আমাদের কাছে দিনপঞ্জির পাতার বিভিন্ন দিন-তারিখ নানা কারণে উল্লেখযোগ্য, তাৎপর্যপূর্ণ। কোনো তারিখ আনন্দের, স্বস্তির। আবার কোনো তারিখ বেদনার এবং উদ্বেগের। ১৫ আগস্ট জাতির জীবনে একটি বেদনার দিন, কষ্টের দিন। এই তারিখটি বাঙালি জাতিকে শুধু বিষাদময় করেনি, বিশ্বসভায় কলঙ্কিতও করেছিল। কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন কয়েকজন বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে।
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নৃশংস ঘটনার নজির নেই বললেই চলে।। স্বাধীনতার দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী, রাষ্ট্রনায়ক কিংবা সরকার প্রধানকে হত্যার নজির আছে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে পরিবারের সব সদস্যকে হত্যার নজির বিশ্ব ইতিহাসে নেই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল, তারা আরও গুরুতর অপরাধ করেছিল ঘাতকদের দায়মুক্তি দিয়ে, কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে।
জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের খেলা শুরু হয়। খুনি মোশতাক নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে, ২০ আগস্ট মার্শাল ল’ জারি করা হয়। ২৫ আগস্ট জিয়াউর রহমানকে চীফ অব আর্মি স্টাফ নিযুক্ত করে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। যেহেতু বাংলাদেশ সংসদ অধিবেশনে ছিল না, সেক্ষেত্রে শেখ মুজিবের একজন ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ কর্তৃক একটি অধ্যাদেশের আকারে ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫ সালে এ আইনটি প্রণীত হয়। শেখ মুজিবের হত্যাকান্ডের পর তিনিই দেশটির রাষ্ট্রপতি হন। এটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ নং ৫০ নামে অভিহিত ছিল। পরে ১৯৭৯ সালে সংসদ কর্তৃক এটি অনুমোদন করা হয়।
রক্তের দাগ তখনও শুকায়নি। জাতির পিতাকে হত্যার ৪২ দিনের মাথায়, ২৬ সেপ্টেম্বর কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনি খোন্দকার মোশতাক। অধ্যাদেশে যে কোনো আদালতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫। আইনের শাসনের ইতিহাসে একটি কালো দিন। আইন করা হলো হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়া যাবে না।বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম কালোআইন আগে ও পরে আর কখনোই ঘটেনি। ২১ বছর পর ইনডেমনিটির মতো কালো অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার বিচার প্রমাণ করে ন্যায়বিচারের পথকে চিরতরে রুদ্ধ করা যায় না।
১৯৭৫ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর দিনটি ছিল শুক্রবার। অবৈধ ও স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ- ৫০/১৯৭৫ জারি করে। অধ্যাদেশটিতে দুটি ভাগ রয়েছে, প্রথম অংশে বলা হয়েছে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ভোরে বলবত আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রীম কোর্টসহ কোন আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোন আইনী প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।
দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেয়া হলো। অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।
৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। জেনারেল জিয়া নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ঘোষণা দেয়। সে সময় অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সায়েম। জিয়াউর রহমান ’৭৭ সালের ২২ এপ্রিল অস্ত্রের মাধ্যমে বিচারপতি সায়েমকে সরিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান। যার প্রমাণ জিয়াউর রহমান নিজেই দিয়ে গেছেন, ’৭৯ সালে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স সংযুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সুরক্ষা দিয়ে।
জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিচারে সোপর্দ না করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করে। ১২ জন ঘাতককে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেয়া হয়।
১. লে. কর্নেল শরিফুল হককে (ডালিম) চীনে প্রথম সচিব
২. লে. কর্নেল আজিজ পাশাকে আর্জেন্টিনায় প্রথম সচিব
৩. মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদকে আলজিরিয়ায় প্রথম সচিব
৪. মেজর বজলুল হুদাকে পাকিস্তানে দ্বিতীয় সচিব
৫. মেজর শাহরিয়ার রশিদকে ইন্দোনেশিয়ায় দ্বিতীয় সচিব
৬. মেজর রাশেদ চৌধুরীকে সৌদি আরবে দ্বিতীয় সচিব
৭. মেজর নূর চৌধুরীকে ইরানে দ্বিতীয় সচিব
৮. মেজর শরিফুল হোসেনকে কুয়েতে দ্বিতীয় সচিব
৯. কর্নেল কিসমত হাশেমকে আবুধাবিতে তৃতীয় সচিব
১০. লে. খায়রুজ্জামানকে মিসরে তৃতীয় সচিব
১১. লে. নাজমুল হোসেনকে কানাডায় তৃতীয় সচিব
১২. লে. আবদুল মাজেদকে সেনেগালে তৃতীয় সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
জিয়াউর রহমান কর্তৃক পুরস্কৃত ও পুনর্বাসিত হওয়ার ফলেই বঙ্গবন্ধুর খুনীরা সদম্ভে খুনের কথা স্বীকার করে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার দিয়েছে।
