
রাজধানীর মিরপুর বিআরটিএতে চাকরি করে টাকার পাহাড় বানিয়েছেন হিসাবরক্ষক খান মোহাম্মদ রুহুল আমিন। অভিযোগ উঠেছে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বিআরটিএতে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীত চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি আবার দালালের কাজও করেন। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি বিভিন্ন ধরনের গাড়ির তদবিরের কাজ করে থাকেন। প্রতি কাজের বিনিময়ে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এই সব কাজ স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে পেয়ে থাকেন রুহুল আমিন।
জানা যায়, বিআরটিএ’র সাবেক আনসার সদস্য আকবর ও মো. বাবুল বর্তমানে রুহুল আমিনের দালাল হিসেবে কাজ করেন। এ ব্যাপারে আলাপকালে আকবর ও মো. বাবুল এ প্রতিবেদককে বলেন, রুহুল আমিনতো টাকার ‘খনি’তে চাকরি করেন। টাকার বিনিময়ে চাকরির পাশাপাশি তদবিরে কাজ করে থাকেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, রুহুল আমিনের এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পুরো বিআরটিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি দালালরাও অবগত। তাদের কাছে টাকার ‘খনি’ রুহুল আমিন নামে বেশি পরিচিত।
এদিকে পুরান ঢাকার লালবাগের বড়কাটরার বাসিন্দা আব্দুস সালাম গত ২০ আগস্ট খান মোহাম্মদ রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর একটি অভিযোগ করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, হিসাবরক্ষক রুহুল আমিন মিরপুর বিআরটিএতে ১৩ বছর ধরে চাকরি করছেন। এরমধ্যে তাকে বিভিন্ন অপকর্মের কারণে কর্তৃপক্ষ বদলি করলেও অর্থের বিনিময়ে ঘুরে ফিরে তিনি আবার এখানেই থেকে যান। আর এতে করে বুঝা যায় রুহুল আমিন টাকার ‘খনিটি’ ছাড়তে পারছেন না।
বর্তমানে তিনি লালবাগের আজিমপুর মেটারনিটি হাসপাতাল রোডের ৩ নম্বর রোডে ১৯ নম্বর বাড়ির কোটি টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন। তিনি শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার রায়পুর মুন্সিকান্দি গ্রামের বাড়িতে ১৫ কাঠা জমির উপর দোতলা একটি আলিশান বাড়ি বানিয়েছেন। ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, আট থেকে ১০ বছর আগে বাড়িটি বানিয়েছেন রুহুল আমিন। এ ছাড়া এলাকায় নামে বে-নামে গড়েছেন অনেক সম্পত্তি। তার স্ত্রীরও রয়েছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পত্তি। এলাকাবাসি ও তার স্বজনরা জানান, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে রুহুল আমিন বিআরটিএতে চাকরি পেয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন। এর আগে নিজেই চলতে পারতেন না। এলাকাতে তিনি দানবীর হিসেবে পরিচিত। গ্রামের বাড়িতে গেলে তিনি এলাকার লোকজনের পিছনে টাকা খরচ করেন দুহাতে। জানা যায়, রুহুল আমিন ৩৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। আর তার এলাকা ও পরিবারের পিছনে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা খরচ হয়। আর এই টাকার উৎস কোথায় অনেকের মনে এমন প্রশ্ন।
দুদকের অভিযোগে থেকে জানা যায়, ঢাকায় তার ও তার স্ত্রী নামে কয়েকটি বাড়ি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। মাদারীপুর শিবচর এলাকায় স্ত্রী নামে ২০ কাটা জমি কিনেছেন। এই সব মিলে প্রায় শতকোটি টাকার মালিক হিসাব রক্ষক রুহুল আমিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএর’র এক দালাল বলেন, রুহুল আমিন অফিস টাইম শেষ হয়ে গেলেও রাতে কাজ করেন। সেই কাজগুলো হচ্ছে আমাদের। তার রুমের ভেতরে আসা-যাওয়া করে বেশিরভাগ দালালরা। তিনি তদবিরের মাধ্যমে মালিকানার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গাড়ির যাচাই-বাছাই পরিদর্শককে মেনেজ করেন, মালিকের সঠিক তথ্য যাচাই-বাছাই না করে কাগজপত্র ঠিক করে দেন। বিআরটিএর নিয়ম না মেনেই তিনি অর্থের বিনিময় এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, এই সরকারি কর্মকর্তা নিয়মের ধার ধারেন না। তার রুমে ঢুকতেই প্রথম কথা বলতে হয় তারই পরিচয়ের এক দালাল প্রতারকের সঙ্গে। তার অফিসের রুমে সারাক্ষণ দালালদের আনাগোনা রয়েছে। এই সব দালালরা সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে কাগজপত্র ঠিক করে দেওয়ার কথা বলে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে হিসাবরক্ষক রুহুল আমিন।
এ ব্যাপারে রুহুল আমিন এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়। আমার টাকা আছে, তবে এতো টাকা নাই।
আজকালের খবর/আরইউ