রবিবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
চেতনায় এক পৃথিবী এক পরিবার বাস্তবায়নের প্রত্যাশা
মোতাহার হোসেন
প্রকাশ: রবিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ৮:০১ PM
ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বহুল প্রত্যাশিত জি-২০ সম্মেলন।  এই সম্মেলনকে  ঘিরে জি-২০ সদস্যভুক্ত দেশসমূহ ছাড়াও বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশে^র দেশসমূহের আগ্রহও লক্ষ্যণীয়। জি-২০ সদস্য রাষ্ট্রসমূহ নিজেদের বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অঙ্গীকার পোষণ করে। একই সঙ্গে বিশ^ব্যাপী চলমান সন্ত্রাস, জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় সম্মেলনে।  গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘চেতনায় এক পৃথিবী এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’। মূলত দীর্ঘ দিন ধরেই বিশ্ব নেতাদের অনেকেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামের বৈঠকে ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, ভিসা মুক্ত’ বিশ্ব গড়ার শ্লোগান দিয়ে আসছিলো। এবার বিষয়টি সম্মেলনের প্রতিপাদ্য করে সামনে নিয়ে আসা হলো। আর এ কারণে পুরো বিশে^র দৃষ্টি ও আগ্রহের কেন্দ্র এই সম্মেলন। গত ৮ সেপ্টেম্বর পুরো বিশ^ই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ প্রত্যক্ষ করলো। ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ স্লোগানে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় দুই দিনের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন। দিল্লির ঐতিহাসিক প্রগতি ময়দানের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার ‘ভারত মণ্ডপম’-এ এবারের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন জি-২-এর সদস্যসহ বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশের শীর্ষ নেতা। আমাদের সৌভাগ্য সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তার বক্তব্যও বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি কেড়েছে।  অন্যদিকে কনভেনশন সেন্টারের সামনেই স্থাপন করা হয়েছে বিশাল এক নটরাজ মূর্তি। জি-২০ সম্মেলনে বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের স্বাগত জানাতে ২৮ ফুট লম্বা এ নটরাজ মূর্তি তৈরি করা হয়েছে।

জি-২০ এবারের সম্মেলন এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে,  করোনা মহামারির ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর পরই যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট প্রবল হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ, বিভিন্ন মহামারিসহ ডিজিটাল ডিভাইসের কারণে সৃষ্ট বৈষম্যের পরিস্থিতিতে বিশ্বনেতারা কি বলেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে আছেন সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। সম্মেলনকে ঘিরে সদস্যভুক্তদেশ ছাড়াও তৃতীয় বিশে^র দেশসমূহও আগ্রহ সহকারে অনেক আশায় বুক বেঁধেছে। কারণ জি-২০ দেশসমূহ তাদের নিজ নিজ দেশের অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্ধেষের উর্ধে ওঠে অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব গড়ার অঙ্গীকার এবং অর্থনৈতিক, বহুপাক্ষিক বাণিজ্যিক ব্যবস্থা, সামাজিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি কল্পে সংকল্প ব্যক্ত হয়।

সম্মেলনে অংশ নিতে শুক্রবার নয়াদিল্লিতে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্য নেতারা। সম্মেলন চলাকালে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সম্মেলনের প্রাক্কালে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, অনৈক্য উপেক্ষা করে একতা বজায় থাকবে এমন একটি পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে ভারত বিভেদ, বাধা দূর করে সহযোগিতার বীজ বপনে বদ্ধপরিকর।  তিনি  লিখেছেন, এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে ভারত শেষ সীমানা পর্যন্ত পৌঁছাবে আর বিশ্বের কেউই পেছনে পড়ে থাকবে না। এতে ভৌগোলিক সীমানা, ভাষা এবং মতাদর্শকে ছাড়িয়ে ভারত এবার জি-২০ সম্মেলনের মাধ্যমে মানবকেন্দ্রিক অগ্রগতির আহ্বান জানাবে বলে মোদি উল্লেখ করেন।

