নারীরাও এখন স্কুটি বা বাইক চালিয়ে পাড়ি দিচ্ছেন দুর্গম পথ। দেশে এখন পুরুষের পাশাপাশি অনেক নারীও স্কুটি বা বাইক নিয়ে ছুটছেন। এসব নারী বাইকারের মধ্যে অধিকাংশই কর্মজীবী। অর্থ এবং সময় সাশ্রয়ীর পাশাপাশি ভোগান্তিহীন যাতায়াতে দিন-দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নারীদের স্কুটি বা বাইক চালানো। এনজিও নারী কর্মী বাইকারদের তুলনায় সরকারি চাকরিজীবী নারী বাইকার অপ্রতুল।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শর্মিলা শারমিন একজন নারী বাইকার। কৃষককে পরামর্শ দিতে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুটি চালাচ্ছেন তিনি। স্কুটি থাকায় নিজ ব্লকে গিয়ে কৃষিসেবা কৃষকদের মধ্যে দ্রুত পৌঁছে দিচ্ছেন।
পলাশবাড়ী পৌরসভার ৮নং ব্লকে উপসহকারী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত শর্মিলা শারমিন। এ ব্লকে চারটি ওয়ার্ডে কৃষকের সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। কৃষককে সেবা দিতে পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশা-ভ্যানে যাতায়াত করতে খুবই কষ্ট হতো। অনেক দিন রাস্তায় বের হয়ে রিকশা-ভ্যানের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হতো। এক গ্রাম থেকে অপর গ্রামে যেতে সময় এবং বাড়তি ভাড়া লাগতো। তার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কৃষককে অধিক সেবা দিতে পারছিলেন না। কীভাবে কৃষককে সেবা বাড়ানো যায় এ সংক্রান্ত বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার ফাতেমা কাওসার মিশুর পরামর্শে স্কুটি কেনেন। এরপর থেকে কৃষককে অধিক সেবা দিতে পারছেন তিনি।
স্কুটি চালানো নিয়ে কোনো সমস্যা হয় কিনা এক প্রশ্নে শর্মিলা শারমিন বলেন, প্রথম দিকে একটু ভয়-সংশয় ছিল পাছে লোকে কিছু বলে তা নিয়ে। স্কুটি চালাতে গিয়ে অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। রাস্তায় অনেকে বাজে মন্তব্য করা ছাড়াও পথে চলতে কটুকথা শুনতে হয়। এসব কথা আমলে না নিয়ে নিজের কাজ করছি।
তিনি আরো জানান, স্কুটি কিনতে পরিবারের অনেকে সাপোর্ট এবং প্রেরণা যুগিয়েছেন। এখন সময়ের আগেই কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারি। ব্লকের কৃষক ফোন দিলেই তাৎক্ষণাৎ সেবা দিতে পারি। অফিস ও ব্লক পরিদর্শন এবং সন্ধ্যায় ব্লকের গ্রামে গ্রামে আলোকফাঁদ স্থাপন শেষে বাসায় ফিরি। সবমিলিয়ে স্কুটি চলার পথ এবং সেবা প্রদান অনেক সহজ করে দিয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক এক ইঞ্চি জমিও যেন পতিত না থাকে। সে লক্ষ্যে অনাবাদি পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন ছাড়াও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ভার্মি কম্পোস্ট, নিরাপদ সবজি উৎপাদন, সরিষার চাষ বৃদ্ধি, ঔষধি, ফল ও ফুল বাগান, উন্নত ধান চাষ, শতভাগ পাচিংসহ আলোকফাঁদ স্থাপনের পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানান উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শর্মিলা শারমিন।
পৌরশহরের উদয়সাগর গ্রামের কৃষক শামীম আহম্মেদ জানান, শর্মিলা শারমিন আপাকে ফোন করলেই তিনি দ্রুত চলে আসেন ও পরামর্শ দেন। তার পরামর্শে সরিষার চাষ করে তেলজাত ফসল সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় জেলায় দু’বার সেরা কৃষক নির্বাচিত হয়েছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার ফাতেমা কাওসার মিশু বলেন, শর্মিলা শারমিন অত্যন্ত পরিশ্রমী। তিনি কৃষকসেবার কাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় গাইবান্ধা জেলায় প্রথম ও রংপুর অঞ্চলে দ্বিতীয় হয়ে সম্মাননাপ্রাপ্ত হয়েছেন।
আজকালের খবর/ওআর