বিগত বছরের তুলনায় এ বছর পাটচাষে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় অতিরিক্ত খরচ হিসেবে পাট জাগ দেওয়ার পানি ও পরিবহন খরচ যোগ হয়েছে। এছাড়া সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষককে গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত টাকা। অন্যদিকে, পাটের বাজারদর অনেক কমে গেছে। এতে করে প্রতি বিঘা জমিতে কৃষককে লোকসান গুনতে হচ্ছে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।
রাজবাড়ীর সদর উপজেলার বরাট ভবদিয়া, বানিবহ ইউনিয়নের সান্দিয়ারা ও শ্রীপুর বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের তথ্য অনুযায়ী দুফসলা এক বিঘা (৩৩ শতাংশে এক বিঘা) জমিতে পাটচাষে খরচের হিসাব- জমি ইজারা পাঁচ হাজার টাকা, বীজ ১৬০, সার ও কীটনাশক ১৯৪০, জমি চাষ খরচ এক হাজার, সেচ খরচ একবার এক হাজার, আগাছা পরিষ্কার প্রথমবার ছয়জন শ্রমিক তিন হাজার, আগাছা পরিষ্কার দ্বিতীয়বার ও পাট বাছাই চারজন শ্রমিক দুই হাজার, পাট কাটা খরচ ছয়জন শ্রমিক ৪২০০, পাট জমি থেকে সরানো পরিবহন খরচ দুই হাজার, পাট জাগ দেওয়া বাবদ তিনজন শ্রমিক ২১০০, পাট ধোওয়া বা আঁশ ছাড়ানো খরচ দশজন শ্রমিক সাত হাজার টাকা। মোট খরচ ২৯ হাজার ৪০০ টাকা। প্রতি বিঘায় গড়ে পাট উৎপাদন হয়ে থাকে ১০ মণ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর জেলায় ৪৯ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। আবাদি জমি থেকে এ বছর পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার ২৬৫ বেল (সাড়ে চার মণে এক বেল)।
রাজবাড়ী শহরের পাট বাজারে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন জায়গা থেকে পাট নিয়ে হাটে এসেছে কৃষক। পাট ব্যবসায়ীর সঙ্গে দর কষাকষি চলছে। সর্বোচ্চ দরদাতার নিকট কৃষক তার পাট বিক্রি করছেন।
বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর পাট জাগ দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায়নি। ফলে অল্প পানিতে বেশি পাট জাগ দিতে হয়েছে। যার কারণে পাটের মান ভালো হয়নি।
রাজবাড়ী বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা কৃষক আরমান সরদার বলেন, ‘গত বছর এক মণ পাট বিক্রি করেছি তিন হাজার টাকায়। এ বছর পাট চাষ করায় বেশি খরচ হইছে। সার ও ওষুধের দাম বাড়ছে। পানির অভাবে পাটের রং বেশি ভালো হয় নাই। পাঁচ মণ পাট নিয়ে বাজারে এসেছি। দুই হাজার টাকা মণের বেশি কেউ দাম বলছে না। এ দামে পাট বিক্রি করলে পাট ধোয়া খরচই আমাদের উঠবে না।’ একই রকম বক্তব্য সাভার উরাকান্দার ইমরান হোসেন ও শ্রীপুরের খায়ের উদ্দিনের।
রাজবাড়ী বাজারের পাট ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ বলেন, গত বছরের পাটে আমাদের অনেক টাকা লোকসান হয়েছে। এখনো অনেক পাট অবিক্রীত রয়ে গেছে। আমরা যদি পাট বিক্রি করতে না পারি তাহলে কিনে কি করব।
রাজবাড়ী জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি আব্দুস সাত্তার মণ্ডল বলেন, এক মণ পাট উৎপাদন করতে কৃষকের ব্যয় হচ্ছে তিন হাজার টাকার বেশি। আর বাজারে এক মণ পাট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকায়। এতে কৃষক অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধ হওয়ার কারণেই বাজারে পাটের দাম কমে গেছে। এছাড়া ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট পাটের দাম কমার একটি বড় কারণ। বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করতে হলে ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয় কেন্দ্র চালু করতে হবে। দেশের কৃষি ও কৃষক বাঁচতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানানি তিনি।
রজবাড়ীর দায়িত্বে থাকা ফরিদপুর পাট অফিসের মুখ্য পাট পরিদর্শক মিজানুর রহমান বলেন, এবছর পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাটের গুণগত মান ভালো হয়নি। বিদেশে রপ্তানি করার জন্য যে গুণগত মানের পাট দরকার বিগত দুই বছর যাবৎ আমাদের দেশে তা উৎপাদিত হচ্ছে না। যার কারণে বিদিশে পাট রপ্তানি করা যাচ্ছে না। বিদেশে পাট রপ্তানি করতে না পারা ও দেশের চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণেই বাজারে পাটের দাম কমে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, পাটের দাম কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ বৈশিক মন্দা। এছাড়া চলতি বছর পাটের গুণগত মান খুব একটা ভালো হয়নি। আগামী বোরো মৌসুমে কৃষকদের সরকারিভাবে সারসহ বিভিন্ন প্রকারের বীজ বিতরণ করা হবে। এতে পাটচাষ করে যে সকল কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
আজকালের খবর/ওআর