অনেকে মনে করছেন, এই মূর্তিটিই বিশ্বের দীর্ঘতম ও গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাই তৈরী করা হয় দীর্ঘতম নটরাজ মূর্তি। এ ছাড়া অভ্যাগতদের স্বাগত জানায় এআই নির্মিত অবতারও। ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ নামের এক প্রদর্শনী চলবে ভারত মণ্ডপমে। সেখানে ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হয়। একেবারে আদিম যুগ থেকে আধুনিক যুগ, সবটাই তুলে ধরা হয় ওই প্রদর্শনীতে। ১৬টি ভাষা ব্যবহৃত হয় প্রদর্শনীর অডিওতে। এর মধ্যে ইংরেজি ছাড়াও ছিল ফরাসি, ইটালিয়ান, কোরিয়ান ও জাপানি প্রভৃতি। সম্মেলন উপলক্ষ্যে কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল রাজধানীকে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনী দিল্লিতে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল।

জি-২০ এর সদস্যসহ বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশের শীর্ষ নেতা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি দেশ এবং ১৪টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানসহ বিশে^র প্রায়  ১৪০ দেশ জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়। জি-২০-এর সদস্য দেশের মধ্যে রয়েছে-আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, কোরিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ভারতীয় বংশুদ্ভুত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা, জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ এবং ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির মতো পরিচিত রাষ্ট্রনেতারা সম্মেলনে যোগ দেন। অংশ নেন আরো বেশ কয়েক জন প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী। সম্মেলনে ভারত হয়ে ইউরোপে নতুন অর্থনৈতিক করিডোর গড়ার অঙ্গীকার করেন আয়োজক  দেশ ভারত।

এই প্রথমবারের মতো ভারত এত শক্তিশালী রাষ্ট্রনেতাদের আতিথেয়তার সুযোগ পেয়েছে। ভারতের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানের থিম রাখা হয়েছিল ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’। অর্থাৎ, গোটা বিশ্বই হলো একটি পরিবার। এবারের জি-২০ সম্মেলনে বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরো বেশি ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট সিস্টেমের উন্নতি এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির নিয়মগুলো নিয়েও আলোচনার হয়েছে। এ ছাড়া খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার ওপর ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে সাইড লাইনে।
পর্যবেক্ষক দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রথমেই ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জি-২০-এর সদস্য না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছে। নাইজিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবুও যোগ দেন ‘আমন্ত্রিত’ হিসেবে। এই তালিকায় আরো রয়েছে নেদারল্যান্ডসের মার্ক রট, মিসরের আবদেল ফাতা, মরিশাসের প্রবীন্দ জগন্নাথ, ওমানের হাইতাম বিন তারিক, সিঙ্গাপুরের লি সেইন লং, কমোরোসের অসুমনি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মহম্মদ বিন জায়েদের মতো রাষ্ট্রনেতারাও।

জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষ্যে বিশেষ লোগো প্রকাশ করে ভারত।  লোগোতে সাত পাপড়ির এক পদ্মফুলের ছবি রয়েছে। পদ্ম ভারতের জাতীয় ফুল, ভারতের আধ্যাত্মিক ধারণাতেও এই ফুলটি পবিত্র বলে স্বীকৃত। জি-২০ সভাপতিত্বের লোগোতে পদ্মের চিহ্নকে তাই ভারতের সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিকতা, সম্পদের প্রতীক বলেই জানিয়েছে ভারত। লোগো উন্মোচনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, পদ্মের সাতটি পাপড়ি পৃথিবীর সাতটি মহাদেশ এবং সংগীতের সাতটি সুরের প্রতিনিধিত্ব করছে। একইসঙ্গে লোগোতে রয়েছে গেরুয়া, সাদা, সবুজ ও নীল রংয়ের সংমিশ্রণ। জি-২০ সম্মেলন গোটা বিশ্বকে একত্রিত করবে।

