এই এলাকার শিম ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে পাঠানো হয়।

উত্তরাঞ্চলে বৃহত্তম শিমের আড়ত ঈশ্বরদীর মুলাডুলি বাজারে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, আড়তের পুরো জায়গাজুড়েই যেন শিম আর শিম। স্থানে স্থানে সেগুলো স্তূপ করে রাখা হয়েছে। প্রতিটি স্তূপে আছে শত শত মণ শিম। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় আশপাশের এলাকায় শিম রাখা হয়েছে। অন্যান্য এলাকার আড়ত সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বসলেও মুলাডুলিতে আড়ত বসে সারা সপ্তাহজুড়েই।

মুলাডুলির সফল শিমচাষি আমিনুর রহমান বাবু ওরফে শিম বাবু জানান, মুলাডুলির আড়তগুলো থেকে প্রতিদিন ৬০-৭০ ট্রাক শিম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। শিম কেনা-বেচার কাজে মুলাডুলির আড়তগুলোতে প্রতিদিন এক হাজার ২০০ শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করছে। শিমচাষ করে কোনো একটি এলাকার মানুষরা তাদের ভাগ্য বদলে দিতে পারেন। ঈশ্বরদীর মুলাডুলি তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। 

শুধু শিমচাষ করেই লাখপতি হয়েছেন মুলাডলির শতাধিক পরিবারের লোকেরা। পাবনা সদর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বড়াইগ্রাম ও লালপুরের প্রায় ২৪ হাজার মানুষ শিমচাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

এ বিষয়ে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, শিমের ফলন বাড়াতে ও পোকামাকড় দমনে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া ও প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আরো নানাভাবে সহায়তা করেছেন। এবারের বৃষ্টিতে ও ফুলে পচন ধরা রোগের আক্রমণে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তারপরও কৃষকরা এখন বেশ সচেতন। তাই, কিছুটা ক্ষতি হলেও ভালো দামের কারণে তারা পুষিয়ে নিতে পারছেন।

আজকালের খবর/ওআর








সর্বশেষ সংবাদ
মার্কিন শ্রমনীতি পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক অবস্থা তৈরি করতে পারে: পররাষ্ট্র সচিব
স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূঁইয়ার কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা-হয়রানি
একদিনে দশটি পথসভা, উঠান বৈঠক ও একটি জনসভা করেন সাজ্জাদুল হাসান এমপি
নতুন বছরে সুদহার বাড়ছে
শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখেই আজকের উন্নত বাংলাদেশ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
রাজপথের আন্দোলনে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে: মুরাদ
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকায় ইসলামী ব্যাংক
ইতিহাসের মহানায়ক: একটি অনন্য প্রকাশনা
নতুন বই বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
এক দিনে সারাদেশে ২১ নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft