শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এবারো সরকারি-বেসরকারি হাইস্কুলে লটারিতে ভর্তি
হাইস্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু ২৪ অক্টোবর
নূরুজ্জামান মামুন
প্রকাশ: বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩, ৮:২৩ PM আপডেট: ০৪.১০.২০২৩ ৮:৩৩ PM
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আগামী শিক্ষাবর্ষে দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে প্রায় এক মাস ভর্তি কার্যক্রম এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ২৪ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। এবারো প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হবে। 

২১ থেকে ৩০ নভেম্বর সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় লটারি অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি ফিসহ টিউশন ফি আগের মতোই থাকবে। 

আজ বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে পৃথক সভা করে ২০২৪ সালের সরকারি ও বেসরকারি হাইস্কুলে ভর্তি নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে ভর্তি নীতিমালা জারি করা হবে।   

সভা শেষে ঢাকা মহানগর ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব ও মাউশির উপপরিচালক আজিজ উদ্দিন আজকালের খবরকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য এবার ভর্তি কার্যক্রম প্রায় এক মাস আগে শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি হাইস্কুলে ভর্তির জন্য কেন্দ্রেীয়ভাবে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। গত বছরের মতোই ভর্তি ও টিউশন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। কোনো ধরনের ফি বাড়ানো হবে না।   

গতকালের সভা সূত্রে জানা গেছে, এবারো ভর্তি কার্যক্রমে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের তৈরি করা সফটওয়ারের মাধ্যমে ভর্তির আবেদন নেওয়া হবে। আগামী ৯ অক্টোবর টেলিটকের সঙ্গে মাউশি বৈঠক করে চূড়ান্ত করবে। ১৮ থেকে ২১ অক্টোবর সারা দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হবে। ২৪ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। ২১ থেকে ৩০ নভেম্বর সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লটারি অনুষ্ঠিত হবে। 

প্রসঙ্গত, গত বছর ২৫ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন নেওয়া হয়। ১৫ ডিসেম্বর সরকারি হাইস্কুলে আর বেসরকারি হাইস্কুলে লটারি অনুষ্ঠিত হয় ১৯ ডিসেম্বর। ৩০ ডিসেম্বরে ভর্তির কাজ শেষ করে ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের সরাসরি ক্লাস শুরু হয়। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যে কারণে আগামী শিক্ষা বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম এগিয়ে আনা হয়েছে।  

মাউশি সূত্র জানিয়েছে, এবার আবেদন ফি ১১০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এক আবেদনে পাঁচটি স্কুল পছন্দ দেওয়া যাবে। এবার সারা দেশে তিন হাজার বেসরকারি স্কুলে ১০ লাখের মতো আসন রয়েছে। আর ৪০৫টি সরকারি স্কুলে আসন রয়েছে ৮০ হাজারের বেশি। 

আসনের বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির উপপরিচালক (স্কুল) আজিজ উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত আসন চূড়ান্ত হয়নি। ভর্তি নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করার পর মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। নীতিমালা অনুমোদনের পর স্কুল থেকে শূন্য আসনের তালিকা সংগ্রহ করা হবে। শূন্য আসনের বাইরে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না।     

মাউশি সূত্র জানায়, এবারো সরকারি হাইস্কুলে ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরের পুরাতন ৪৪টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ তিনটি ফিডার শাখা ও নতুন জাতীয়করণকৃত দুটি স্কুল তিনটি ভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত থাকবে। আবেদনের সময় একজন শিক্ষার্থী একটি গ্রুপের পাঁচটি বিদ্যালয় নির্বাচন করতে পারবে। ডাবল শিফটের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উভয় শিফট পছন্দ করলে দুটি পছন্দক্রম সম্পন্ন হয়েছে বলে বিবেচিত হবে। একই পছন্দক্রমের স্কুল কিংবা শিফট দ্বিতীয়বার পছন্দ করা যাবে না।

আর বেসরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরীর বেসরকারি হাইস্কুলের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানসংলগ্ন কমপক্ষে একটি এবং সর্বোচ্চ তিনটি প্রশাসনিক থানা ক্যাচমেন্ট এরিয়া হিসেবে নির্ধারণ করা যাবে। এছাড়া, আবেদনকারীরা আবেদনের সময় প্রতিষ্ঠান নির্বাচনকালে মহানগর পর্যায়ের জন্য বিভাগীয় সদরের মেট্রোপলিটন এলাকা এবং জেলা সদরের সদর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা পাবে। এক্ষেত্রে প্রার্থীরা প্রাপ্যতার ভিত্তিতে প্রতিটি আবেদনে সর্বোচ্চ পাঁচটি স্কুল পছন্দের ক্রমানুসারে নির্বাচন করতে পারবে। প্রথম থেকে নবম শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের ওয়েবসাইটে (http://gsa.teletalk.com.bd) গিয়ে আবেদন করতে পারবে। ভর্তি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি এবং বিস্তারিত নির্দেশনা মাউশির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে অ্যাপসের মাধ্যমে আবেদনকারীদের নিয়ে লটারির আয়োজন করা হবে। 

নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি হাইস্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতে হলে শিক্ষার্থীর বয়স ছয় বছরের বেশি হতে হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তিতে ১০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখা হবে। অর্থাৎ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নির্ধারিত আসনের ১০ শতাংশ আসনে তারা অগ্রাধিকার পাবে।

এদিকে, গত সোমবার ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি। দেশের সকল সরকারি হাইস্কুল ও স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক এবং বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও স্কুল অ্যান্ড কলেজের (মহানগর ও জেলার সদর উপজেলা পর্যায়) অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষককে এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মাউশির আওতাধীন সব সরকারি হাইস্কুল ও বেসরকারি (মহানগর ও জেলার সদর উপজেলা পর্যায়) হাইস্কুলের প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তির লক্ষ্যে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং সব মহানগর ও জেলার সদর উপজেলা পর্যায়ের বেসরকারি হাইস্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে।

নির্দেশনায় আরো জানানো হয়েছে, বিগত বছরগুলোয় অনুষ্ঠিত ডিজিটাল লটারির এ প্রক্রিয়ায় সরকারি হাইস্কুলের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান অংশ নিলেও উপজেলা পর্যায়ের অনেক প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়নি। একইভাবে সব মহানগর ও জেলার সদর উপজেলা পর্যায়ে অবস্থিত বেসরকারি হাইস্কুলে অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়নি; যা বিধিসম্মত নয়। ভবিষ্যতে যেসব প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল লটারি প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে না সেসব প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষক ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সারা দেশের সব সরকারি, বেসরকারি হাইস্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।

আজকালের খবর/ওআর