
বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ জন্য দায়ি না হয়েও ক্ষতির বোঝা বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। প্যারিস এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী জলবায়ু সংকট এড়াতে কার্যকর উদ্যোগ নেবে শিল্প উন্নত দেশসমূহ। একই সঙ্গে ক্ষতিপূরণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহকে প্রয়োজনীয় আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে। কিন্তু প্যারিস এগ্রিমেন্ট বাস্তবে প্রত্যাশিত আলোর মুখ দেখেনি। এ ব্যাপারে প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনে শিল্প উন্নত দেশসমূহ ‘কথা দিয়ে কথা রাখেনি’। অথচ প্রতিবছর জাতিসংঘের আয়োজনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে একই বিষয়ে উন্নত দেশসমূহের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করায় শিল্প উন্নত দেশসহ অধিকাংশ দেশকে বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করতে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। এ কথায় গোটা বিশ্বে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ছে। এ কারণে জলবায়ু ন্যায্যতা প্রদান অত্যন্ত যৌক্তিক এবং আবশ্যক। জলবায়ু পরিবর্তনে দেশ এবং বিশ্ব ভাবনা থেকে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে অভিনন্দন ও স্বাগত জানাই।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তথা বৈশ্বিক উঞ্চতা বৃদ্ধিতে বিশে^র দেশে দেশে একই সঙ্গে ভয়াবহ বন্যা, বারি, তুষারপাত, পাহাড় ধ্বস ঘটছে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে জনপদ, বন-জঙ্গল, বাড়িঘর জ¦লছে। তবু বিশ্ব নেতাদের রহস্যজনক নীরবতায় পরিস্থিতিকে গভীর সংকটে ফেলছে। এমনি এক কঠিন বাস্তবতায় জলবায়ু সংকট এড়াতে বিশ্বের বৃহত্তর অর্থনীতির দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সততা অবলম্বন করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আশা করি দেশগুলো এ বিষয়ে সৎ থাকবে এবং আসন্ন জলবায়ু সংকট এড়াতে ভূমিকা রাখবে। সম্প্রতি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ চেম্বারে ‘জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রদান’ শীর্ষক জলবায়ু উচ্চাকাক্সক্ষা শীর্ষ সম্মেলনের অধিবেশনে তিনি এ কথা বলেন। ওউ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে (ইউএনজিএ) যোগ দিতে ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে যান। জাতিসংঘ মহাসচিবের দুটি উদ্যোগে সমর্থন দিতে বাংলাদেশ এই অধিবেশনে যোগ দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন ‘বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বলছে, অভিযোজন ও আগাম সতর্কতায় বিনিয়োগ করা সঠিক ও অর্থপূর্ণ। আমরা আশা করি আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রদানের জন্য এই সুযোগগুলো কাজে লাগাবে।’ জলবায়ু ন্যায্যতার একজন প্রবক্তা হিসেবে ‘বাংলাদেশ এই এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে কোনো গঠনমূলক পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন দিতে প্রস্তুত।’ ‘বাংলাদেশ ভূমিকম্প মডেলিং নিয়ে দেশব্যাপী একটি প্রদর্শনী মহড়া করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানিয়েছে। তারা আর্থ অবজারভেটরি হিসেবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু টু নিয়ে কাজ করছেন।’ ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিভুজাকার সহযোগিতার মাধ্যমে অন্যান্য দুর্বল দেশগুলোর সঙ্গে তার দক্ষতা বিনিময় করতে ইচ্ছুক বলে অভিমত তার সরকারের। তিনি বলেন, ১৯৭০ সালে ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের সময় যে লক্ষাধিক লোক মারা গিয়েছিল তার তুলনায় বাংলাদেশে প্রাণহানির সংখ্যা এক অঙ্কে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের ৬৫ হাজার উপকূলীয় মানুষের সমন্বয়ে বিশ্বের বৃহত্তম কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবক কর্মসূচি রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ একটি সমন্বিত বহু-বিপত্তি প্রাথমিক সতর্কীকরণ পদ্ধতির সর্বশেষ জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।’ একই সঙ্গে ‘আবহাওয়ার পূর্বাভাসের নিয়মিত তথ্য দেওয়ার জন্য মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।’