অতিথি আপ্যায়নেও ভারত কমতি রাখেনি। সোনা-রুপার বাসনে অতিথিদের ভোজের টেবিল সাজানো হয়। মধ্যাহ্ন ভোজ ও নৈশ ভোজে সেই বিশেষ বাসনেই খাবার পরিবেশন করা হয় রাষ্ট্রনেতাদের। আর সেই বাসনে খোদাই করা থাকে ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নানা নিদর্শন। প্রসঙ্গত ১৯৯৯ সালে এশিয়ার আর্থিক সংকটের পরে বিশ্বের ২০টি প্রধান দেশ একটি অর্থনৈতিক গোষ্ঠী গঠন করে, যা জি-২০ নামে পরিচিত। এই জোট বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মোট জিডিপির ৮০ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ পরিচালনা করে। এখন পর্যন্ত ১৭টি জি-২০ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এবারের ১৮তম জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো নয়াদিল্লিতে। শীর্ষ সম্মেলনের আগে ভারতের ৬০টি শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে জি-২০র ২২০টি বৈঠক।

এমন এক সময়ে জি-২০ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট প্রবল হয়ে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ, বিভিন্ন মহামারিসহ ডিজিটাল ডিভাইসের কারণে সৃষ্ট বৈষম্যের পরিস্থিতিতে বিশ্বনেতারা কী বলেন সেদিকেই এখন তাকিয়ে আছেন সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এ সম্মেলন উপলক্ষ্যে নয়াদিল্লিকে কড়া নিরাপত্তা চাদরে পুরোপুরি মুড়ে ফেলা হয়েছে। সারা বিশ্বের শীর্ষ রাষ্ট্রনেতারা এই সম্মেলনে যোগ দিতে এখন ভারতে রয়েছেন। তাই তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারত কোনো কমতি রাখেনি।

সম্মেলন শুরুর প্রাক্কালে নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, অনৈক্য উপেক্ষা করে একতা বজায় থাকবে এমন একটি পৃথিবীর লক্ষ্যে ভারত বিভেদ, বাধা দূর করে সহযোগিতার বীজ বপনে বদ্ধপরিকর। দেশের শীর্ষ দৈনিকে প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে মোদি লিখেছেন, এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে ভারত শেষ সীমানা পর্যন্ত পৌঁছাবে আর বিশ্বের কেউই পেছনে পড়ে থাকবে না। এতে ভৌগোলিক সীমানা, ভাষা এবং মতাদর্শকে ছাড়িয়ে ভারত এবার জি-২০ সম্মেলনের মাধ্যমে মানবকেন্দ্রিক অগ্রগতির আহ্বান জানাবে বলে মোদি উল্লেখ করেন।

দিল্লির প্রগতি ময়দানের ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার ‘ভারত মণ্ডপম’-এ আয়োজন করা হয়েছে এই শীর্ষ সম্মেলনের। কনভেনশন সেন্টারের সামনেই স্থাপন করা হয়েছে বিশাল এক নটরাজ মূর্তি। জি-২০ সম্মেলনে বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের স্বাগত জানাতে ২৮ ফুট লম্বা এ নটরাজ মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া অভ্যাগতদের স্বাগত জানাবে এআই নির্মিত অবতারও। ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ নামের এক প্রদর্শনী চলে ভারত মণ্ডপমে। সেখানে ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হবে। একেবারে বৈদিক আমল থেকে আধুনিক যুগ, সবটাই তুলে ধরা হয় ওই প্রদর্শনীতে। জি-২০ এর সদস্যসহ বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশের শীর্ষ নেতা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কর্মকর্তা, আমন্ত্রিত অতিথি দেশ এবং ১৪টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেন। জি-২০ এর সদস্য দেশের মধ্যে রয়েছে-আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, কোরিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

১৯৯৯ সালে এশিয়ার আর্থিক সংকটে পরে বিশ্বের ২০টি প্রধান দেশ একটি অর্থনৈতিক গোষ্ঠী গঠন করে, যা জি-২০ নামে পরিচিত। এই জোট বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মোট জিডিপির ৮০ শতাংশ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশ পরিচালনা করে। এখন পর্যন্ত ১৭টি জি-২০ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এবারের ১৮তম জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় নয়াদিল্লিতে। শীর্ষ সম্মেলনের আগে ভারতের ৬০টি শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছে জি-২০র ২২০টি বৈঠক। এসব বৈঠকে প্রায় ৩০ হাজার প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন।

