প্রকাশ: বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩, ৯:১৫ PM
ফেনী জেলার সোনাগাজী মোহাম্মদ ছাবের মডেল সরকারি পাইলট হাইস্কুলের শিক্ষক সংকটে মুখ থুবড়ে পড়েছে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, পাঠদানেও চরম হিমসিম খেতে হচ্ছে কর্মরত শিক্ষকদেরকে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ভবিষ্যত নিয়ে গভীর সংশয় প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
১৯৪৫ সালে ২ একর ৬৫ শতক জমিতে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি ২০২০সালের ৩১ আগস্ট চূড়ান্তভাবে সরকারি করণ করা হয়। যার ফলে প্রধান শিক্ষক সহ মাত্র ৯ জন সহকারি শিক্ষক সরকারি তালিকাভুক্ত হয়। সহকারি প্রধান শিক্ষকের পদটিও রয়েছে শূন্য। চাকরির মেয়াদ পূর্ণ ও খন্ডকালীণ হিসেবে কর্মরত ১৮জন শিক্ষক অবসরে যাওয়ায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়। সাধারণ ও কারিগরি শাখায় ৩৫ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৯ জন। বর্তমানে ৯৬০ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানের জন্য সাধারণ শাখায় মাত্র ৮ জন এবং কারিগরি শাখায় মাত্র ১ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। সাধারণ শাখায় আরো ১৯ জন এবং কারিগরি শাখায় ৭জন শিক্ষকের শূন্যপদ রয়েছে। মোট ২৬ জন শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় বিদ্যালয়টিতে পাঠদানে শিক্ষকদের চরম হিমসিম খেতে হচ্ছে। সরকারি করণের পর থেকে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের কথা থাকলেও সরকারি করণের তিন বছর অতিবাহিত হলেও বিদালয়টিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। মানবিক বিভাগের শিক্ষক পড়াতে হচ্ছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের, আবার বাংলা বিষয়ের শিক্ষক পড়াতে হচ্ছে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষার্থীদের। এভাবেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে শিক্ষার্থীদের শ্রেনি কার্যক্রম। বাংলা শিক্ষক ৪ জনের মধ্যে আছে মাত্র ১ জন, ইংরেজি শিক্ষকের ৪টি পদই শূন্য, গণিতে ৩টি পদের মধ্যে আছে ১ জন, সামাজিক বিজ্ঞান ২টি পদই শূন্য, ধর্ম ২টি পদের মধ্যে আছে ১জন, ভৌত বিজ্ঞান ২টির মধ্যে আছে ১টি, জীব বিজ্ঞান ২টি পদই শূন্য, ব্যবসায় শিক্ষা ৩টি পদই শূন্য, ভূগোল ১টি, চারু কলা ১টি, শারীরিক শিক্ষা ১টি ও কৃষি শিক্ষায় ১টি সহ ২০টি শিক্ষক পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া নৈশ প্রহরী পদটি শূন্য থাকায় অরক্ষিত হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়ের স্থাপনা ও মূল্যবান কাগজপত্র। শেখ আবদুল হান্নান নামে এক অভিভাবক তার ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বড় আশা নিয়ে সরকারি স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করেছি। শিক্ষক সংকটের ফলে ছেলের মানসম্মত পড়ালেখা নিয়ে গভীর শঙ্কার মধ্যে আছি। মাস্টার নিজাম উদ্দিন নামে এক অভিভাবক বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়টি মোটেই সুখকর নয়। অত্যাধুরিক বহুতল ভবন থাকলেও শিক্ষক স্বল্পতার কারণে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ পড়ালেখা নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগের মধ্যে আছি। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে শিক্ষকদের শূন্যপদ থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে গিয়েও কোন সুফল পাচ্ছেননা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, স্কুলটি বাঁচান, শিক্ষক সংকটে কোমলমতি শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে। স্কুলটি এভাবে চলতে পারেনা। জোড়াতালি দিয়ে এভাবে একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম চলতে পারেনা। যে শিক্ষকগুলো কর্মরত রয়েছে, তারাও বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার উপায় খুঁজছে। কিন্তু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কি হবে?
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জয়নুল আবেদিন শিক্ষক সংকট ও অভিভাবকদের উদ্বেগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, শূন্য পদগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার লিখিত আবেদন করেও শিক্ষক পাইনি। সরকারি করণের তিন বছরেও শূন্যপদগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে দ্রুত সকল শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে অভিভাকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেকেই আমার কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। আমি নিজেও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে একাধিকবার যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোন সুফল পাইনি। শূন্য পদগুলোতে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম সচল করার দাবি জানাচ্ছি।
আজকালের খবর/ওআর