বাতাসে কার্বন নিঃসরন বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশও বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বৃষ্টির মৌসুমে বৃষ্টি নেই, আবার অসময়ে অতিবর্ষণ, অতি বজ্রপাত। আবহাওয়া এবং প্রকৃতির গতি-প্রকৃতি বুঝে ওঠা দায় হয়ে পড়েছে। ক্ষণে ক্ষণে বদলাচ্ছে প্রকৃতির রূপ। প্রকৃতি রীতিমতো বৈরী আচরণ করছে মানুষের সঙ্গে। এর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে শীতের মৌসুমে শীত আসছে না, আসছে হয়তো দেরীতে, নয়তো আগাম। বৈশাখে আষাঢ়ের আচরণ, শরতে বর্ষার রূপ, গরমে শীত শীতভাব, বর্ষায় বৃষ্টি কম, আবার অসময়ে অতিবৃষ্টি, বৃষ্টি হলেও প্রকৃতির রুক্ষ রূপ তথা গরমের তীব্রতা কমছে না কিছুতেই। অতি খরা, অতিগরম যেন মানুষের পিছু ছাড়ছে না। ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ এখন চিরচেনা সেই ছয় ঋতু নেই, আছে শুধু বইতে। আবহাওয়ার এ ধরন দেখে বোঝার উপায় নেই প্রকৃতিতে কখন কোন ঋতু বিরাজ করছে দেশে। মূলত প্রকৃতির এই বৈরি আচরণের কারণ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। একই সঙ্গে পরিবেশ দূষণ, প্রকৃতির প্রতি বৈরি আচরণ, কলকারখানার কালো ধোয়া, কলকারখানার নিঃর্গত শিল্প বর্জ্য, মনুষ্য বর্জ্যে পরিবেশ-প্রকৃতিকে হুমকীর মুখে ফেলছে। পরিনামে পরিবেশ প্রকৃতি মানুষের ওপর, ভূমণ্ডলের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। অন্যদিকে বাতাসে কার্বন নিঃসরন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশে^র দেশে দেশে ভূমণ্ডল ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, বাড়ছে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বন্যা, নদী ভাঙন প্রভৃতি। এসব কারণে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিও নিরসন করে এই ধরনীকে, ধরনীর বুকে আশ্রয় নেওয়া মানুষকে, প্রাণী কূলকে, জীববৈচিত্র্যকে রক্ষায় দায়িত্বহীনতা বা গাফিলতির সুযোগ নেই। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান সময় উপযোগী।
বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন তীব্রভাবে দৃশ্যমান। এখানে বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস, বৈশি^ক উঞ্চতা বৃদ্ধি, বাতাসে কার্বন নিঃসরন বৃদ্ধির কারণে হিমালয়সহ বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বরফ আচ্ছাদিত পাহাড়ার বরফ গলে সমুদ্রে পতিত হওয়ায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বাড়ছে। এ অবস্থায় অব্যাহত থাকায় আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রতল নয় থেকে ৪৮ সেন্টিমিটার এবং কার্বন নির্গমণের উচ্চহারে যে বৈশ্বিক উষ্ণতা হচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রতল ১৬ থেকে ৬৯ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি প্রবাহ বাড়বে। তখন খাদ্যাভাব দেখা দেবে, স্বাস্থ্য সমস্যা বাড়বে, বাড়বে নানা রোগের প্রকোপ। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ভূমির এক-তৃতীয়াংশ পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই কারণে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষ তাদের বসত ভিটা হারিয়ে বাস্তুচূত হবে, তাদের খাদ্যাভাব দেখা দেবে। দেখা দেবে স্বাস্থ্যগত বহুবিধ সমস্যা। নদ-নদীতে লোনা পানির পরিমাণ বাড়বে, বাড়বে শরণার্থীর সংখ্যা। ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকীতে পড়বে এবং ওইসব অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেবে। আবার পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে নানা রোগব্যাধিসহ গ্রীষ্মকালীন রোগগুলো বৃদ্ধি পাবে। এমনকি খাদ্যশস্যে তেজষ্ক্রিয়তা বেড়ে যাবে। খাদ্যাভাব দেখা দেবে। এ অবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ বিপর্যয়কে বর্তমান শতাব্দীর জন্য হুমকি হিসেবে আখ্যা দেন বিশেষজ্ঞরা।
এই ধরণীতে যে ভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে তাতে উঞ্চতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণও অসম্ভব। আর এ কারণে বাংলাদেশের ক্ষতি বেশীই। কাজেই এই ধানব ঠেকাতে বিশে^র দিকে না তাকিয়ে নিজেদের সামর্থ ও নিজস্ব কৌশল দিয়ে কাজ করতে হবে এবং সরকার করছেও তাই। গবেষকদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন ঋতুচক্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে ঝুঁকিতে পড়ছে কৃষি, বাড়ছে দুর্যোগ ও নতুন রোগের বিস্তৃতি ঘটছে। এ ছাড়া বন্যা ও লঘুচাপের পরিমাণও বেড়েছে। জলবায়ু সেবা পরিস্থিতি শীর্ষক এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়, বন্যা-সাইক্লোনসহ নানা দুর্যোগে বাংলাদেশে গত ৪০ বছরে ১০ লাখ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাইমেট সেন্টারের গবেষণায় বলা হয়, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বন্যার আঘাতের শিকার হবে বাংলাদেশের চার কোটি ২০ লাখ মানুষ। আগস্ট সেপ্টেম্বরেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন শুধু বাংলাদেশ নয় একই সঙ্গে পুরো পৃথিবীর টেকসই উন্নয়ন ও মানবজাতির অস্তিত্বের ক্ষেত্রে বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের নিচু ও উপকূলীয় এলাকা বেশি বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। বিশ্ব ব্যাংকের এক গবেষণা বলছে, আগামীতে এ ধরনের দুর্যোগ আরো শক্তি নিয়ে আসবে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার প্রয়াস দ্রুততার সঙ্গে করার বিকল্প নেই। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অন্যতম।
