শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
মধ্যরাতের আগুনে চার ভাইয়ের ঘর-গরু-টাকা সব পুড়ে ছাই
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৮:১৮ PM
আগুনে পুড়ে ঘরগুলোর শেষ চিহ্নটুকুও আর নেই। যেখানটায় ঘর ছিল তার ভিটার ওপর শুধু ছাই। এক কোনায় পড়ে আছে আধাপোড়া চাল। রয়েছে গৃহস্থালির নানা কিছু। এর পাশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে দশ, বিশ, এক শ’, পাঁচ শ’ ও হাজার টাকার কয়েকটি ঝলসানো নোট। অনেক নোট পুড়ে ছাই। পাশের একটি গোয়ালঘরে চার ভাই মিলে লালন-পালন করতেন দেশি-বিদেশি জাতের গরু। সেখানের ২০টি গরু হতাহত হয়েছে। ভাত খাওয়ার জন্য একটা থালাবাটিও বাকি নেই। গোসল করে পড়ার জন্যও নেই অবশিষ্ট কোনো কাপড়।

নিজেদের পোড়া ঘরের মধ্যে নির্বাক বসে আছেন চার ভাই সালাম, শহীদ, হেলাল ও গিয়াস উদ্দিন ও তাদের পরিবার। গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে পুড়ে গেছে তাদের সংসার। বৃদ্ধ মা ছাড়া ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে থাকতেন তারা। এখন কোথায় যাবেন, কি খাবেন দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না।

আজ শুক্রবার দুপুরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের উজানচর নওপাড়া গ্রামে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। চার ভাইয়ের বসতঘর ছাড়াও একসঙ্গে লালন-পালন করা ২০টি গরুর মধ্যে ৮টি বিভিন্ন জাতের গরু। বাকিগুলোর অবস্থাও আশঙ্কাজনক। হেলাল মিয়া জানান, সরাদিন কাজকর্ম করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। হঠাৎ রাত ১২টার দিকে পোড় গন্ধ পেয়ে উঁকি দিয়ে দেখা যায় বড় ভাই গিয়াস উদ্দিনের ঘরের এক পাশে আগুন জ্বলছে। আর তা মহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে বাকি ঘরগুলোতে। তখন বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিলে লোকজন ছুটে এলে ততক্ষণে আগুনে চারটি বসতঘর পুড়ে যায়। সেইসঙ্গে পাশেই একটি গোয়াল ঘরে ছিল চার ভাইয়ের যৌথ উদ্যোগে লালন পালন করা ২০টি গরু। এরমধ্যে ৮টি গরু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বাকিগুলোর অবস্থা ভালো নয়। ক্ষতিগ্রস্ত আরেক ভাই মো. শহীদ মিয়া জানান, ধারদেনা করে পুঁজি নিয়ে গরু কিনে তা লালন-পালন করে বাজারে বিক্রি করেন। আর তা লভ্যাংশ ভাইয়েরা ভাগ করে নেন। এভাবেই চলছে গত প্রায় দশ বছর ধরে। বিদেশি জাতের গরু ছাড়া রয়েছে দেশি জাতের। একটি গরুর সর্বোচ্চ মূল্য রয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। তার মধ্যে অনেক গাভী গরু থেকে দুধ বিক্রি করা হতো। এখন সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। গত বুধবার একটি গরু বিক্রি করেন ৬০ হাজার টাকায়। সেই টাকা তার কাছেই রক্ষিত ছিল। আর কিছু লাগিয়ে আরেকটি গরু কিনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেই টাকাগুলোও পুড়ে গেছে। জানা যায়, চার ভাইয়ের পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৩০ জন। আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে।

ক্ষতিগ্রস্ত সালামের স্ত্রী ফরিদা বেগম জানান, গত ২০ বছর ধরে তিল তিল করে জমানো তার সব সঞ্চয় আর গৃহস্থালী পণ্য এক রাতের আগুনে মাত্র আধাঘণ্টায় পুড়ে গেছে। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘চোখের সামনে সবশেষ অইতাছে কিন্তুক কিচ্ছু করতাম পারছি না। খালি নিজের জান ও পোলাপাইনডি লইয়া বাইর অইছি।

জানা যায়, বৈদ্যুতিক মিটার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম সেখানে গেলেও ততক্ষণে সব কিছুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। রক্ষা করা যায়নি কিছুই। খবর পেয়ে গতকাল শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম ও ঈশ্বরগঞ্জ থানা পুলিশ।

এ সময় উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের পক্ষ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও বিনামূল্যে মেডিসিন সরবরাহ করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল আলম। 

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজা জেসমিন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য ঢেউ টিন ও অন্যান্য উপকরণসামগ্রী দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ ফখরুল ইমাম। 

আজকালের খবর/ওআর