অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা, নৌডুবিসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় সবার আগে সবার পাশে থাকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলা ও জানমালের নিরাপত্তায় নিরলস, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে বিপদে জনতার ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সরকারের অকুণ্ঠ সমর্থন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনের দক্ষ নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অগ্রগতি। অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি গতিশীল সকল দুর্যোগে প্রথম সাড়াদানকারী এই প্রতিষ্ঠানের সেবাকাজ। স্মার্ট বাংলাদেশের অংশ হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।
অপারেশনাল কাজের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বাড়ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে কর্মরতদের নানা সুবিধা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন মহাপরিচালক হিসেবে ফায়ার সার্ভিসে যোগদানের পর থেকে উন্নয়নের এই ধারা ক্রমান্বয়ে বেগবান হয়েছে। তার সময়ে জনসেবায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রের বেসামরিক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৩’ প্রদান করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে।
দায়িত্ব গ্রহণের পরই নগরকেন্দ্রীক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করতে বিভাগের মহাপরিচালক বহুতল ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলায় সব বিভাগীয় কার্যালয়ে টার্ন টেবল লেডারের (টিটিএল) বিকেন্দ্রীকরণ করেছেন। এতে সব বিভাগীয় কার্যালয়ের সক্ষমতা বেড়েছে। তার নেতৃত্বে বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার লেডার সংবলিত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের গাড়ি যুক্ত হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের যান্ত্রিক বহরে। সুউচ্চ ভবনের আগুন নেভানো এবং উদ্ধার কাজ সহজতর করতে টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) নামের এই গাড়িটি দিয়ে ৬৮ মিটার উচ্চতা অর্থাৎ বহুতল ভবনের ২৪ তলা পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজ করা যাবে। অগ্নিনির্বাপণ কাজকে সহজ ও ফায়ারফাইটারদের জীবনহানি কমাতে কেনা হয়েছে রিমোর্ট কন্ট্রোল ফায়ারফাইটিং গাড়ি ও ড্রোন।
‘দুঃসময়ের বন্ধু’ হিসেবে সকল দুর্যোগে সবার আগে বিপদগ্রস্ত মানুষকে সেবা প্রদানের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিবেদিত রয়েছে ফায়ার সার্ভিস। পূর্বে অপারেশনাল কাজে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মৃত্যুবরণ করলেও ছিল না রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। বর্তমান মহাপরিচালকের একান্ত প্রচেষ্টায় সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নি নির্বাপণকালে আত্মাহুতি দেওয়া ১৩ জন ফায়ারফাইটারকে সরকারিভাবে 'অগ্নি বীর' খেতাবে ভূষিত করা হয়েছে। এই ১৩ অগ্নিবীরকে দেওয়া হয় মরণোত্তর ফায়ার সার্ভিস পদক। পরিবারকে দেওয়া হয় আর্থিক অনুদান। অগ্নিবীরদের স্মৃতি সংরক্ষণে সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ফায়ার স্টেশনে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের অভ্যন্তরে ‘অগ্নিসেনা উদ্যান’ নামে স্মৃতিম্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। মহাপরিচালকের এই কর্মকাণ্ডে বেড়েছে কর্মীদের সাহস, আন্তরিকতা, মানবিক তৎপরতা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ও চেতানাকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মিরপুর ট্রেনিং কমপ্লেক্সে তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু কর্নার। সংস্থার সার্বিক অগ্রগতি ও আধুনিকায়নেও দৃঢ়প্রত্যয়ী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের শহীদদের প্রকৃত ইতিহাস রচনার উদ্যোগ নেন। মুক্তিযুদ্ধে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অবদানের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য করে দেন কমিটি।
বর্তমান মহাপরিচালক যোগদানের পরপরই কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনারের দুর্ঘটনা, বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটে অগ্নিকাণ্ড ও সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণ দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যেমে মোকাবেলা করেন। তার এই দক্ষ নেতৃত্ব সংস্থার মাঠপর্যায়ের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরো দৃঢ়প্রত্যয়ী করেছে। বর্তমান মহাপরিচালকের সময়েই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফায়ারফাইটারগণ তুরস্কের ভূমিকম্পে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে দেশের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে সুনাম বয়ে এনেছেন।
অধিদপ্তরের সদর দপ্তরের গেট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, নতুন কনফারেন্স রুম, বিভিন্ন আইনের সংকলন ও পেশাগত হ্যান্ডবুক প্রকাশ, অধিদপ্তররের সকল জমি মহাপরিচালকের নামে নামজারি, অর্গানোগ্রাম পুর্নগঠনে জোড়ালো ভূমিকা, ফায়ার স্টেশনের নতুন নকশা প্রণয়ন, এক একর জমির মধ্যে স্টেশন নির্মাণ, ২২টি ফায়ার স্টেশন বি শ্রেণি থেকে এ শ্রেণিতে উন্নতিকরণ, স্টেশনের ভবন ফাউন্ডেশনসহ পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ, আধুনিক আর্কাইভ করার পরিকল্পনা বর্তমান মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ফায়ার সার্ভিসের এগিয়ে যাওয়ার কয়েকটি চিত্র।
ফায়ার সার্ভিসের অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সেবার মান উন্নত হচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে এর কর্মীদের নানা সুবিধা। ফায়ার সার্ভিসের সাফল্যের এই ধারায় সবশেষ সংযুক্ত হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আজীবন রেশন সুবিধা। ১ জুলাই ২০২৩ বা তার পরে অবসরে গমনকারী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই আজীবন রেশন সুবিধা পাবেন। রেশন হিসেবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রতিমাসে ২০ কেজি চাল (সিদ্ধ/আতপ), ২০ কেজি আটা, দুই কেজি চিনি, সাড়ে চার লিটার ভোজ্যতেল ও দুই কেজি ডাল পাবেন। কর্মকর্তা কর্মচারীদের অফিসে গমনাগমন সহজ করার জন্য ফায়ার সার্ভিসের বিদ্যমান পরিবহন ব্যবহারকারীদের বাস ব্যবহার সম্পূর্ন ফ্রি করা হয়েছে। সারাদেশের সকল স্টেশনে শীতবস্ত্র ও ওষুধ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা এবং স্টাফদের আবাসন সমস্যা দূরীকরণে দুইটি আবাসিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা ও গণপূর্তের বাসা বরাদ্দ কোটায় নাম অন্তর্ভুক্তকরণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করা হয়েছে সরকারি খরচে কর্মীদের হজে গমনের ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে সেবার সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসকে কর্মীবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হযেছে।
বর্তমান সরকারের অর্জনকে ম্লান করতে নানা অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়নেও তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের আগে যেমন নানা ধরনের গুজব রটানো হয়েছিল, ঠিক একইভাবে ফায়ার সার্ভিসের অগ্রগতি থামাতেও একশ্রেণির স্বর্থান্সেষী মহল অপতৎপরতা চালাচ্ছে। একসময়ের অবহেলিত ‘দমকল বাহিনী’ খ্যাত এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমান সরকার উন্নত ও আধুনিকভাবে গড়ে তুলে মানুষের কাছে ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সেবাধর্মী এই প্রতিষ্ঠানের এসব অগ্রগতি থামাতে চলছে নানা অপতৎপরতা ও অপপ্রচার। এসব অপপ্রচারে কান না দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সকলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আজকালের খবর/আরইউ