প্রকাশ: বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৩, ৬:২৮ PM
ময়মনসিংহের গৌরীপুরের পলাশকান্দা ট্র্যাজেডি দিবস আজ ৩০ নভেম্বর। ১৯৭১-এর এই দিনে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ, মনজু, মতি ও জসিম। প্রতি বছর এই দিনটি গৌরীপুর শহীদ দিবস ও পলাশকান্দা ট্র্যাজেডি দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালন উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, চাঁদেরহাট, যুগান্তর স্বজন সমাবেশের পক্ষ থেকে ভোরে প্রভাতফেরি, কবর জিয়ারত, শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ ও আলোচনাসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
১৯৭১ সালের নভেম্বর মাস। গৌরীপুরসহ সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা হামলায় পাক হানাদার বাহিনী তখন দিশেহারা। এ সময় মুজিব বাহিনীর একটি গেরিলা দল গৌরীপুর ও ঈশ্বরগঞ্জের সীমান্তবর্তী গ্রাম পলাশকান্দায় অবস্থান নেয়। মুজিব বাহিনীর কমান্ডার মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দলে ছিলেন তমিজ উদ্দিন, মরহুম আনোয়ারুল হক খায়ের, আ. জলিল, নুরুল আমীন, আ. সাত্তার, একেএম নজরুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, আনোয়ারুল ইসলাম মনজু, সিরাজুল ইসলাম, মোখলেছুর রহমান চাকদার, মতিউর রহমানসহ ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা। পলাশকান্দায় অবস্থানরত মুজিব বাহিনীর গেরিলা দলের উদ্দেশ্য ছিল ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী পাক হানাদার বাহিনীর কনভয় ও ক্যাম্পের ওপর হামলা করা। কিন্তু একই গ্রামের অধিবাসী রাজাকার মজিদ মাস্টার মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা দলের অবস্থানের খবর অত্যন্ত সুকৌশলে পৌঁছে দেয় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে। সঙ্গে সঙ্গেই পাক হানাদার, রাজাকার ও আলবদরের সম্মিলিত বাহিনী পলাশকান্দায় মুজিব বাহিনীর ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় মুজিব বাহিনীর দলটি পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঈশ্বরগঞ্জের মাইজকা হানাদার ক্যাম্প আক্রমণের জন্য রওয়ানা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইতোমধ্যে হানাদার বাহিনী তিনদিকে ঘিরে ফেলে এবং বৃষ্টির মতো গুলি ছুড়তে থাকে। কমান্ডার মুজিবুর রহমানও পাল্টা গুলি ছোড়ার আদেশ দেন। আকস্মিকভাবে আক্রান্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এ সময় দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুললেও পাক বাহিনীর ভারী অস্ত্রের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হন। সেই সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় জসিম উদ্দিন হানাদার বাহিনীর ব্রাশফায়ারে শহীদ হন। এ সময় হানাদারের হাতে আহত অবস্থায় ধরা পড়েন আনোয়ারুল ইসলাম মনজু, মতিউর রহমান ও সিরাজুল ইসলাম।
জানা যায়, ধরাপড়া তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে হানাদার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে পরে ব্রহ্মপুত্রের নদীর চরে তাদের চোখ বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে উপড়ে ফেলে পরে হত্যা করে। পরদিন ১ ডিসেম্বর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনকে পলাশকান্দায় সমাহিত করা হয় ও প্রচণ্ড ক্ষোভে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার মজিদ মাস্টারের কান কেটে দেন। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা মোখলেছুর রহমান চাকদার মারাত্মক আহত হন।
শহীদের স্মৃতি চির অম্লান করে রাখার জন্য স্বাধীনতার পর গৌরীপুর পৌরশহরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল শহীদ সিরাজ-মঞ্জু স্মৃতি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ’৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর শহীদের স্মৃতিকে মুছে ফেলে বিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করে গৌরীপুর পৌর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রাখা হয়। নাম পরিবর্তনের কারণ আজো জানা যায়নি।
পলাশকান্দায় নবপ্রজন্মের মাঝে তাদের ইতিহাস পৌঁছে দিতে বিগত উপজেলা চেয়ারম্যান সৌমেন্দ্র কিশোর মজুমদার শহীদের স্মৃতিতে স্মৃতিফলক নির্মাণ করেন। প্রতিবছর এই ফলকে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও শহীদ জসীমের করব জিয়ারতসহ নানা কর্মসূচিও পালিত হয়।
আজকালের খবর/ওআর