ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার বালুয়াপাড়া মোড় থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত প্রধান সড়কটিতে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে খানাখন্দক ও গর্তের কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী। সড়কটির সংস্কার ও মেরামতের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে স্ট্যাটাসবাজি; মিলছে না প্রতিকার।
পৌর শহরের বালুয়াপাড়া মোড় থেকে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ডাক্তার গিয়াস উদ্দিনের বাসার দু’পাশে পাঁচটি খন্দকের সৃষ্টির কারণে যানবাহন চলাচলে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। কালিপুর মধ্যম তরফের মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ থেকে গৌরীপুর থানার গেট পর্যন্ত রয়েছে ছোট-বড় ১৩৮টি খানাখন্দক। পাটবাজার মোড়ে বটগাছতলায় ভাঙনের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। গর্তের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। শহরে উত্তরবাজার মোড়ে ভাঙনরোধে দেওয়া ইটের সোলিং এখন বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। ইটের সোলিংয়ে গাড়ি উঠতে ও নামতে উল্টে পড়ছে। নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয়, জাগরণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাদেক মেমোরিয়াল কিন্ডারগার্টেন, সায়মা সাহাব একাডেমির সামনে ভাঙনে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। উত্তরবাজার গ্রামীণ ব্যাংকের সন্নিকটে ২৯টি গর্ত। এর মধ্যে তিনটি গর্তে পড়ে প্রায়ই গাড়ি উল্টে যাচ্ছে। রেলস্টেশন মোড় থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গর্ত। এসব গর্তের কারণে রোগীবাহী পরিবহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। ভাঙা রাস্তায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়ে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বলেন, জনস্বার্থে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কার-মেরামত প্রয়োজন।
গৌরৗপুর ব্যবসায়ী ঐক্য সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর আনিছ ২০ আগস্ট মধ্যরাত ১টা ৪ মিনিটে তার ফেসবুকে একাধিক ছবি সংযোজন করে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি লিখেন, ‘যে ছবিগুলো দিয়েছি সেগুলো হলো গৌরীপুর বাজারের মেইন রোডের বর্তমান অবস্থা। আমরা গৌরীপুরবাসী কতটা দুর্ভাগা তা আমাদের আশপাশের উপজেলা ও পৌরসভাগুলোর সঙ্গে তুলনা করলেই বোঝা যায়। উন্নয়নের কত বুলিই না আমরা শুনি কত ব্যানার-ফেস্টুন-বিলবোর্ডে উন্নয়নের গীতিকাব্য রচিত হচ্ছে তা অবাক হয়ে পড়ি কিন্তু গৌরীপুরের জন্য তা কতভাগ প্রযোজ্য? আমরা ট্যাক্স, ভ্যাট, খাজনা, লাইসেন্স ফি দেওয়া জনগণ, আমরা আমাদের ন্যূনতম অধিকার বা উন্নয়নটা চাই, রাস্তার সংস্কার সওজ করবে না এলজিইডি করবে না পৌরসভা করবে তা আমাদের জানার কথা না, আমাদের রাস্তা সংস্কার, মানসম্মত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, আবর্জনা নিষ্কাশনের সমাধান হলেই হলো।’ এ মন্তব্যে ২২৬ জন নেটিজেন লাইক ও ৫৮ জন মন্তব্য করেছেন। অধিকাংশ নেটিজেন সড়কটি বেহালদশা থেকে মুক্তির আবেদন ও জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এদিকে ‘দ্রুত এই রাস্তাটি প্রশস্ত করে টেকসইভাবে মেরামত করতে হবে- আওয়াজ তুলুন পাশে থাকবো গৌরীপুর পৌরসভার সচেতন একজন নাগরিক হিসাবে, আপনাদের প্রতিনিধি হিসাবে’ এ মন্তব্যজুড়ে দিয়ে গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ২২ আগস্ট ১২টা ২১ মিনিটে স্ট্যাটাস দেন। এতে লাইক দিয়েছেন ৮৩৫ জন, মন্তব্য করেছেন ১৫৯ জন এবং শেয়ার করছেন ৫৩ জন। তিনি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমরা যারা মাঠ পর্যায়ে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করি বা ২৪ ঘণ্টা গৌরীপুর থাকি তারাই বুঝতে পারি গৌরীপুরের মানুষের সুবিধা-অসুবিধা কি? কারণ তাদের কাছে আমাদের জবাবদিহিতা থাকে সবসময়। সাংবাদিক সমাজ ও সাধারণ মানুষ এ বিষয়টা নিয়ে কথা বললে আশা করি এর একটা সমাধান আসবে। অজানা কারণে এ ভোগান্তির বিষয়টা নিয়ে সবাই চুপ থাকেন! গৌরীপুর কলতাপাড়া থেকে পৌরসভার ভিতর দিয়ে বালুয়াপাড়া ভায়া পাটবাজার উত্তরবাজার ভায়া শ্যামগঞ্জ রাস্তাটি গৌরীপুরের প্রধান সড়ক বলা যায়। এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের আওতায় হওয়ার কারণে পৌরসভা চাইলেও তা মেরামত করার সুযোগ পায় না, এলজিইডি দপ্তরে পৌরসভা থেকে বারবার বলেও এর কোনো সমাধান পাওয়া যায় নাই। দ্রুত এ ভোগান্তির অবসান করুন, না হলে আমাদের এ রাস্তার দায়িত্ব দিন আমরা সকলকে নিয়ে মেরামত করে দিবো।’
এ মন্তব্যের নিচে মন্তব্য করেছেন গৌরীপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) প্রকৌশলী অসিত বরণ দেব। তিনি ২২ আগস্ট ১০টা ২৩ মিনিটে লিখেছেন, ‘রামগোপালপুর টু শ্যামগঞ্জ ভায়া গৌরীপুর বাজার সড়কটি এলজিইডির আওতাভুক্ত হলেও সড়কটির যেটুকু অংশ পৌরসভায় পড়েছে সে অংশটুকু বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে পৌরসভা মেরামত করতে পারে। সড়কটি এলজিইডির একটি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত আছে যা অনুমোদনের অপেক্ষায়, কিছু সময় লাগতে পারে। তবে পৌরসভা এলাকায় বাজারের কিছু অংশে বেশি খারাপ হওয়ায় ওভার লোডেড গাড়ি নিয়ন্ত্রণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য মাননীয় সংসদ সদস্য মহোদয়ের নেতৃত্বে পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, এলজিইডি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয় খুবই জরুরি।’
আজকালের খবর/ওআর