বিশ্বখ্যাত সাংবাদিক এন্থনি মাসকারেনহাসের কাছে সাক্ষাতকারে খুনী ফারুক ও রশিদ বলেছে, একজন ’৭৫ সালের মার্চ মাসে আরেকজন হত্যাকান্ডের দুই দিন আগে অর্থাৎ ১৩ আগস্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জিয়াউর রহমান তাদের বলেছে, তিনি সিনিয়র, এই কাজে অংশ নিতে পারবেন না কিন্তু জিয়াউর রহমান তাদের বাধা দেয়নি বলেছে। এদিকে জিয়া হত্যার পর পর জেনারেল এরশাদ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দিয়ে ফ্রিডম পার্টি গঠন করিয়ে খুনিদের প্রটেকশন দেয়, বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুককে রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করে। জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়া ’৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর সকল হত্যাকারীকে পদোন্নতি দেয়।
৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন। যেহেতু মোশতাক সরকার ছিলো সেনাসমর্থিত। জিয়াউর রহমান ছিলেন সেনাপ্রধান সেহেতু এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না!
‘দি বাংলাদেশ গেজেট, পাবলিশড বাই অথরিটি’ লেখা অধ্যাদেশটিতে খন্দকার মোশতাকের স্বাক্ষর রয়েছে। মোশতাকের স্বাক্ষরের পর আধ্যাদেশে তত্কালীন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এইচ রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রকারী হিসাবে আবিভূর্ত হন। সে সময় বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি সায়েম জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল সায়েম রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং জিয়া রাষ্ট্রপতি হন।
১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সামরিক আইনের অধীনে দেশে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়।
সংশোধনীটি পাস হয় ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল। সংসদে উত্থাপিত আইনটির নাম ছিল ‘সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯’ এবং এই সংশোধনীর মাধ্যমে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বৈধতা দেওয়ায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা দায়মুক্তি পেয়ে যায়।
মোশতাকের জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বৈধতা দেওয়া না হলে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সামরিক আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই ১৫ আগস্টের খুনিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেত। জিয়াউর রহমানই ব্যবস্থা নিতে পারতেন।
কিন্তু তিনি ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, ভবিষ্যতে কেউ যাতে ব্যবস্থা না নিতে পারে সে ব্যবস্থা করে দিলেন এবং ঐ সময়ে একটি প্রপাগন্ডা ছড়িয়ে গেল যে, যেহেতু এটি সংবিধানের অংশ হয়ে গেছে এটি আর পরিবর্তন হবে না এবং এই দোহাই দিয়েই জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরও বিচারপতি আবদুস সাত্তার, এইচ এম এরশাদ এবং ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল বা রহিত করেননি। ফলে দায়মুক্তি পেয়ে খুনিরা ১৫ আগস্টের হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা প্রকাশ্যেই বলে বেড়াত। যা জাতি হিসাবে আমাদের জন্য ছিলো অত্যন্ত লজ্জাজনক।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, রাজিব গান্ধী, পাকিস্তান পিপলস্ পার্টির প্রধান বেনজির ভুট্টো, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বন্দর নায়েককে গুলিতে হত্যার পর কোন দেশেই এমন ন্যাক্কারজনক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়নি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল সংক্রান্ত আইনগত দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আমিন উল্লাহর নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করা হয়, তাদের রিপোর্টেই প্রকাশ পায় এই কুখ্যাত আইনটি বাতিলের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই।
কমিটির এই রিপোর্ট আইন কমিশনের মতামতের জন্য পাঠানো হলে সাবেক প্রধান বিচারপতি এফকেএম মুনীরের নেতৃত্বাধীন এই কমিশনও তা সমর্থন করে। এরপর তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বিল বাতিলের জন্য 'দি ইনডেমনিটি রিপিল অ্যাক্ট-১৯৯৬' নামে একটি বিল উত্থাপন করেন। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বরের ঐতিহাসিক দিনে সংসদে পাস হয় মানবতা ও সভ্যতাবিরোধী কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বিল। ঘোচানো হয় ২১ বছরের জাতীয় কলঙ্ক। যার মাধ্যমে বাতিল হয়ে যায় কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ, খুলে যায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ।
’৯৬ সালের ১২ নভেম্বর সংসদে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স রহিতকরণকল্পে বিল আনয়ন করা হয় সেদিন বিএনপি সংসদে অনুপস্থিত ছিল। প্রশ্ন ওঠে, কেন তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপি সংসদে অনুপস্থিত ছিল?
জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শুধু সুরক্ষা বা পুরস্কৃতই করেনি, আইনের শাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জিয়ার স্ত্রী খালেদা জিয়া দায়রা জজ আদালত কর্তৃক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন হরতাল পালন করেছে।
২০০১-এর অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করে। আইনের চলমান প্রক্রিয়া বন্দী হয় রাজাকারের প্রকোষ্ঠে, শহীদের রক্তে রঞ্জিত পতাকা তুলে দেয়া হয় যুদ্ধাপরাধী নিজামী-মুজাহিদদের কাছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার উচ্চ আদালতের চলমান প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার।
অতঃপর ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে সপ্রিম কোর্ট। আপিলকারী ৫ আসামির আপিল খারিজ করে মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। আইনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি আসামিদের সাজা কার্যকর করা হয়। জাতি কলঙ্ক থেকে আংশিকভাবে মুক্ত হয়। বস্তুত আমাদের লড়াইটি এখনও রয়ে গেছে। পালিয়ে থাকা মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত অন্য খুনিদের দন্ড কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত বাঙালীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটতেই থাকবে।
‘বিলম্ব কোনো অপরাধীর বিচারে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না’—এই আইনি নীতিটি আবারও স্বীকৃতি পায়। বিচার চাইবার অধিকার সাংবিধানিক ও সার্বজনীনভাবে স্বীকৃত। এই স্বীকৃত অধিকারকে স্বৈরাচারী কোনো অধ্যাদেশ দ্বারা রুদ্ধ করা যায় না।
ঘাতকরা শুধু একজন নেতাকে নয়, জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। একটি আদর্শকে হত্যা করতে চেয়েছে। কিন্তু ঘাতকের দল জানেনা যে আদর্শকে হত্যা করা যায় না, স্বপ্নকে হত্যা করা যায় না। বঙ্গবন্ধু অমর, অব্যয়, অক্ষয়।
বাঙালীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালবাসা অগাধ, যার সন্ধান পাই বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে-‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালী হিসেবে যা কিছু বাঙালীদের সঙ্গে সম্পর্কিত, তা-ই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালবাসা, অক্ষয় ভালবাসা।’ বাঙালী জাতির প্রতি এই অক্ষয় ভালবাসাই- পাকিস্তানের মিয়াওয়ালির কারাগারে ভুট্টো-ইয়াহিয়া যে কবর খুঁড়েছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য, বাঙালীর প্রতি সেই ভালবাসার এমনই অপার শক্তি যা বঙ্গবন্ধুকে তার ইপ্সিত লক্ষ্য থেকে এক চুলও নড়াতে পারেনি। বাঙালীর মুক্তির প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে প্রস্তুত ছিলেন।
বাংলাদেশে ইতিহাসে যারা ষড়যন্ত্র করে, যারা গোপনে অস্ত্র শান দেয়, হত্যা-ক্যুয়ের মাধ্যমে যারা ক্ষমতা বদলের স্বপ্ন দেখে, যারা সোজা পথ রেখে বাঁকা পথে হাঁটতে পছন্দ করে, তাদের জন্য দুঃসময় তৈরি করেছেন শেখ হাসিনা তার সাহসী সিদ্ধান্ত এবং জনকল্যাণকর কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে। দুর্বার গতিতে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গন্ধুর সোনার বাংলা।