সম্মেলনে প্রদত্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি বক্তব্য সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। তিনি তার বক্তব্যে  ভারতকে ‘গ্লোবাল সাউথের নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এর আগে তার দেশ ‘গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর’ হয়ে উঠেছে বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত আগস্টে ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকায় জানিয়েছিলেন তার লক্ষ্য ‘গ্লোবাল সাউথের এজেন্ডাকে অগ্রসর করা’। একই সঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা গ্লোবাল সাউথের গুরুত্ব প্রতিফলনে জোর দিতে অতিথি দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদি। অর্থাৎ জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিশ্বব্যাংক এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন- সকলের মুখে মুখেই এখন মোদির গ্লোবাল সাউথ। মূলত  ভৌগলিক শব্দ নয় গ্লোবাল সাউথ। এতে অন্তর্ভুক্ত আছে ভারত, চীনসহ উত্তর আফ্রিকার প্রায় অর্ধেক দেশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করার ও বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সমন্বিতভাবে প্রচেষ্টা গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন। শনিবার শীর্ষ সম্মেলনে তার চার দফা সুপারিশে এই আহ্বান জানান তিনি। সম্মেলনে তিনি ‘ওয়ান আর্থ’ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় তার সুপারিশের প্রথম পয়েন্টে বলেছেন, ‘এখানে জি-২০ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ও বাংলাদেশ সংকট মোকাবিলায় কার্যকর সুপারিশ তৈরি করতে তাদের প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’ দ্বিতীয় পয়েন্টে  তিনি বলেন, মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে এবং সারাবিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বব্যাপী সাহসী, দৃঢ় এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোকে তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করা উচিত। তৃতীয়ত, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের সদস্য হিসেবে জলবায়ুজনিত অভিবাসন মোকাবিলায় অতিরিক্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষতি এবং ক্ষয়ক্ষতি তহবিল চালু করার অনুরোধ জানান। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সব মানুষেরই উপযুক্ত জীবন-যাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সম্প্রদায় ভুলবেন না এবং তাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রত্যাশা জি-২০ সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নেও সকল সদস্যভুক্ত দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন তাহলে স্বার্থক হবে এ সম্মেলন।

মোতাহার হোসেন : সাংবাদিক ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম।
আজকালের খবর/আরইউ








সর্বশেষ সংবাদ
সরকারের উন্নয়ন-অর্জন প্রতিটি ঘরে গিয়ে প্রচার করতে হবে
আওয়ামী লীগ ভিসা নীতি-নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করে না: ওবায়দুল কাদের
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিতে গণমাধ্যমও যুক্ত হবে: পিটার হাস
ফুলগাজীতে ইয়াবাসহ দুই কারবারি গ্রেপ্তার
কাউখালীতে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস নিলেন ইউএনও
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
ফেনী ইউনিভার্সিটির প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত
বিএনপির আল্টিমেটাম: খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে হবে
গাজীপুর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত কমিটির শপথ
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে
চবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণা
Follow Us
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি : গোলাম মোস্তফা || সম্পাদক : ফারুক আহমেদ তালুকদার
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : হাউস নং ৩৯ (৫ম তলা), রোড নং ১৭/এ, ব্লক: ই, বনানী, ঢাকা-১২১৩।
ফোন: +৮৮-০২-৪৮৮১১৮৩১-৪, বিজ্ঞাপন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৯, সার্কুলেশন : ০১৭০৯৯৯৭৪৯৮, ই-মেইল : বার্তা বিভাগ- newsajkalerkhobor@gmail.com বিজ্ঞাপন- addajkalerkhobor@gmail.com
কপিরাইট © আজকালের খবর সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত | Developed By: i2soft