অতএব জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি কমাতে, বৈশ্বিক উঞ্চায়ন কমাতে, বাতাসে কার্বন নিঃসরন কমাতে আর সময়ক্ষেপণ নয়, এবার কার্যকর ও দৃশ্যমান উদ্যোগ দরকার। কারণ পৃথিবী একটাই, দ্বিতীয় কোনো পৃথিবী নেই যাকে আমরা নিরাপদ ভাবতে পারি। এটা সত্য, আমরা জলবায়ু পরির্বতনের জন্য দায়ি আর সে কারণে জলবায়ু আমাদের ওপর প্রতিশোধ হিসেবে ঝড় জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা, অতিবর্ষণ, তীব্র তাপদাহ, অগ্নি সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য একটা বাসযোগ্য, নিরাপদ সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে চাই। সে জন্য বিশ^বাসিকে নিয়ে, আমাদের এখনই ভাবতে হবে। মনুষ্য সৃষ্ট এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে নিজেদের উদ্যোগেই একদিকে ভূমণ্ডলকে অন্যদিকে মানুষ নিজেদের রক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশেরও বেশি এন্টার্কটিকায় বরফ গলে যাওয়ার হার বেড়ে গেছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। বিশ্বের বড় বড় বন্দর-শহরগুলোর প্রায় চার কোটি মানুষ ভয়াবহ সামুদ্রিক বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর থেকে রক্ষা পাবে না যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোও। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আর মাত্র ১০ মিটার বাড়লেই যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রায় ৬৮ হাজার মানুষ। তবে মূল ক্ষতিটা হবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর।
২০৮০ সাল নাগাদ সমুদ্রস্তর ৬৫ সেন্টিমিটার উঁচু হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চল ৪০ শতাংশ উৎপাদনশীল ভূমি হারাবে। ইতোমধ্যে দেশের উপকূলীয় এলাকার প্রায় দুই কোটি মানুষ লবণাক্ততার কারণে বিশুদ্ধ পানির অভাবে পড়েছেন। বন্যার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে হিমালয়ের বরফগলা পানিসহ উজানের নেপাল ও ভারতের বৃষ্টিপাতের পানি, দেশের প্রধান নদ-নদী হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। এভাবে প্রতি বছরে গড়ে প্রায় এক হাজার ৯৪ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং ১৫ লাখ হেক্টর চাষের জমি বন্যা ও জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে চাষের অযোগ্য হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন দেশের কৃষি খাতেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। মৌসুমী বৃষ্টিপাত এবং নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রার কারণে এ দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল হলো ধান। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবে দিনে দিনে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধানচাষ। অসময়ে বন্যা, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টিতে ধানচাষ ব্যাহত হচ্ছে। পাট চাষের ক্রমাবনতির জন্য বিশেষজ্ঞরা জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন। শীতকালের স্থায়িত্ব কমে যাওয়ায় রবিশষ্যের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা পাওয়া যাচ্ছে না। চলতি শতকের শেষ নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প সময়কালের চেয়ে চার দশমিক পাঁচ ডিগ্রি বাড়তে পারে। এতে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অধিকাংশ এলাকায় এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। ২০৯০ সাল নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে দক্ষিণ এশিয়ায় বেশি বেশি বন্যা ও খরা হবে। এর ফলে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাবে। এমনি অবস্থায় জলবায়ু ঝুঁকি নিরসনে জাতিসংঘে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়নে বৈশি^ক উদ্যোগের দাবি রাখে।
মোতাহার হোসেন : উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক ভোরের আকাশ এবং সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম।
আজকালের খবর/আরইউ