![](../2023/09/09/VP_1694270017.jpg)
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের থানা রোড পৌরসভার একটি ব্যস্ততম সড়ক। বর্তমানে এই সড়কটি বেহালদশায় পরিণত হয়েছে। এ সড়কটিতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। এই অবস্থা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার নিমতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে বাজার অভিমুখে সড়কটির মাত্র ৪৫০ মিটার পাকা সড়ক মেরামতের জন্য ব্যয় হয়েছে বরাদ্দ ৭৬ লাখ টাকা। এই বিপুল অর্থ ব্যয় করে শুধু সংস্কার করা সড়কটি দুই বছরেই ভেঙেচুরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কের কমপক্ষে ১০টি স্থান ভেঙেচুরে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কালীগঞ্জ বাজার থেকে মেইন বাসস্ট্যান্ড অভিমুখে সড়কের পুরাতন সেতুটি মেরামতের কাজ চলছে। যে কারণে ওই সড়ক বন্ধ রয়েছে। ফলে মূল বাজার থেকে নিমতলা বাসস্ট্যান্ডটি বর্তমানে যানচলাচলে একমাত্র সড়ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সেই সড়কটির এই অবস্থায় সাধারণের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, কালীগঞ্জ পৌরসভার মূল বাজারের প্রবেশে চারটি প্রধান সড়ক রয়েছে। আর এই মূল বাজার এলাকায় বেশিরভাগ সড়ক সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে। মূল বাজার থেকে একটি সড়ক দক্ষিণে বেরিয়ে গেছে মেইন বাসস্ট্যান্ডের দিকে, যেটি সড়ক বিভাগের। আরেকটি সড়ক পূর্বে বেরিয়ে মাগুরার আড়পাড়া অভিমুখে চলে গেছে। উত্তরে মুরগীহাটা হয়ে কলেজ রোডে মিশেছে। এগুলো সবই সড়ক বিভাগের এবং তারা গত তিন বছর আগে এগুলো সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করে তুলেছে। এখনো সড়কগুলো ব্যবহার উপযোগী ও দৃষ্টিনন্দন হয়ে রয়েছে। শহরের নিমতলা থেকে থানার সামনে দিয়ে মুরগীহাটা মোট পর্যন্ত সড়কটি পৌরসভার। এটি মাত্র সাড়ে ৪০০ মিটার। যে সড়ক গত দুই বছর আগে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সংস্কার করে কিন্তু এরই মধ্যে ভেঙেচুরে আবার ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়কটি মেরামতের জন্য ৭৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। ১৫ দিনের মধ্যে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল, কাজটি পেয়েছিল ঝিনাইদহের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শহর এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু কাজটি করেন ঝিনাইদহের ঠিকাদার আতিয়ার রহমান। ২০১৯ সালে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও করোনার কারণে কাজ করা সম্ভব হয়নি। পরে ২০২০ সালের শেষ সময়ে কাজটি শেষ করা হয়েছে। সড়কের দুই পাশে কিছুটা বৃদ্ধি করে এক ইঞ্চি পাথর দিয়ে কার্পেটিং করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা।
কালীগঞ্জ শহরের বাসিন্দা ফেরদৌস জানান, সড়কের কাজটি ভালোভাবেই শেষ হয়। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার কয়েকদিন পরই সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ-পাথর উঠতে শুরু করে। গত দুই বছরে এখন বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, এই সড়কের পশ্চিম মাথায় সড়ক বিভাগ কাজ করেছে, তাদের রাস্তা আর এই রাস্তা দেখলে বোঝা যায় এই কাজে কতটুকু অনিয়ম করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন সড়কটির উপরের অংশ খুঁড়ে ফেলে পুনরায় এক ইঞ্চি কার্পেটিং করার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদার সেভাবে করেনি, নামমাত্র কার্পেটিং করে চলে গেছে। যে কারণে অল্পদিনেই পাথর ও পিচ উঠে যেতে শুরু করে। এখন যা বৃহৎ আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেন, এভাবে সড়ক সংস্কার করে জনগণের টাকা অপচয় করা হচ্ছে। ওই সড়কে চলাচলকারী ইজিবাইক চালক আরিফ জানান, শহরের মাঝ দিয়ে যাওয়া প্রধান সড়কটির ওপর সেতু সংস্কারের কাজ চলছে। এতে ওই সড়কটি বন্ধ রয়েছে। এই নিমতলা অভিমুখের সড়ক দিয়েই তাদের চলতে হচ্ছে। কিন্তু সড়কের অবস্থা এতোটা খারাপ হওয়ায় চলাচল করা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত সড়কে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। মাঝেমধ্যে পথচারীরা যানবাহনকে পাশ কাটাতে গিয়ে গর্তে পড়ছে।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্বে থাকা মো. মনিরুজ্জামান জানান, কাজটি করেছেন ঠিকাদার আতিয়ার রহমান ঠিকাদারের সাথে কথা হয়েছে বর্ষা শেষ হলে রাস্তা মেরামত করে দেবে। ঠিকাদারের বিল এখনো পরিশোধ হয়নি। রাস্তা পুনরায় সংস্কার করে দিলে বিল পরিশোধ করা হবে।
ঠিকাদার আতিয়ার রহমান জানান, কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের সাথে কথা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তার কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টি থামলেই রাস্তার কাজে হাত দেওয়া হবে।
কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ জানান, বৃষ্টির কারণে রাস্তাটির কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বৃষ্টির মধ্যে রাস্তার কাজ করলে পিচ উঠে যাবে। পুরাতন ব্রিজ ভেঙে ফেলার কারণে ওই রাস্তার ওপর বেশি চাপ বেড়ে গেছে। যে কারণে রাস্তাটি দ্রুত নষ্ট হয়ে গেছে।
আজকালের খবর/ওআর